করোনার দ্বিতীয় ঢেউ বাংলাদেশে আঘাত হানতে পারে এমন আশঙ্কার সত্যতা পাওয়া যাচ্ছে, মৃত্যু ও সংক্রমণ বৃদ্ধির খবরে। চট্টগ্রামসহ দেশের হাসপাতালগুলিতে করোনায় আক্রান্ত রোগী বাড়ছে। ৭৯ দিনের মধ্যে গত বুধবার সর্বোচ্চ কোভিড-১৯ (করোনা ভাইরাস) রোগী শনাক্ত হয়েছে। মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। মাস্ক না পরা, স্বাস্থ্যবিধি মানায় অনীহা এবং শীত মৌসুমের আবহাওয়া করোনা ভাইরাস সংক্রমণের অনুকূল হওয়ায় সংক্রমণ বাড়ছে বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের। চট্টগ্রামের সিভির সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি শনাক্তের সংখ্যা ঊর্ধ্বমুখি মন্তব্য করে বলেন, গত মাসে দিনে শনাক্তের সংখ্যা শ’ য়ের কাছাকাছি ছিল, এখন দেড়শোর ওপরে গিয়েছে।
স্বাস্থ্যবিধি না মানলে করোনা পরিস্থিতি যে কোনো সময়ে ভয়াবহ হতে পারে এমনই আশঙ্কা বিশিষ্টজনদের। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ অর্থনীতির জন্যও বিপদ ডেকে আনতে পারে। আমাদের দেশে করোনার মধ্যেও প্রথম ২/৩ মাসের পর অর্থনীতি, জীবনযাত্রা অনেকটা স্বাভাবিক পর্যায়ে এসেছে। এখন এই গতি ধরে রাখতে হলে কলে কারখানায়, দোকানপাট, অফিস-আদালত, পরিবহন, হোটেল রেস্তোরাঁয় স্বাস্থ্যবিধির কঠোর অনুসরণ ছাড়া গত্যন্তর নেই। বিশেষ করে মাস্কপরা, জনসমাগম, ছোঁয়াছুঁয়ি এড়িয়ে চলা, বারবার হাত ধোয়া এবং স্বাস্থ্যসম্মত জীবনাচরণে সকলকে অভ্যস্ত হতে হবে।
করোনার মধ্যেও আমাদের রপ্তানি, প্রবাসী আয় বেড়েছে কিন্তু সকলে যদি স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে যতœবান না হই, তবে বিপদ ধেয়ে আসতে দেরি করবে না। ইউরোপে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে ক্রেতারা পোশাক ক্রয়ে রক্ষণশীল হবে এমন আভাস মিলছে, তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র জরিপে দেখা গেছে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাবে ক্রয়াদেশ অন্তত ৩০ শতাংশ কমেছে।
মাস্কপরা বাধ্যতামূলক করা এবং স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে প্রশাসন নানাভাবে অভিযান শুরু করেছে, দ-ের পাশাপাশি প্রণোদনামূলক কর্মসূচিও পালন করছে তারা। আমরা আশা করি এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। বাজার, পরিবহন, সমাবেশ, হোটেল-রেস্তোরাঁয় অভিযান চালাতে হবে যাতে সকলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে। এখন জনসমাগমের কর্মসূচি না থাকাই ভালো, অপরিহার্যতার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সতর্কতা থাকতে হবে। শুধুমাত্র প্রশাসনের ওপর নির্ভর করে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানো যাবে না। শহরে কিংবা গ্রামে, পাড়া-মহল্লায় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দল ছাত্র-যুব ও মুরুব্বিদের নিয়ে কমিটি গঠন এবং সকল প্রকার কাজের সহযোগী হতে স্বেচ্ছাসেবক টিম গড়ে তোলা প্রয়োজন।
জেলা শহর ও উপজেলায় করোনার চিকিৎসাসেবা দিতে সরকারি বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে সকল প্রকার প্রস্তুতি থাকা চাই। শিশু ও বয়স্করা শীতের সময় নানাবিধ রোগে ভোগে তাদের প্রতি বিশেষ যতœ নিতে হবে। তাদের অন্যান্য রোগের চিকিৎসাও যথাযথ হওয়া চাই। এ সময়ে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের দায়িত্ব অত্যধিক তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা দেওয়া প্রয়োজন। জীবন ও জীবিকা এক সঙ্গে চালানো ছাড়া আমাদের বিকল্প নেই। সরকার, প্রশাসন এবং জনসাধারণ সকলকে তাই এই দুর্যোগ কাটাতে সচেতন হতে হবে।
মতামত সম্পাদকীয়