করোনার বছরে অর্থাৎ ২০২০ সালে আমাদের রপ্তানির প্রধান আইটেম তৈরি পোশাক রপ্তানি কমে গেছে প্রায় ১৭ শতাংশ। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত এতদসংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমাদের প্রধান ক্রেতা ইউরোপের অনেক দেশেই লকডাউনের কারণে ব্যবসায় মন্দা দেখা দেয়। তার ফলে ক্রেতারা বিপুল পরিমাণ ক্রয়াদেশ বাতিল/স্থগিত করে।
ইউরোপ-আমেরিকার অনেক প্রতিষ্ঠান দীর্ঘসময় ধরে বিক্রয় কেন্দ্র বন্ধ রাখায় আমাদের পোশাকশিল্প বিপর্যয়কর অবস্থায় পড়ে। আমাদের দেশেও বিগত বছরের মার্চ থেকে মে-জুন পর্যন্ত করোনার কারণে সর্বাত্মক লকডাউন থাকায় কলকারখানায় উৎপাদনও বন্ধ হয়ে যায়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ও বিজিএমইএর পরিসংখ্যানের উদ্ধৃতি দিয়ে একটি জাতীয় দৈনিক জানায়, সদ্যসমাপ্ত বছরে বাংলাদেশ বিশ্ববাজারে রপ্তানি করেছে ২ হাজার ৭৩১ কোটি ডলারের পোশাক আর ২০১৯ সালে রপ্তানি হয় ৩ হাজার ২৯৩ কোটি ডলারের পণ্য। এই হিসেবে রপ্তানি কমেছে প্রায় ১৭ শতাংশ।
সরকারের প্রণোদনা এবং জুন মাস থেকে শিল্পপ্রতিষ্ঠান খোলার পর আমাদের পোশাক শিল্পে কর্মচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। যদিও কিছু ক্ষেত্রে শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছে, কর্মসংস্থানও সংকুচিত হয়েছে। ইউরোপ আমেরিকায় করোনা পরিস্থিতির উন্নতির পরিপ্রেক্ষিতে বাতিল-স্থগিত হওয়া ক্রয়াদেশ ৮০ শতাংশের বেশি পুনর্বহাল হয়েছে-এমন তথ্য বিজিএমইএ’র নতুন ক্রয়াদেশ ও আসছে তবে তা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কম।
সরকার পোশাক শিল্পকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়েছে এই করোনাকালে। এখন পোশাক কারখানা কর্তৃপক্ষের উচিত হবে সময়মতো ক্রয়াদেশ অনুসারে পণ্য রফতানিতে সচেষ্ট হওয়া। ইউরোপ-আমেরিকার বাজার পুনরুদ্ধারে সচেষ্ট হতে হবে। এ ক্ষেত্রে পণ্যের গুণগত মানের প্রতিও দৃষ্টি দিতে হবে। ইউরোপে এখন করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে, কয়েকটি দেশে লকডাউনও চলছে, তাই এ ক্ষেত্রে সংকট আরো কিছুদিন থেকেই যাবে।
করোনার ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হয়েছে ইউরোপ-আমেরিকার কয়েকটি দেশে, আশার কথা ইউরোপের দেশগুলিতে অচিরেই ভ্যাকসিন আসায় তাদের অর্থনীতি ও জীবন-জীবিকার ক্ষেত্রে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। ইউরোপ-আমেরিকার পাশাপাশি এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলিতে তৈরি পোশাকের ক্রেতা খুঁজতে সচেষ্ট হতে হবে।
আমরা পোশাকশিল্পে বিশ্ব প্রতিযোগিতায় ভালো স্থান করে নিয়েছি, তাই ইউরোপ-আমেরিকার বাজার পুনরুদ্ধার ও নতুন বাজার খুঁজতে বিশেষ অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। আমাদের প্রতিযোগী অন্য দেশও আছে সুতরাং নতুন বাজার খোঁজা, পুরনো বাজার পুনরুদ্ধারে আমাদের উৎপাদন সক্ষমতা, পরিবেশবান্ধব দৃষ্টিভঙ্গি, শ্রমিক-মালিক সুসম্পর্ক এবং উন্নত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পুরনো ও নতুন ক্রেতাদের আস্থা অর্জন করতে হবে।
করোনাকালে পোশাকশিল্পে মোটামুটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় ছিলো, সামনের দিনগুলিতেও সেই পরিবেশÑপরিস্থিতি বজায় রাখতে সরকার, মালিকপক্ষ ও শ্রমিক সংগঠনগুলিকে সচেষ্ট হতে হবে। আমাদের ভুললে চলবে না যে পোশাক শিল্প কেবল অর্থনীতি নয় সমাজের অগ্রগতির চাকাটিও সচল রাখছে।
মতামত সম্পাদকীয়