করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে প্রায় চার মাস ধরে বন্ধ রয়েছে বাংলাদেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। স্কুলগুলোয় ষাণ্মাসিক পরীক্ষার সময় পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্তে আসেনি সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এমন অবস্থায় সন্তানদের শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন অভিভাবকরা। স্কুল কবে খুলবে, পরীক্ষা কবে হবে, কীভাবে নেবে, সেটার ব্যাপারে এখনো কোনো ধারণা দেয়া হয়নি।
এর আগে সব শিক্ষার্থীকে প্রোমোশন দিয়ে পরের শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করার বিষয়টি সামনে এলেও সেখানে মেধার সঠিক মূল্যায়নের সুযোগ থাকবে না বলে জানিয়েছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, একেক শ্রেণিতে মূল্যায়ন পদ্ধতি একেকরকম হওয়ায় গণহারে প্রমোশন দেয়া বেশ জটিল।
গত মাসে এক ভিডিওবার্তায় শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি জানিয়েছিলেন, চলতি শিক্ষাবর্ষ আগামী মার্চ মাস পর্যন্ত বাড়ানো হতে পারে। সেইসঙ্গে পরের শিক্ষাবর্ষ কমিয়ে নয় মাস করার কথা ভাবা হচ্ছে। যদিও এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
জানা গেছে, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো চেষ্টা করছে এ বছরের মধ্যেই শিক্ষাবর্ষ শেষ করার। তবে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি বিবেচনা করে যদি ছুটি বাড়ানো হয় তাহলে এই শিক্ষাবর্ষ মার্চ মাস পর্যন্ত বাড়ানো নিয়েও আলোচনা হচ্ছে বলে জানান আন্ত:শিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক জিয়াউল হক।
সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে মূলত দুটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেয়া হবে, প্রথমত, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা যেন নিশ্চিত করা যায় এবং দ্বিতীয়ত মেধার মূল্যায়নের দিকটি যেন আপোষ করতে না হয়। তবে কবে নাগাদ সিদ্ধান্ত আসতে পারে সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু জানা যায়নি।
চলতি শিক্ষাবর্ষ বাড়ানো হলে আগে যেমন নভেম্বর ডিসেম্বরে সমাপনী পরীক্ষা হতো সেই পরীক্ষা হবে সামনের বছরের ফেব্রুয়ারি বা মার্চে হবে। অন্যদিকে সামনের শিক্ষাবর্ষ ১২ মাস থেকে ৯ মাসে নামিয়ে আনার কথা ভাবা হচ্ছে। উল্লেখ্য একটি শিক্ষাবর্ষে ১৪০ দিনের মতো পড়ানো হয়। বাকিটা ছুটি থাকে।
তাই পরের শিক্ষাবর্ষের সমাপনী পরীক্ষা যেন ডিসেম্বরেই নেয়া যায়, সে জন্য সিলেবাস কমানোর পাশাপাশি ঐচ্ছিক ছুটি বাতিল করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা।
তবে যে সিদ্ধান্ত নেয়া হোক কেন, সেটা সময় নিয়ে চূড়ান্ত করে একটি পরিপূর্ণ ও সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়নের ওপর জোর দিয়েছেন গণস্বাক্ষরতা অভিযানের পরিচালক এবং সাবেক শিক্ষা উপদেষ্টা রাশেদা কে. চৌধুরী। গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, “দেরি করে হলেও একটা বিকল্প সমাধানের কথা ভাবতে হবে, শিক্ষা কার্যক্রম পুনরুদ্ধারে বিনিয়োগ করতে হবে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের উদাহরণটা নেয়া যেতে পারে। তবে মূল লক্ষ্য হবে শিক্ষক, শিক্ষার্থী বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেন ঝুঁকির মুখে না পড়ে।”
শিক্ষাখাতে ক্ষতি পুষিয়ে আনতে নানা পরিকল্পনা ও আলোচনা চললেও কবে নাগাদ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে, সেটা এখনও বলা যাচ্ছে না।
কিন্তু শিক্ষা হলো একটি জাতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই শিক্ষাবর্ষ বা শিক্ষা বিষয়ে সামগ্রিক ও সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রণয়ন অত্যন্ত জরুরি। এক্ষেত্রে কালক্ষেপণ বা দোদুল্যমানতা শিক্ষা ও শিক্ষার্থীদের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে যা পক্ষান্তরে জাতিকেই বহন করতে হবে।
মতামত