নিজস্ব প্রতিবেদক »
এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে চট্টগ্রামে পাসের হার ৮০ দশমিক ৫০ শতাংশ। এতে বিজ্ঞান বিভাগে ৯১ দশমিক ৩০ শতাংশ, ব্যবসা শিক্ষা বিভাগে ৮৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ এবং মানবিক বিভাগে ৭৩ দশমিক ০৩ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। যা গত বছরের তুলনায় কম। একই সঙ্গে কমেছে জিপিএ-৫ পাওয়ার সংখ্যাও। তবে খারাপ ফলাফল দেখা গেছে মানবিক বিভাগে। এরমধ্যে অর্থনীতিতে ফেল করা শিক্ষার্থী অন্য সব বিষয়ের তুলনায় বেশি।
গতকাল বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সংবাদ সম্মেলন কক্ষে এইচএসসি ’২২ পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথ।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ইংরেজি প্রথম পত্রে প্রায় ১০ শতাংশ এবং দ্বিতীয় পত্রে ১৭ শতাংশেরও বেশি পরীক্ষার্থীর ফেল করেছেন। বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের পরীক্ষার্থীরাও ইংরেজিতে খারাপ ফল করায় সামগ্রিক ফলাফলে প্রভাব পড়েছে। এছাড়া অর্থনীতি প্রথম পত্রেও প্রায় ২১ শতাংশ শিক্ষার্থীরা ফেল করেছে।
বিষয়ভিত্তিক ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সবচেয়ে কম পরীক্ষার্থী পাস করেছে অর্থনীতি প্রথম পত্রে। এ বিষয়ে পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন ৫৪ হাজার ৬৬৪ জন। এদের মধ্যে পাস করেন ৪৩ হাজার ৫৭৫ জন। দি¦তীয় পত্রে ৫৪ হাজার ৬৩৯ জনের মধ্যে পাস করেন ৫৩ হাজার ১১৯ জন। পাসের হার ৭৯ দশমিক ৭১ শতাংশ।
ইংরেজিতে অংশগ্রহণ করেন ৮৬ হাজার ৪৫৩ পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেন ৭৮ হাজার ৪৪১ জন। দি¦তীয় পত্রে ৮৬ হাজার ৪১৯ জনের মধ্যে পাস করেন ৭১ হাজার ৬৯০ জন। পাসের হার ৮২ দশমিক৯৬ শতাংশ। যুক্তিবিদ্যায় ৮৯ দশমকি ৬০ শতাংশ পাস করেছে। সমাজবিজ্ঞানে ৮২ দশমিক ৫৯ শতাংশ, মনোবিজ্ঞানে ৯৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ। বাকি অধিকাংশ বিষয়ে পাসের হার ৯০ শতাংশের ওপরে প্রায় শতভাগের কাছাকাছি।
ইংরেজিতে খারাপ করার কারণ হিসেবে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সচিব প্রফেসর রেজাউল করিম বলেন, ‘২০১৮ ও ২০১৯ সালের ফলাফলের সঙ্গে তুলনা করলে বলা যায় চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড ভালো ফলাফল করেছে। তবে অন্যান্য শিক্ষাবোর্ডের চেয়ে আমাদের পিছিয়ে থাকার কারণ হচ্ছে, ইংরেজি প্রথম পত্র ও দ্বিতীয় পত্রে পরীক্ষার্থীরা তুলনামূলক রেজাল্ট খারাপ করেছে। তবে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী পাহাড়ের। সেখানে যেমন শিক্ষক স্বল্পতা রয়েছে, তেমনি রয়েছে পাহাড়ের মানুষের আর্থিক সংকট। সন্তানদের তারা প্রাইভেট পড়াতে পারেন না। পাহাড়ের আর্থিক অবস্থার উন্নতি না হলে ফলাফলের হারও তুলনামূলকভাবে কম থাকবে’।
অর্থনীতিতে রেজাল্ট খারাপ হওয়া প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘ইংরেজির তুলনায় অর্থনীতিতে শিক্ষকের সংকট নেই। তারপরও এই বিষয়ে খারাপ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে যেভাবে পড়া দরকার সেভাবে গুরুত্ব দেননি শিক্ষার্থীরা। এটি একটি টেকনিক্যাল বিষয়, শুধু মুখস্থ করলে হয় না। গভীরভাবে অনুধাবন করতে হয় , কিন্ত আমাদের শিক্ষার্থীরা মুখস্থ করতেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তাছাড়া করোনা, বন্যা থাকার কারণে ক্লাস সেভাবে করা হয়নি। তার প্রভাব এ বিষয়টিতে পড়েছে’।
এবারের জিপিএ-৫ প্রাপ্ত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১২ হাজার ৬৭০ জন। আগের বছরে এই সংখ্যা ছিল ১৩ হাজার ৭২০ জন। মোট জিপিএ-৫ প্রাপ্ত পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৭ হাজার ১০৬ জন ছাত্রী। আগের বছরে এই সংখ্যা ছিল ৭ হাজার ৬৭০ জন। এবারে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ছাত্রের সংখ্যা ৫ হাজার ৫৬৪ জন। যা গত বছর ছিল ৬ হাজার ৫০ জন।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ন চন্দ্র নাথ জানান, চট্টগ্রাম বোর্ডে ২৬৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৯৩ হাজার ৯৯৭। এর মধ্যে পরীক্ষার্থী উপস্থিত ছিলো ৯১ হাজার ৯৬০ জন। এর মধ্যে মোট ছাত্রীর সংখ্যা ৪৭ হাজার ৫৪০ জন। আর ছাত্রের সংখ্যা ৪৪ হাজার ৪২০ জন। এর মধ্যে এক বিষয়ে ফেল করেছেন ১২ হাজার ৯৩৯ জন; যা আগের বছর ছিল ৭ হাজার ৮৩৪ জন। শতভাগ পাশের হার কলেজের সংখ্যা ১৬ টি।