সুপ্রভাত ডেস্ক »
আজ ১৭ আগস্ট., বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি শামসুর রাহমানের ১৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০৬ সালের এই দিনে তিনি না-ফেরার দেশে পাড়ি জমান।
তিনি দীর্ঘ ছয় দশক সাবলীল ধারায় লিখনিতে সমৃদ্ধ করেছেন বাংলা সাহিত্যকে।
‘তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা’ কিংবা ‘স্বাধীনতা তুমি’র মতো বহু কালজয়ী কবিতার স্রষ্টা শামসুর রাহমান। তাঁকে বলা হয় স্বাধীনতার কবি, কবিতার বরপুত্র। তাঁর কবিতার পঙক্তির পর পঙক্তি মিশে আছে বাঙালির নানা আন্দোলন-সংগ্রামে।
আধুনিক বাংলা কবিতার প্রাণপুরুষ শামসুর রাহমানের কবিতার শিল্পিত উচ্চারণে প্রস্ফুটিত হয়েছে দেশ ও মানুষের কথা-আর্তি, মূর্ত হয়েছে বাঙালির গৌরবগাথা, স্বাধীনচেতা মানুষের দুর্নিবার আকাঙ্ক্ষা। আপন কাব্যশৈলীর গুণে তিনি আবির্ভূত হয়েছিলেন জীবনানন্দ দাশের পর বাংলা কবিতার ভুবনে সবচেয়ে আলোচিত কবির পরিচয়ে। সমকালীনতা ধারণকারী অনন্য প্রতিভায় উজ্জ্বল এই নাগরিক কবি।
শামসুর রাহমানের জন্ম ১৯২৯ সালের ২৩ অক্টোবর ঢাকার মাহুতটুলির নানাবাড়িতে। তার পৈতৃক বাড়ি নরসিংদী জেলার রায়পুরার পাড়াতলী গ্রামে। ১৯৫৭ সালে একজন সংবাদকর্মী হিসেবে দৈনিক মর্নিং নিউজ পত্রিকায় কর্মজীবন শুরু করেন তিনি।
১৯৫৭ সালে রেডিও পাকিস্তানে অনুষ্ঠান প্রযোজক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত সেখানে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬০ সালে আবার মর্নিং নিউজে ফিরে আসেন এবং ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত মর্নিং নিউজের সহযোগী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৬৪ সালের শেষের দিকে দৈনিক পাকিস্তানে সহকারী সম্পাদক পদে যোগ দেন শামসুর রাহমান। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে ওই পত্রিকাটি দৈনিক বাংলা নামে প্রকাশিত হয়। ১৯৭৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি দৈনিক বাংলা ও সাপ্তাহিক বিচিত্রার সম্পাদক নিযুক্ত হন। ১৯৮৭ সালে সামরিক সরকারের শাসনামলে তিনি দৈনিক বাংলা থেকে পদত্যাগ করেন।
এরপর সাহিত্য পত্রিকা অধুনার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তাঁর লেখা ‘বর্ণমালা’, ‘আমার দুখিনী বর্ণমালা’, ‘আসাদের শার্ট’, ‘স্বাধীনতা তুমি’, ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য, হে স্বাধীনতা’ এসব কবিতার মধ্যে বিদ্রোহী চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। ১৯৮৭ সালে স্বৈরশাসন আমলে পর পর ৪ বছর ধরে ‘শৃঙ্খল মুক্তির কবিতা’, ‘স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে কবিতা,’ ‘সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কবিতা’ এবং ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কবিতা’ লিখেন তিনি।
শামসুর রাহমানের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘প্রথম গান, দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে’ ১৯৬০ সালে প্রকাশিত হয়। কবিতা, উপন্যাস, প্রবন্ধ, শিশুতোষ রচনাসহ তার শতাধিক বই প্রকাশিত হয়েছে।
সাহিত্যে অনন্য অবদানের জন্য আদমজী সাহিত্য পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, নাসিরউদ্দিন স্বর্ণপদক, জীবনানন্দ পুরস্কার, আবুল মনসুর আহমেদ স্মৃতি পুরস্কার, সাংবাদিকতার জন্য মিৎসুবিশি পুরস্কার, স্বাধীনতা পদক ও আনন্দ পুরস্কার লাভ করেন।
এ ছাড়া ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এবং রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কবিকে সম্মানসূচক ডিলিট উপাধি দেওয়া হয়।