কয়েক দিন আগে সাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ ও অস্বাভাবিক জোয়ারের উত্তাল ঢেউয়ের আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়েছে পর্যটন নগর কক্সবাজারের বিচ এলাকা। খবরে বলা হয়েছে, সাগরের আগ্রাসী ঢেউয়ের লাগাতার আঘাতে বিলীন হয়ে গেছে সৈকতের বিস্তীর্ণ বালিয়াড়ি। উপড়ে পড়েছে শত শত ঝাউ গাছ এবং সৈকতের পুলিশ বক্স, লকারসহ অনেক স্থাপনা। সমুদ্রসৈকতের বিচকর্মী ও লাইফগার্ড সদস্যরা জানান, নিম্নচাপের প্রভাবে সাগরের পানি বৃদ্ধি পেয়ে সৈকতের লাবণী, শৈবাল, ডায়াবেটিক পয়েন্টের বালিয়াড়ীতে ব্যাপক ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে।
কয়েক দিনের সমুদ্রের টেউয়ের তাণ্ডবে সব বিলীন হয়ে গেছে। ফলে পর্যটকদের বালিতে বসার যে সুযোগ ছিল সেটা নষ্ট হয়ে গেছে।স্থানীয়দের বলেন, কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে গেল কয়েক বছর ধরে ভাঙন বৃদ্ধি পেয়েছে। এরই মধ্যে ডায়াবেটিক পয়েন্ট, শৈবাল পয়েন্টে আধা কিলোমিটারের মতো বালিয়াড়ী সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। কক্সবাজারের স্থানীয় বাসিন্দা সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ আবদুল্লাহ গণমাধ্যমকে জানান, সমুদ্রের প্রতি অবিচার করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। তাই প্রকৃতির চলমান প্রতিক্রিয়া অব্যাহত থাকলে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত ৪০ বছর আগে যে অবস্থায় ছিল ভাঙনের ফলে সেই অবস্থানে চলে যাবে।সেই হিসাবে কক্সবাজার সৈকত ধীরে ধীরে ভেঙে আরও উপকূলের দিকে চলে আসবে।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট ক্লাব ও টুয়াক সভাপতি রেজাউল করিম জানান, ঢেউয়ের তীব্র আঘাতে বিভিন্ন পয়েন্ট পর্যন্ত তীব্র ভাঙন ধরেছে। শৈবাল থেকে ট্যুরিস্ট পুলিশের কার্যালয় পর্যন্ত বালিয়াড়ীর প্রস্থে ১০/১২ গজ ও দৈর্ঘে বিশাল অংশ সাগরে বিলীন হয়েছে। শত শত ঝাউগাছ উপড়ে সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম বলেন, পরিবেশ সংকটাপন্ন এ এলাকায় প্রতি বছর জিও ব্যাগ বসিয়ে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। স্থায়ী সুরক্ষার জন্য স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে একটি প্রকল্প তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয় পত্রিকায় বলা হয়েছে, কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকতের ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। সাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রতিনিয়ত ধসে পড়ছে ঝাউগাছ আর উপকূলীয় বাঁধ। এতে শঙ্কিত হয়ে পড়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, গত কয়েক বছরে উত্তাল সাগরের ঢেউ প্রায় তিন থেকে চার কিলোমিটার পর্যন্ত লোকালয়ের কাছে চলে এসেছে। তারা বলছেন, এমন দৃশ্য অতীতে কেউ দেখেনি।
কবিতা চত্বর, ডায়াবেটিস পয়েন্ট, শৈবাল পয়েন্ট ও লাবণী পয়েন্টসহ বিভিন্ন স্থানে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, জিও ব্যাগ ও কংক্রিটের বাঁধ দিয়েও থামানো যাচ্ছে না সাগরের এই ধ্বংসযজ্ঞ। ভেঙে যাচ্ছে বহু পুরোনো স্থাপনা, উপড়ে যাচ্ছে মাইলের পর মাইল ঝাউগাছ।
সমুদ্র তীরে ছাতা ভাড়া দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা স্থানীয় ব্যবসায়ী নুরুল আলম বলেন, ৫-৬ বছর ধরে এখানে কাজ করছি। আগে যেখানে দোকান ছিল, এখন সেটা সাগরের মধ্যে। শৈবাল ক্যাফের স্থাপনাও ধসে গেছে। জানি না সামনে ভাঙন আর কত দূর যাবে।
আগে উপকূল থেকে সাগরের মধ্যে আধা কিলোমিটারের মতো বালিয়াড়ী ছিল।
যাতে সাগরলতাসহ সমুদ্রের বিভিন্ন উদ্ভিদ জন্মাত। এসব উদ্ভিদকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠত বালিয়াড়ীর পাহাড়।
আসলে কক্সবাজারকে তিলে তিলে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। অপরিকল্পিত উন্নয়ন, পর্যটনশিল্পের নাম ভাঙিয়ে হোটেল-মোটেলের বস্তি গড়ে তোলা, ঝাউবন উজাড় করে বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ করে বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকতকে ঝুঁকির মুখে ফলা দেওয়া হয়েছে। এখন বিক্ষিপ্ত, বিচ্ছিন্নভাবে উদ্যোগ নিলে কাজের কাজ কিছুই হবে না। এরজন্য দরকার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতিবিহীন কর্তৃপক্ষ। আর না হলে হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন পরিকল্পনা ও সরকারি-বেসরকারি সম্পদ সাগরের পেটে বিলীন হয়ে যাবে।
এ মুহূর্তের সংবাদ