নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার »
ভারী বৃষ্টিতে কক্সবাজারের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে ৯৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। বৃষ্টিতে পাহাড় ধসে কক্সবাজার শহরের পৃথক এলাকায় এক নারী ও শিশুর মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) ভোরে কক্সবাজার পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সিকদার বাজার ও এবিসি ঘোনা এলাকায় এ ঘটনা দুটি ঘটে।
মৃতরা হলেন কক্সবাজার শহরের এবিসি ঘোনা এলাকার মোহাম্মদ করিমের স্ত্রী জমিলা আক্তার (৩০) এবং সিদার বাজার এলাকার সাইফুল ইসলামের ছেলে নাজমুল হাসান (৫)।
জানা যায়, ভোরে পাহাড় ধসে ওই শিশু ও নারীর ওপর পড়ে। এরপর মাটি সরিয়ে তাদের উদ্ধার করে স্থানীয়রা কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসক তাদের মৃত বলে ঘোষণা করেন।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে কক্সবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুজ্জামান বলেন, বুধবার মধ্যরাত থেকে কক্সবাজার শহরে টানা মাঝারি ও ভারিবর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোরে সিকদার বাজার এলাকায় সাইফুল ইসলামের বাড়ির ওপর আকস্মিক পাহাড় ধসে পড়ে। এতে মাটির দেয়াল ভেঙে এক শিশু ঘুমন্ত অবস্থায় চাপা পড়ে। পরে স্থানীয়রা মাটি সরিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এ দিকে ভোরে কক্সবাজার শহরের এবিসি ঘোনা এলাকায় পাহাড় ধসে জমিলা আক্তার নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানান ওসি রকিবুজ্জামান।তিনি বলেন, ভোরে জমিলা আক্তার রান্না ঘরের পাশে ঘুমিয়ে ছিলেন। তার স্বামী আরেক কক্ষে ঘুমিয়ে ছিলেন। আকস্মিক পাহাড় ধসে পড়লে জমিলা মাটির নিচে চাপা পড়েন। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে, বুধবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি এখনও পর্যন্ত অব্যাহত আছে। বৃষ্টিতে জেলার ৯ উপজেলায় বেশিরভাগ এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল আটটার দিকে বৃষ্টি কিছুটা কমলেও ১১টার দিকে আবারও ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়। এতে তলিয়ে যায় কক্সবাজার শহরের রাস্তাঘাট ও উপজেলার বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল। বৃষ্টির পানিতে জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। বিপাকে পড়েছেন এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা।
পৌরসভার বাসিন্দা সুমন দাশ জানান, কক্সবাজার পৌর এলাকায় অনুন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে পানি সরাসরি নামতে না পেরে সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ভারী বৃষ্টিতে শহরের বেশিরভাগ বসতবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। এতে পৌরসভার বাসিন্দাদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
রাত থেকে শুরু হওয়া ভারী বৃষ্টিতে এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা কেন্দ্রে যেতে বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন।
দূর্নীতি দমন কমিশন কক্সবাজারস্হ পিপি অ্যাডভোকেট মো. আবদুর রহিম জানান, বাঁকখালী নদী যতদিন পযর্ন্ত খনন না হবে ততদিন পর্যন্ত জলাবদ্ধতা থাকবে।
কক্সবাজার পৌর এলাকা ছাড়াও জেলার রামু উপজেলা, ঈদগাও, চকরিয়া, পেকুয়া উখিয়া এবং টেকনাফের বেশ কিছু গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী জানান, পাহাড় কাটার কারণে নালা ভরাট এবং কিছু অসাধু ব্যক্তি নালা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করায় বৃষ্টির পানির স্বাভাবিক গতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এসব বিষয়ে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আব্দুল হান্নান জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত কক্সবাজারে ৯৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
অতিবৃষ্টির কারণে পাহাড় ধসের আশঙ্কা থাকায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে পাহাড়ের চূড়া এবং পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের নিরাপদে আশ্রয়ে চলে যাওয়ার অনুরোধ করেছেন জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান। কেউ আদেশ অমান্য করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।