বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে যুগান্তকারী মেগাপ্রকল্প এসপিএম বা সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিংয়ের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ। চালু হতে যাচ্ছে দেশের জ্বালানি খাতে যুগান্তকারী মেগাপ্রকল্প ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন প্রকল্প। চালুর আগে আগামী ২৫ জুন শুরু হতে যাচ্ছে প্রকল্পটির অয়েল ফিলিং কমিশনিংয়ের কাজ। কমিশনিং শেষ হলে জুলাই মাসের শেষ দিকে অথবা আগস্টের শুরুতে প্রকল্পটি চালু করা হবে বলে জানিয়েছে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে জি-টু-জি ভিত্তিতে বাস্তবায়নাধীন সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং পাইপলাইন দিয়ে স্বল্প সময়ে, সাশ্রয়ী খরচে ও নিরাপদে জ্বালানি তেল (ক্রুড ওয়েল ও ফিনিসড প্রোডাক্ট) পরিবহন করা হবে।
গতানুগতিক পদ্ধতি সময়সাপেক্ষ, ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যয়বহুল হওয়ায় গভীর সমুদ্রে মুরিং পয়েন্ট নির্মাণ এবং পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল আনার লক্ষ্যে ২০১৫ সালে এ প্রকল্প হাতে নেয় ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড। শুরুতে তিন বছরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা থাকলেও পরে দুই দফায় সময় বাড়ানো হয়।
প্রকল্পটির আওতায় ২২০ কিলোমিটার পাইপলাইনের পাশাপাশি মহেশখালীর কালারমার ছড়া এলাকায় তৈরি করা হয়েছে ছয়টি বিশালাকার স্টোরেজ ট্যাংক। কালারমার ছড়া এলাকায় প্রায় ৯০ একর জায়গা অধিগ্রহণ করে এই ছয়টি স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে পরিশোধিত তেলের জন্য তৈরি করা হয় তিনটি স্টোরেজ ট্যাংক। এর ধারণক্ষমতা ১৫০ হাজার ঘনমিটার। অপরিশোধিত তেলের জন্য তৈরি করা বাকি তিনটি স্টোরেজ ট্যাংকের ধারণ ক্ষমতা ৯০ হাজার ঘনমিটার।
এসপিএম প্রকল্পে খরচ হচ্ছে ৭ হাজার ১২৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৪ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা দিচ্ছে চীন সরকার। এ ছাড়া বিপিসি ১ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে ৬০১ কোটি টাকা। প্রকল্পের অধীনে ১ সেট এসপিএম-পিএলইএম, ১টি ভাসমান বয়া, ২২০ কিলোমিটার পাইপলাইন, ২ লাখ ৮৮ হাজার ঘনমিটারের ৬টি স্টোরেজ ট্যাংক, ৩টি ব্লক ভাল্ব স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে।
জ্বালানি তেলের পাইপলাইন পরিচালনার জন্য নতুন কোম্পানি গঠন করেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। এর নাম পেট্রোলিয়াম ট্রান্সমিশন কোম্পানি পিএলসি। এ কোম্পানি জ্বালানি তেলের সঞ্চালনের পাইপলাইনগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ, পরিচালন, সুরক্ষা, নিরাপত্তাসহ সব ধরনের দায়িত্ব পালন করবে। বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইনের দেখভালের দায়িত্ব নিয়ে ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছে নতুন কোম্পানিটি।
তেল পরিবহনের ব্যয় ও অপচয় কমিয়ে আনতে সঞ্চালন পাইপলাইনের নেটওয়ার্ক গড়ে তুলছে বিপিসি। বর্তমানে তারা চারটি পাইপলাইন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এগুলো হলো- সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) পাইপলাইন প্রকল্প, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত পাইপলাইন, বিমানে জ্বালানি তেল পরিবহনে পাইপলাইন ও বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ভারত থেকে ডিজেল আসছে। এর দায়িত্বভার বুঝে নিয়েছে পিটিসি-পিএলসি। অন্য তিন প্রকল্পের কাজ শেষ হলে সেগুলোর সব দায়িত্বও পর্যায়ক্রমে চলে যাবে নতুন কোম্পানির হাতে।
পাইপলাইন তেল সঞ্চালনে শুধু অপচয়ই রোধ করবে না, সহজতর করার পাশাপাশি সময়ও বাঁচাবে।
এ মুহূর্তের সংবাদ