নিজস্ব প্রতিবেদক »
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ কর্তৃক চট্টগ্রাম এম এ আজিজ স্টেডিয়াম বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে ২৫ বছরের জন্যে লিজ দেয়ার সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে বৃহত্তর চট্টগ্রামের ৭৩জন ক্রীড়াবিদ ও সংগঠকদের পক্ষ থেকে ক্রীড়া উপদেষ্টা বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।
বুধবার (৮ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার (সিজেকেএস) সভাপতি ও জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমের মাধ্যমে এ স্বারকলিপি প্রদান করা হয়।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, চট্টগ্রামে ক্রীড়াবিদদের চারণ ভূমি খ্যাত এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে বহু বছর ধরে ফুটবল ক্রিকেটসহ অন্যান্য প্রায় ৩০ টি খেলা নিয়মিতভাবে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এ মাঠ থেকেই বাংলাদেশে জাতীয় পর্যায়ের ফুটবলার সুনীল কৃষ্ণ দে, দিলীপ বড়ুয়া, ইউসুফ বলি, জসিম উদ্দীন আহমদ, কিংবদন্তি আশীষ ভদ্র, এজহারুল হক টিপু, এফ আই কামাল, মমিনুল ইসলাম খসরু, পান্না লাল নন্দী, মামুনুল ইসলাম মামুন, মো. আসাদ, মো. কায়সার, মো. ফরহাদ, মো. আনোয়ারের মতো ফুটবলার যেমন সৃষ্টি হয়েছে তেমনি ক্রিকেটে শফিকুল হক হীরা, নুরুল আবেদীন নোবেল, মিনহাজুল আবেদীন নান্নু, আকরাম খান, শহিদুল ইসলাম, ফজলে বারী খান রুবেল, আজম ইকবাল, নাফিজ ইকবাল, তামিম ইকবাল, আফতাব আহমেদ, নাজিম উদ্দীন, হকিতে আজিজুর রহমান সেলিম, মো. হারুন, মো. মহসিন, অ্যাথলেটিকসে আবদুল আওয়াল, মিলজার হোসেন, আজিজা খানম, শর্মিষ্ঠা রায়, সোহেল সরওয়ার, হ্যান্ডবলে এনামুল হাসান, অভিজিৎ বড়ুয়া, রনি দত্ত, ভলিবলে ইসমাইল কুতুবী, মোহাম্মদ রফিকসহ অন্যান্য খেলার অনেক জাতীয় খেলোয়াড় সৃষ্ট হয়েছে এবং বর্তমানে বিভিন্ন ইভেন্টের অনেক খেলোয়াড় জাতীয় দলে এবং ঢাকার বিভিন্ন ক্লাবের পক্ষে প্রিমিয়ার ও প্রথম বিভাগ লিগে অংশগ্রহণ করে আসছে।
স্মারকলিপিতে এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের গুরুত্ব তুলে ধরে বলা হয়, চট্টগ্রাম জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থা ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা আয়োজিত সকল খেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে এবং ইতোপূর্বে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন কর্তৃক সকল প্রকার জাতীয় আন্তর্জাতিক ফুটবল লিগ/টুর্নামেন্টসহ অন্যান্য খেলার সঙ্গে সমন্বয় করে সফলতার সঙ্গে আয়োজন করা হয়েছে। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্রিকেট, ওয়ানডে ক্রিকেট, টি২০ ক্রিকেট এবং জাতীয় ক্রিকেটের দলসমূহের অনুশীলনও এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
স্মারকলিপিতে এম এ আজিজ স্টেডিয়ামকে শুধুমাত্র বিশেষায়িত ফুটবল খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহারের ফলে চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গনে যে সার্বিক অচলাবস্থার সৃষ্টি হতে পারে তার সম্ভাব্য চিত্র তুলে ধরে বলা হয়, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে মাঠটি বরাদ্দ প্রদান করা হলে ফুটবল ছাড়া অন্যান্য ৩০ টি খেলার স্থানীয় লিগ/টুর্নামেন্ট এবং এসব ইভেন্টের অনুশীলণ কর্মকান্ড বন্ধ হয়ে যাবে। তাছাড়া জহুর আহম্মদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেট টুর্নামেন্টের জন্য আগত বিভিন্ন দলের অনুশীলনও বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে চট্টগ্রামে ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অনুষ্ঠিত না হওয়ার শংকা থেকে যায়। এছাড়া স্টেডিয়ামের খেলাধুলা বন্ধ হলে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন খেলা সমূহের খেলোয়াড়, কোচ, কোচিং স্টাফসহ প্রায় সাত হাজারের অধিক পরিবার আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অপরদিকে যুবসমাজ মাদকাসক্তসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
স্মারকলিপিতে সরকারের ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন কর্তৃক চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক ফুটবল স্টেডিয়াম প্রতিষ্ঠা করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলা হয়, আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামটি বাংলাদেশ রেলওয়ের পরিচালনা পলোগ্রাউন্ড মাঠ বা জঙ্গল সলিমপুর বা কর্ণফুলী টানেলের অপর প্রান্তে স্থাপিত হলে একদিকে চট্টগ্রাম যানজট মুক্ত হবে এবং অপরদিকে কর্ণফুলী নদীর অপর প্রান্ত অধিকতর হারে ব্যবহার উপযোগী হবে।
স্মারকলিপিতে সাক্ষর প্রদানকারী ক্রীড়া সংগঠকরা হলেন সৈয়দ আবুল বশর, সৈয়দ শাহাবুদ্দিন শামীম, শাহিন আফতাবুর রেজা চৌধুরী, মো. হাফিজুর রহমান, সিরাজ উদ্দিন মো. আলমগীর, মো. আমিনুল ইসলাম, আ ন ম ওয়াহিদ, আব্দুল হান্নান আকবর, শাহবুদ্দীন মো. জাহঙ্গীর, ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ চৌধুরী, ফরিদ আহমদ, আলি হাসান রাজু, লিটন বড়ুয়া, মো. হারুন রশিদ প্রমুখ।
উল্লেখ্য, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ সম্প্রতি আন্তর্জাতিক ফুটবল স্টেডিয়াম হিসেবে তৈরির জন্য ১২ শর্তে চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়ামকে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) কাছে ‘লিজ’ দিয়েছে।