‘এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের বরাদ্দ বাতিল করতে হবে’

নিজস্ব ক্রীড়া প্রতিবেদক »

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ কর্তৃক বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে (বাফুফে) চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়াম শুধুমাত্র ফুটবলের জন্য ২৫ বছরের বরাদ্দ বাতিল চান চট্টগ্রামের ক্রীড়া সংগঠক ও ক্রীড়াবিদরা। গতকাল (সোমবার) সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি’ হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনেচট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার অনুমোদিত ক্লাবের পক্ষে অ্যাডভোকেট শাহীন আফতাবুর রেজা চৌধুরী লিখিত বক্তব্যে এ দাবি জানান। সাংবাদিক সম্মেলনে জানানো হয়, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ কর্তৃক ২৫ বছরের জন্য চট্টগ্রাম এম এ আজিজ স্টেডিয়ামকে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) কাছে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত চট্টগ্রামের সকল ক্লাব ও ক্রীড়ামোদীরা হতবাগ ও মর্মাহত। মাঠ বরাদ্দের এ অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে ক্রীড়ামোদী জনগনের পক্ষে থেকে ইতিমধ্যে প্রধান উপদেষ্টা ও ক্রীড়া উপদেষ্টাসহ সংলিষ্টদের কাছে জেলা প্রসাশক আবেদন করা হয়েছে। সম্প্রতি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ প্রেরিত সংশোধনী পত্রে চট্টগ্রামে সকল ক্রীড়া কার্যক্রম পরিচালনায় বাফুফের নিকট থেকে অনুমতি নেওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে। যা কেন ভাবেই চট্টগ্রামের ক্রীড়ামোদীদের কাছে কাম্য নয়। চট্টগ্রামের এই স্টেডিয়ামের অতীত সম্পর্কে অবগত করে সাংবাদিক সম্মেলনে জানানো হয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জায়গায় চট্টগ্রামের বিত্তবান ক্রীড়াব্যাক্তিরা নিজস্ব অর্থায়নে এই স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হয়েছিল। বরাদ্দ বাতিল করতেই হবে এবং চট্টগ্রামের মাঠ চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার অধীনেই থাকবে। অন্য কারো তত্ত্বাবধানে থাকা সমীচীন বলে তারা মনে করেন না। সাংবাদিক সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার অ্যাডহক কমিটির সদস্য সৈয়দ আবুল বশর ও হাফিুজুর রহমান, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব অর্ন্তবর্তী কমিটির সভাপতি জাহেদুল করিম কচি, চট্টগ্রাম মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাহাবুদ্দীন শামীম ও সিডিএফএ সাধারণ সম্পাদক আ ন ম ওয়াহিদ দুলাল। অনুষ্ঠানে সৈয়দ আবুল বশর বলেন, এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে অতীতের মত সকল খেলাধুলার জন্য উম্মুক্ত রেখে চট্টগ্রামবাসীর দীর্ঘ দিনের চাওয়া একটি নতুন আধুনিক ফুটবল স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হলে আমরা প্রাণভরে উচ্ছ্বাস কবর। হাফিজুর রহমান বলেন, ‘আন্দোলন-অবরোধের মাধ্যমে নয় সদয় ব্যবহারের মাধ্যমে ক্রীড়া সংগঠক, ক্লাব প্রতিনিধি, সাবেক ও বর্তমান খেলোয়াড়, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন পেশাজীবি নেতৃবৃন্দসহ সর্বস্তরের মানুষের মতামতের ভিত্তিতে আমরা দাবি আদায়ের চেষ্টা করছি।’ সৈয়দ শাহাবুদ্দীন শামীম বলেন, ‘একটাই কথা মাঠ যেন আমাদের থাকে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ এই মাঠের তত্ত্ব¡াবধায়ক, মাঠের মালিক সেনাবাহিনী। আমরা ক্লাব কর্মকতারা খেলাধুলায় অংশগ্রহন করে হাজারো খেলোয়াড় ও তাদের পরিবারকে সহায়তা করছি। নিজেদের অর্থ খেলাধুলার পিছনে ব্যয় করি বলে নিজ নিজ পরিবারের সদস্যদের কাছে আমরা (ক্রীড়া সংগঠকরা) পাগল, এ মাঠ ফিফার অধীনে চলে গেলে আমাদের আর কোন অস্বিত্ব¡ থাকবে না। চট্টগ্রাম মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবসহ অন্যান্য দলও খেলাধুলায় জন্য দল গঠন করবে না।’ জাহেদুল করিম কচি বলেন, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের প্রাপ্তি মাঠ ইজারার এই সিদ্ধান্ত চট্টগ্রামের জন্য অশনিসংকেত। ওয়াহিদ দুলাল বলেন, ‘চট্টগ্রাম জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন সাধারণ সম্পাদক হয়ে আমি এই সিদ্ধান্তে খুশি হতে পারিনি। কারন এই সিদ্ধান্তের ফলে চট্টগ্রামের ফুটবল ক্ষতিগ্রস্থ হবে।’ সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কারাতে ফেডারেশনের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি শাহাজাদা আলম, সিজেকেএস সাবেক কর্মকতা আমিনুল ইসলাম, শাহাবুদ্দীন জাহাঙ্গীর, নগর বিএনপি নেতা ও ক্রীড়া সংগঠক নিয়াজ মোহাম্মদ খান, সাবেক জাতীয় ক্রিকেটার শহিদুর রহমান ও সাবেক জাতীয় শাটলার সালাউদ্দিন খান, সিজেকেএস কাউন্সিলর মাহাবুবুর রহমান মাহাবুব, নাসির মিয়া হারুনুর রশীদ, সাইফুল আলম খান ও আলী হাসান রাজু, এনামুল হক এনাম, সোহেল আহম্মদ, আবু সামা বিপ্লবসহ বিভিন্ন ক্লাব প্রতিনিধি। এদিকে গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম এম এ আজিজ স্টেডিয়াম পঁচিশ বছরের জন্য বাফুফে’কে লিজ বাতিলের বিষয়ে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের সাথে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার অনুমোদিত ক্লাব কর্মকর্তাদের এক মতবিনিময় সভা ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে অনুষ্ঠিত হয়। প্রেস ক্লাব অন্তর্বর্তী কমিটির সদস্য সচিব জাহিদুল করিম কচির সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন কমিটির সদস্য মুস্তফা নঈম। বক্তারা বলেন, এম এ আজিজ স্টেডিয়াম চট্টগ্রামের একটি প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী স্টেডিয়াম। এই স্টেডিয়ামে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার অধীনে বিভিন্ন খেলার জন্য গঠিত উপ-কমিটির মাধ্যমে বছরের বিভিন্ন সময়ে ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, ভলিবল, কাবাডি, রাগবি, খো খো, আর্চারীসহ প্রায় ৩০টির বেশি ইভেন্টের খেলা অনুষ্ঠিত হয়। অন্যান্য খেলার কথা বিবেচনায় না এনে শুধুমাত্র ফুটবল খেলা আয়োজনের জন্য বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে মাঠটি বরাদ্দ দেয়া হলে অন্যান্য সব ধরনের খেলা অনুশীলনও বন্ধ হয়ে যাবে। তারা আরো বলেন, এম এ আজিজের বিকল্প হিসেবে কর্তৃপক্ষ চাইলে রেলওয়ে পলোগ্রাউন্ড মাঠ, জঙ্গল সলিমপুর বা কর্ণফুলী টানেলের অপর প্রান্তেও শুধুমাত্র ফুটবল ফেডারেশনের জন্য আলাদা মাঠ তৈরি করা যায়। মতবিনিময় সভা চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব নেতৃবৃন্দ ক্রীড়া সংস্থার নেতৃবৃন্দের দাবির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেন। এ সময় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সালেহ নোমান, প্রেস ক্লাব কমিটির সদস্য গোলাম মাওলা মুরাদ, শাহনেওয়াজ রিটন, মোহাম্মদ আলী, এম এইচ স্পোটিং ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শাহীন আফতাবুর রেজা চৌধুরী, সাবেক ফুটবলার মো. হাফিজুর রহমান, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাহাবুদ্দীন শামীম, ফ্রেন্ডস ক্লাবের সাবেক সভাপতি সৈয়দ আবুল বসর, বাকলিয়া একাদশের সাধারণ সম্পাদক মো. আমিনুল ইসলাম, আগ্রাবাদ নওজোয়ান ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদ দুলাল, শতদল ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শাহাবুদ্দীন মো. জাহাঙ্গীর, বাংলাদেশ কারাতে ফেডারেশন অ্যাডহক কমিটির সভাপতি শাহজাদা আলম, শহীদ শাহজাহান সংঘের সাধারণ সম্পাদক এ কে এম আব্দুল হান্নান আকবর, ক্রীড়া সংগঠক নিয়াজ খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।