এত মানুষ ট্রেনে কাটা পড়ছে কেন

আবার চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে তিন তরুণের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে উপজেলার সোনাপাহাড় এলাকায় বিএসআরএম কারখানা সংলগ্ন স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে। রেলওয়ের পুলিশ জানায়, তাঁরা রেললাইনের ওপর বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন। ট্রেন আসার বিষয়টি খেয়াল করেননি। তবে কোন ট্রেনে কাটা পড়ে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে, তা রেলওয়ে কর্মকর্তারা নিশ্চিত করতে পারেননি।
গতকাল একটি জাতীয় দৈনিকের খবরে উল্লেখ করা হয়, গত ১০ বছরে অসতর্কতা ও অসচেতনভাবে রেললাইন ব্যবহারের কারণে ৯ হাজার ২৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে গত তিন বছরে মৃত্যু বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ১৪০ জনে, অর্থাৎ এ সময়ে প্রতিদিন গড়ে ট্রেনে কাটা পড়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।

রেললাইনে ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যুর পেছনে মোটাদাগে চারটি কারণের কথা বলছেন রেলওয়ে পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এক, সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয় রেলক্রসিং দ্রুত পার হতে গিয়ে এবং রেললাইনের ওপর বসা বা চলাচলের কারণে। দুই, কানে হেডফোন লাগিয়ে রেললাইন পার হওয়া বা হাঁটার সময়। তিন. ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে যাওয়া। চার. রেললাইনকে ব্যবহার করে হত্যা ও আত্মহত্যা। অথচ রেললাইন সরকারিভাবে সাধারণ চলাচলের জন্য নয় বলে সার্বক্ষণিক ১৪৪ ধারা জারি থাকে।

রেল পুলিশের তথ্য বলছে, শুধু রেলক্রসিং ঝুঁকিপূর্ণভাবে পারাপারের চেষ্টা এবং রেললাইনের ওপর বসা বা চলাচলের কারণে গত ১০ বছরে ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছেন ৭ হাজার ৯৮ জন, অর্থাৎ মোট মৃত্যুর ৭৭ শতাংশই ঘটেছে এ দুই কারণে।

রেলওয়ে পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে মোট রেলক্রসিং আছে ৩ হাজার ১১১টি। এর মধ্যে অনুমোদন আছে ১ হাজার ৮৮৬টির। এ হিসাবে ১ হাজার ২২৫টির অনুমোদন নেই, অর্থাৎ দেশের মোট রেলক্রসিংয়ের প্রায় ৪০ শতাংশেরই অনুমোদন নেই। কোনো ধরনের অনুমোদন ছাড়া সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং স্থানীয় সরকার বিভাগ রেললাইনের ওপর দিয়ে সড়ক নির্মাণ করায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয় নেই বলেই মনে করেন রেলওয়ে পুলিশের কর্মকর্তারা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অরক্ষিত রেলক্রসিং, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অবহেলা ও অব্যবস্থাপনার কারণে ট্রেনে কাটা পড়ে মানুষ মারা যাচ্ছেন। রেললাইনে হাঁটা বা বসা আইন অনুযায়ী নিষিদ্ধ। যাঁরা আইন মানছেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার নজির নেই। রেললাইনের নিরাপত্তার জন্য রেলওয়ে বিভাগের নিরাপত্তা বাহিনী রয়েছে। আইন অনুযায়ী তাঁরা গ্রেপ্তারও করতে পারেন। অথচ তাঁরা রেললাইনের নিরাপত্তায় কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারছেন না।
এত বিপুল মানুষের মৃত্যু নিয়ে দেশে তেমন আলোচনাও হয় না। এই অবহেলা মানা যায় না। কর্তৃপক্ষ সচেতন হলে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক কমিয়ে আনা যেতো। এর জন্য প্রয়োজন মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার চালানো।