সুপ্রভাত ডেস্ক »
এক সময়ে আবহাওয়ার পূর্বাভাস ছিল ঠাট্টার বিষয়। যা জানা যেত, তার উল্টোটাই ঘটত। এখন দিন বদলেছে। প্রযুক্তি কাঁটায় কাঁটায় মিলিয়ে দেয় সব।
বৃষ্টি আর হঠাৎ নামে না। কখন বৃষ্টি আসবে, কবে আসবে, তা আগে থেকেই জানা যায়।
বছর ছ’-সাত আগেও আবহাওয়ার পূর্বাভাস ঠাট্টার বিষয় ছিল। আবহাওয়া দফতরের ঝড়ের সঙ্কেত হাসির খোরাক হয়ে ওঠে। তখন বাঙালি বলত, আবহাওয়া দফতর এখানে ঝড় হবে বললেই ধরে নিতে হবে তা পাশের দেশে যাবে।
২০২০ সালের আমপানের কথায় ফেরা যাক। ঘূর্ণিঝড় আসার ঠিক পাঁচ দিন আগে সঙ্কেত মেলে। প্রায় কাঁটায় কাঁটায় মিলে যায় পূর্বাভাস। ক্ষয়ক্ষতি কম হয়নি। কিন্তু কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা গিয়েছিল। প্রাণনাশ আটকানো গিয়েছিল। আমপান হোক বা গুলাব— কিছুটা প্রস্তুতি ঝড় আসার আগে থেকেই এখন নেওয়া যায়।
কী ভাবে এমন হচ্ছে? কোন প্রযুক্তির উন্নতি পূর্বাভাস ঠিক করার সুবিধা জোগাচ্ছে?
প্রযুক্তি উন্নত হয়েছে। নানা ধরনের উপগ্রহ (স্যাটেলাইট) সাহায্য করছে পৃথিবীর নানা প্রান্তের আবহাওয়ার খবর আনতে। প্রায় প্রতি দেশে জাতীয় উপগ্রহ বসানো হয়েছে। এই সব উপগ্রহ পৃথিবীর চার ধারে যেমন ঘুরপাক খায়, তেমনই কিছু আবার হয় ‘জিয়ো স্টেশনারি’। সেগুলি ভূমিতে বসেই নজরদারি চালায় নানা জিনিসের উপর। ‘রিমোট সেন্সিং’ যত উন্নত হচ্ছে, তত নিখুঁত তথ্য মিলছে এ সব উপগ্রহ থেকে। আকাশের ছবি তুলছে, সমুদ্রের নীচের ছবিও তুলে আনছে। কম্পন বুঝে বলে দিচ্ছে বিপদ আসছে কি না। আবহাওয়ার পূর্বাভাসের কাজে যুক্ত উপগ্রহ যেমন খবর পাঠায় কোথায় কবে ঝড় আসতে পারে, তেমনই জানান দেয় তাপমাত্রা ওঠা-নামার কথাও। এখন সে সবের উপর নির্ভর করে নানা ধরনের কাজ করা হয়।
বহু দিন ধরেই ধীরে ধীরে যন্ত্রনির্ভর হচ্ছে বিভিন্ন কাজকর্ম। প্রযুক্তি যেমন বহু ক্ষেত্রে মানুষের খাটুনি কমাচ্ছে, তেমনই করছে আবহাওয়ার উপগ্রহও। গত পাঁচ দশকে ‘রিমোট সেন্সিং’ ধীরে ধীরে বদলে দিয়েছে গোটা বিশ্বে পর্যবেক্ষণের ধারণা। এমনই দাবি করা হয়েছে ২০২১ সালে ‘ফ্রন্টিয়ার্স ইন রিমোট সেন্সিং’ নামক পত্রিকায় প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে। সেখানে গবেষকদের বক্তব্য, এ সময়ে রিমোট সেন্সিং আরও উন্নত। সবচেয়ে বেশি তা ব্যবহৃত হচ্ছে আবহাওয়া এবং অরণ্যের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে। আর কাজে লাগছে বিভিন্ন দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায়।
আবহাওয়ার ক্ষেত্রে ধরা যাক সাম্প্রতিকতম পদক্ষেপের কথা। এ মাসের শুরুতেই খবর এসেছে যে, ছ’টি নতুন উপগ্রহ ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমেরিকার ‘নাসা’। তার মধ্যে দু’টি ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস সূক্ষ্ম ভাবে ধরতে পারবে বলে দাবি সে দেশের বিজ্ঞানীদের। অর্থাৎ, দক্ষিণ এশিয়ার কিছু অঞ্চলে আমপানের মতো অন্য কোনও বড় ঘূর্ণিঝড় এলে তা আরও আগে থেকে জানা যাবে। সতর্ক তো হওয়া যাবেই, সঙ্গে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও কমানো যাবে।
তবে আমেরিকায় আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনেক দিন ধরেই প্রায় নিখুঁত।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা