নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার »
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যেই ঘটেছে ৫টি খুনের ঘটনা। এছাড়া রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে চুরি-ডাকাতি, ধর্ষণ, অপহরণ, মাদকপাচার, অস্ত্র পাচারসহ নানা অপরাধের ঘটনা তো লেগেই আছে। প্রশাসনের কঠোর নজরদারী স্বত্বেও সশস্ত্র রোহিঙ্গারা তাদের কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে। এতে দিন দিন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন সাধারণ রোহিঙ্গারা। তারা সবসময় আতঙ্ক ও ভয়ে দিন যাপন করছেন।
জানা গেছে, ৩ অক্টোবর রাত সোয়া একটার দিকে উখিয়ার ১৮ নম্বর রোহিঙ্গা শিবিরে সন্ত্রাসীদের গুলিতে তামদিয়া আক্তার নামে ১১ বছরের এক রোহিঙ্গা শিশু নিহত হয়েছে। একই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন তার ভাবী দিল ফায়াছ (১৮)। নিহত তামদিয়া ওই শিবিরের মো. ইয়াছিনের মেয়ে। আর দিল ফায়াছ মো. নূরের স্ত্রী। তারা দুজনই সম্পর্কে ননদ ভাবী। উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী ঘটনার কথা নিশ্চিত করেন।
অপরদিকে, ১১অক্টোবর ৯ নম্বর শিবিরের আই ব্লকে রোহিঙ্গা আশ্রয়কেন্দ্রে দুষ্কৃতকারীদের গুলিতে হেড মাঝি মোহাম্মদ হোসেন (৩৮) আহত হন। তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
এদিকে ১৫ অক্টোবর সন্ধ্যায় উখিয়ার বালুখালী ১৩ নম্বর ক্যাম্পে ১৮/এ ব্লকে সন্ত্রাসীদের হামলায় দুই মাঝি (কমিউনিটি লিডার) নিহত হয়েছেন। জানা গেছে, ওই দিন বালুখালী ১৯ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ১৮ ব্লকে ১৫ থেকে ২০ জনের একদল দুষ্কৃতকারী ১৩ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এফ ব্লকের হেড মাঝি মো. আনোয়ার এবং ব্লক মাঝি মৌলভী মো. ইউনুসের ওপর হামলা চালায়। এ সময় মাঝিরা স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। হঠাৎ করে দুষ্কৃতকারীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে দুজনকেই উপর্যুপরি কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। পরে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক ও এপিবিএন সদস্যরা দুজনকে উদ্ধার করে আইওএম পরিচালিত হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক ইউনুসকে মৃত ঘোষণা করেন। অপর গুরুতর আহত হেড মাঝি আনোয়ারকে এমএসএফ হাসপাতালে নেওয়া হলে রাত ৯টার দিকে সেও চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
সর্বশেষ ১৮ অক্টোবর রাত ৮টার দিকে উখিয়ায় বাবার পর ছেলে সৈয়দ হোসেন (২৩) নামে এক রোহিঙ্গাকে গলা কেটে ও গুলি করে হত্যা করে। সৈয়দ হোসেন ক্যাম্প-১৯, ব্লক-এ/১০ এর মৃত জমিল হোসেন এর ছেলে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ক্যাম্প-১৯, ব্লক-এ/১০ এর একটি দোকানের সামনে পাঁচ থেকে ছয়জনের একটি দুষ্কৃতিকারী দল সৈয়দ হোসেনের ওপর আকস্মিকভাবে হামলা করে। দুষ্কৃতিকারীরা ধারালো ছুরি দিয়ে তার গলা কেটে ও গুলি করে মারাত্মক জখম করে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। তারা আরো জানান, কতিপয় দুষ্কৃতিকারীরা এর আগে ২০২১ সালে তার বাবা জমিল হোসেনকে খুন করে। খুনের মামলার আসামিদের গ্রেফতারের জন্য সৈয়দ হোসেন তৎপর ছিলেন। এর জের ধরে আক্রোশে দুষ্কৃতিকারীরা তাকেও খুন করছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
উখিয়া ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) এর সহকারী পুলিশ সুপার মো. ফারুক আহমেদ জানান, যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি যেন রোহিঙ্গা শিবিরে অপরাধ প্রবণতা না বাড়ছে। প্রতিদিনই অপরাধীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে।
উখিয়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, চেষ্টা করছি রোহিঙ্গা শিবিরের অপরাধ দমনে। তারা এতই হিং¯্র, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করেও খুনের মত জঘন্য ঘটনা ঘটাতে পারে।