দীর্ঘ দাবদাহের পর হঠাৎ কালবৈশাখী ও বজ্রপাতের তাণ্ডবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে বন্দর নগর চট্টগ্রামের জনজীবন। সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টার পর প্রবল বেগে শুরু হয় বর্ষণ। সঙ্গে কালবৈশাখীর ঝড়। বজ্রপাত ও ঝোড়ো হাওয়ায় অন্ধকার নেমে আসে পুরো শহরে।
মুষলধারে বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে জনজীবন। এরমধ্যে কোথাও কোথাও ভেঙে পড়ে গাছপালা। নগরের জাকির হোসেন রোডে ভেঙে পড়ে বৈদ্যুতিক খুঁটি, ট্রান্সফরমার ও গাছপালা। এতে এম ই এস কলেজ মোড় থেকে জিইসি মোড়ের যান চলাচলে কিছুটা বিঘ্ন ঘটেছে। গাছপালা ভেঙেছে স্টেডিয়াম সড়ক, জামালখানসহ নগরের বিভিন্ন এলাকায়। বৈদ্যুতিক খুঁটি ও গাছপালা সরাতে এখনো একযোগে কাজ করছে বিদ্যুৎ বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
মাত্র ঘণ্টাখানেকের বৃষ্টিতে নগরের নিম্নাঞ্চলে সৃষ্টি হয়েছে জলজট। কর্মব্যস্ত দিন শেষে এমন বৃষ্টিতে নগরবাসী স্বস্তি পেলেও বিপাকে পড়েন পথচারী ও কর্মজীবী মানুষ। অনেকে বৃষ্টি থামার জন্য ঘণ্টাব্যাপী রাস্তার ধারে অপেক্ষা করেন।
নগরের ইপিজেড, সল্টগোলা, বন্দর, নিমতলা, বারিক বিল্ডিং, আগ্রাবাদ, চৌমুহনী, দেওয়ানহাট, জিইসি, ২ নম্বর গেট, মুরাদপুর, নতুন ব্রিজ, চকবাজার, কাপাসগোলা, পাঁচলাইশ, প্রবর্তক মোড়, শুলকবহর, কাতালগঞ্জ, মির্জাপুল, ডিসি রোড, তিন পুলের মাথা, আগ্রাবাদ কমার্স কলেজ এলাকা, চকবাজার, বহদ্দারহাট এলাকায় সড়ক ডুবে যায়।
কোথাও কোথাও হাঁটুসমান পানি জমে ছিল। পানি নামতে নামতেই সন্ধ্যা হয়ে যায়। দুই থেকে তিন ঘণ্টা ধরে পানি জমে থাকে এসব এলাকায়। ফলে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েন অফিসফেরত কর্মজীবী, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। আবার অনেক এলাকায় পরিবহনসংকট দেখা দেয়। এই সুযোগে বাড়তি ভাড়া আদায় করে নেয় চালকেরা।
গত বছর বর্ষার মৌসুমে অন্তত ১৩ বার ডুবেছিল চট্টগ্রাম নগর। এর মধ্যে অন্তত দুই দফায় টানা চার থেকে পাঁচ দিন পর্যন্ত পানি জমেছিল নগরের বিভিন্ন এলাকায়।
বলা যেতে পারে হঠাৎ ভারী বৃষ্টিপাতে কিছু করার থাকে না। কিন্তু এই অজুহাত এখন আর চলে না। কারণ বৈশাখ মাসে কালবৈশাখী হানা দেবে, এমন ঝড়তুফান হতে পারে সেটা বোঝার জন্য আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ হওয়ারও প্রয়োজন পড়ে না। এটা খুব সাধারণ একটি বিষয়। এমন আগাম সতর্কতা হিসেবে যদি নালা ও খালগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা হতো তাহলে ঘণ্টাখানেকের বৃষ্টিতে এমন জলাবদ্ধতা হতো না। এমন বৃষ্টি আগেও হয়েছে এমনকি এর চেয়ে বেশিই হয়েছে অতীতে কিন্তু এখনকার মতো সে সময় জলাবদ্ধতা হয়নি। এর জন্য দায়ী আসলে সেবাদানকারী সংস্থাগুলো। এরা তৎপর হলে, আন্তরিকভাবে কাজ করলে জনগণকে এমন দুর্ভোগে পড়তে হতো না। নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য তিনটি সংস্থা চারটি প্রকল্প বাস্তবায়িত করছে। এসব প্রকল্পের কাজ চলছে ৭ থেকে ১০ বছর ধরে। এর পরও মৌসুমের প্রথম ভারী ধর্ষণে জলাবদ্ধতা হওয়ায় মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে ।
মতামত