ওয়াসার কর্ণফুলি পানি সরবরাহ প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়
ওয়াসার দৈনিক উৎপাদন ৫০ কোটি লিটারে উন্নীত হবে
২০৩৫ সাল পর্যন্ত নগরীতে পানির সঙ্কট থাকবে না
ভূঁইয়া নজরুল :
মুজিববর্ষের উপহার দিতে এক বছর আগেই শেষ করা হচ্ছে চট্টগ্রাম ওয়াসার কর্ণফুলি পানি সরবরাহ প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপের কাজ। আগামী ১৭ মার্চ এই প্রকল্পটি উদ্বোধনের জন্য কাজ চলছে পুরোদমে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে দৈনিক ১৪ কোটি ৩০ লিটার পানি পাওয়া যাবে এবং চট্টগ্রাম ওয়াসাও দৈনিক উৎপাদন ৫০ কোটি লিটারে উন্নীত করতে পারবে। আর তা করা গেলে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত নগরীতে আর পানির সঙ্কট থাকবে না।
চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ গত শনিবার পতেঙ্গা বুস্টার স্টেশন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কর্ণফুলি পানি সরবরাহ প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের উদ্বোধনের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘মুজিববর্ষের উপহারস্বরুপ আগামী ১৭ মার্চ দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পটি উদ্বোধন করা হবে। এতে নগরবাসী আরো ১৪ কোটি লিটার পানি পাবে এবং ওয়াসার দৈনিক মোট উৎপাদন বেড়ে ৫০ কোটি লিটারে উন্নীত হবে।’
সরেজমিনে গতকাল রোববার সকালে প্রকল্প এলাকা রাঙ্গুনিয়ার পোমরায় গিয়ে দেখা যায়, পুরোদমে শ্রমিকরা কাজ করছেন। প্রথম পর্যায়ের পাশের খালি জায়গায় নির্মিত হওয়া দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পের ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের কাজ প্রায় শেষের পথে। কর্ণফুলি নদীর রাঙ্গুনিয়ার গোডাউন ব্রিজ পয়েন্ট থেকে পানি এসে যেখানে জমা হবে সেই রিসিভিং পয়েন্ট প্রস্তুত হয়ে গেছে। রিসিভিং পয়েন্ট থেকে পানি পরিশোধনের জন্য ফিল্টার বেডের বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করবে। সেই ধাপগুলোর কাজও শেষ। এসব ধাপ থেকে পানি পরিশোধন হয়ে ক্লোরিন ইউনিটে গিয়ে জমা হবে এবং সেখান থেকে রিজার্ভারে। সব কিছুর কাজই সম্পন্ন। একইসাথে পানি পরিবহনের জন্য ছয়টি হাইলিফট পাম্প বসানোর কাজও শেষ।
কিন্তু প্রকল্প এলাকা ঘুরে ইনটেক থেকে পানি আসার পর প্রি সেডিমেন্ট বেসিন কোথায় তা দেখা যায়নি। এসময় সাথে থাকা সাইট ইঞ্জিনিয়ার সাইদুল ইসলাম জানান, ‘প্রথম পর্যায়ে তৈরি করা প্রি সেডিমেন্ট বেসিন প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের জন্য ব্যবহৃত হবে। এভাবেই প্রকল্পের ডিজাইন করা হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, প্ল্যান্টের দক্ষিণ অংশে পানিতে থাকা স্ল্যাজগুলো সংগ্রহ করে তা শুকিয়ে কেক তৈরি করা হবে। প্রকল্পের আওতায় তাও নির্মাণ প্রায় শেষ পর্যায়ে।
কিন্তু এখনো প্রকল্পের ভেতরের আনুসঙ্গিক অনেক কাজ বাকি থাকার পরও তা কি ১৭ মার্চ উদ্বোধন করা যাবে এমন প্রশ্নের জবাবে অপর সাইট ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ কামরুল বলেন, ‘প্রকল্পে পানি পরিশোধন অংশে কোনো কাজ বাকি নেই। আমাদের সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ। এখন ফিনিশিং কাজ চলছে। তবে কিছু রাস্তাঘাটসহ অন্যান্য কাজ বাকি রয়েছে। সেগুলোর কারণে পানি উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হবে না।’
কিন্তু ২০১৩ সালের আগস্ট একনেকে অনুমোদন পাওয়া কর্ণফুিল পানি সরবরাহ প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের জুন মাসে। প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে আগামী বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত। মেয়াদের এক বছর আগেই প্রকল্পের কাজ কীভাবে শেষ করলেন এমন প্রশ্নের জবাবে প্রকল্পের পরিচালক ও ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, ‘করোনাকালেও আমাদের কাজ চলমান ছিল। এজন্য ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের কাজটি শেষ করা সম্ভব হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় আরো দুটি ( ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন) কম্পোনেন্ট রয়েছে। এগুলোর মধ্যে শুধু ডিস্ট্রিবিউশন লাইনের কাজটি বাকি রয়েছে। তা শেষ করতে আরো সময় লাগবে।’
জানা যায়, ৪ হাজার ৪৮৯ কোটি ১৫ লাখ টাকার প্রকল্পে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) দিচ্ছে ২৮০০ কোটি ৯২ লাখ, বাংলাদেশ সরকার ১ হাজার ৬৬৫ কোটি ১৬ লাখ এবং ওয়াসা দিচ্ছে ২৩ কোটি ৭ লাখ টাকা। এই প্রকল্পের আওতায় ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট ছাড়াও ৩ দশমিক ৬ কিলোমিটার কনভেন্স পাইপলাইন, ৩১৭ কিলোমিটার ট্রান্সমিশন লাইন, ৭০০ কিলোমিটার ডিস্ট্রিবিউশন পাইপলাইন, দুটি সার্জ ট্যাঙ্ক, ৫৯টি ডিএমএ নির্মাণ, ২ কোটি ৪৮ লাখ লিটার ধারণক্ষমতার জলাধার নির্মাণ এবং ৩০ লাখ লিটার ধারণক্ষমতার একটি সুউচ্চ জলাধার নির্মাণ কাজ রয়েছে।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম ওয়াসা বর্তমানে মোহরা পানি সরবরাহ প্রকল্প থেকে দৈনিক ৯ কোটি লিটার, কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্পের প্রথম পর্যায় থেকে দৈনিক ১৪ কোটি লিটার, মদুনাঘাট পানি সরবরাহ প্রকল্প থেকে দৈনিক ৯ কোটি লিটার এবং ৪৮টি গভীর নলকূপের মাধ্যমে ৪ কোটি লিটারসহ সর্বমোট ৩৬ কোটি লিটার পানি উৎপাদন করছে। কর্ণফুিল পানি সরবরাহ প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায় থেকে আরো ১৪ কোটি লিটার উৎপাদিত হলে সবমিলিয়ে উৎপাদন ৫০ কোটি লিটারে উন্নীত হবে। অপরদিকে আগামী বছর কর্ণফুলির ওপারে বোয়ালখালীর ভান্ডালজুড়ি থেকে দৈনিক ৬ কোটি লিটার পানি উৎপাদন হওয়ার কথা রয়েছে।