এস এস পাওয়ার
এপ্রিলে সরবরাহ হবে ৫৬০ মেগাওয়াট
নিজস্ব প্রতিবেদক
বিদ্যুৎ সংকটকালে জাতীয় পাওয়ার গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে এস এস পাওয়ার। প্রাথমিকভাবে এপ্রিলের শুরুর দিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে ৫৬০ মেগাওয়াট। পরবর্তীতে এ প্ল্যান্ট পুরোপুরি চালু হলে জাতীয় পাওয়ার গ্রিডে যোগ হবে ১৩২০ মেগাওয়াট। যা সম্পূর্ণ উৎপাদন খরচেই সরকার পাবে ২৫ বছর।
এস এস পাওয়ার নামের বাঁশখালী উপজেলার গণ্ডামারা ইউনিয়নে নবনির্মিত কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, বঙ্গোপসাগরের কূলে ৬০৬ একর জায়গাজুড়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত এ এলাকা। যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও চীন থেকে আনা ভারী যন্ত্রপাতি দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে এ কয়লাবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। সমুদ্রের উপকূলে তৈরি করা হয়েছে একটি জেটি। জেটি ভেড়ানোর জায়গাটি ১০ মিটার গভীর করতে চালু রয়েছে একটি ড্রেজার। জেটি থেকে বেল্টের স্লোপের মাধ্যমে কয়লা চলে যাবে দুটি শেডে। সেখান থেকে বড় পাইপ দিয়ে কয়লা চলে যাবে বয়লারে। একইভাবে বয়লারে আনা হবে সমুদ্রের পানি। যা সমুদ্র থেকে তোলার পর নিষ্ক্রিয় (ডিস্টিল) করতে তৈরি করা হয়েছে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট। জ্বলন্ত কয়লার তাপে পানি বাষ্প হয়ে চলে যাবে টারবাইনে। বয়লারের দুপাশে বসানো হয়েছে দুটি করে টারবাইন ও জেনারেটর। জেনারেটর থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ সরাসরি চলে যাবে জাতীয় পাওয়ার গ্রিডে। অন্যদিকে কয়লা পোড়ানো ছাইগুলো (ফ্লাই অ্যাশ) বিক্রির জন্য চলে যাবে কয়লা আসা সেই জেটিতে।
প্রতিষ্ঠানটির মেকানিক্যাল বিভাগের ডেপুটি ম্যানেজার রশিদ উল হাসান সুপ্রভাতকে বলেন, ‘১৫ মার্চ কয়লা আনা হবে। পরীক্ষামূলক কাজের জন্য প্রথম লটে আনা হবে ২০ হাজার মেট্রিক টন এবং এরপরেই আসবে ২ লাখ মেট্রিক টন কয়লা। এগুলো প্রথমে ইন্দোনেশিয়া থেকে পরে অস্ট্রেলিয়া থেকে আসবে। কমার্শিয়াল অপারেটিং ডেট (সিওডি) অনুসারে সরকারকে ৩১ মে থেকে অফিশিয়ালি বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। এর আগে মার্চ থেকে পরীক্ষামূলক শুরু হলে এপ্রিলের শুরুর দিকে ৫৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে।’
গতকাল রোববার এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বীর বিক্রম। প্ল্যান্ট পরিদর্শন শেষে তিনি নিয়ন্ত্রণ কক্ষেও যান। সেখানে তাকে দেখানো হয় প্রতিটি ধাপের কাজ একটি কক্ষ থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।
এস আলম গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সামাদ লাবু বলেন, ‘আমরা এখন সম্পূর্ণভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত। আগামী মার্চে দুটি ধাপে কয়লা আসবে। প্রথম ধাপে ২০ হাজার মেট্রিক টন ও দ্বিতীয় ধাপে ২ লাখ মেট্রিক টন ইন্দোনেশিয়া থেকে আসবে। কয়লা এলে আমরা কমিশনিংয়ে (পরীক্ষামূলক উৎপাদন) যাবো। তখন জাতীয় পাওয়ার গ্রিডের মদুনাঘাট কেন্দ্রে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। এছাড়া মাতারবাড়ি কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে জাতীয় পাওয়ার গ্রিডে যে বিদ্যুৎ যুক্ত হবে তাও এখানে সুইচিং করা হবে।’
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক কমপ্লায়েন্স মেনে এ প্ল্যান্ট করা হয়েছে। অন্যথায় আমরা আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে ঋণ পেতাম না। এরপরও প্ল্যান্ট চালু হলে দেখবেন এখানে কোনো ছাই বা আবর্জনা থাকবে না। আমাদের দুটি প্ল্যান্টের জন্য যে চিমনি তৈরি করা হয়েছে তার উচ্চতা ২৭৫ মিটার। পরিবেশ দূষণের কোনো সুযোগ থাকবে না।
বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, বেসরকারি খাতে এমন একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তোলা অনেক সাহসের ব্যাপার। এস আলম গ্রুপ দেশের জন্য যে সাহস দেখিয়েছে তার জন্য তাদের অভিনন্দন জানাচ্ছি। বিদ্যুতের এই সংকটে আগামী রমজান বা গ্রীষ্মকালীন সময়ে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র পুরোদমে চালু করা যায় তাহলে লোডশেডিং তা অনেকাংশ কমে যাবে।
তিনি বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে আমাদের খেসারত দিতে হচ্ছে। যুদ্ধের কারণে সারাবিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে আছে। যার কারণে সবকিছু দাম বাড়ছে। সরকার বিদ্যুৎ ও গ্যাসে যে ভর্তুকি দিয়ে আসছে তা আর দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, যার কারণে দাম সমন্বয় করা হচ্ছে। তবে যুদ্ধ শেষ হলেই সব কিছুর দাম আবার কমে যাবে এবং যতদিন এই যুদ্ধটা শেষ হবে না ততদিন আমাদের গ্যাস ও বিদ্যুৎ খাতে সাশ্রয়ী হতে হবে।
প্রসঙ্গত, ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে এই এসএস পাওয়ার প্ল্যান্টটি এস আলম গ্রুপের ৬টি প্রতিষ্ঠান (ইকুইটির ৭০ শতাংশ), চীনের এসইপিসিও ইলেকট্রিক পাওয়ার কনস্ট্রাকশন করপোরেশন, এইচটিজি ডেভেলপমেন্ট গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেডের যৌথ উদ্যোগে এ প্ল্যান্ট নির্মাণ করা হয়েছে। এ প্ল্যান্টে বসানো দুইটি টারবাইনের প্রতিটির বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৬৬০ মেগাওয়াট। পুরোপুরি চালু হলে প্রতি ঘণ্টায় একটি ইউনিটে কয়লা লাগবে ২৯০ মেট্রিকটন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হাবীবুর রহমান, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. মাহাবুবর রহমান, পিজিসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম কিবরিয়া, বিদ্যুৎ বিভাগ পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মো. হোসেন, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা পিএস মুক্তাদির আজিজ, পিএস টু সচিব (উপসচিব) এরাদুল হক, খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপসচিব সাইফুল ইসলাম আজাদ, ডেপুটি প্রকল্প পরিদর্শক ও ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড সাইড প্রজেক্ট ম্যানেজার ফয়জুর রহমান, ফাইনান্স্যিয়াল অফিসার (সিএফও) মো. এবাদত হোসেন ভুইয়্যা, এস আলম গ্রুপের ভাইস-চেয়ারম্যান আবদুস সামাদ লাভু, এস আলম গ্রুপের পরিচালক শহীদুল ইসলাম, এসএস পাওয়ার প্লান্ট প্রজেক্টের প্রকল্প পরিচালক দীপংকর মজুমদার, ডেপুটি প্রকল্প পরিচালক (মেকানিক্যাল) মোস্তাফিজুর রহমান, বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইদুজ্জামান চৌধুরী, এস আলম গ্রুপের ভূসম্পদ বিভাগের প্রধান মোস্তান বিল্লাহ আদিল, এসএস পাওয়ার প্লান্টের সমন্বয়কারী ফারুখ আহমদ প্রমুখ।




















































