চট্টগ্রামের উন্নয়নের স্বার্থে, ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক স্বার্থে ইগো ছাড়তে হবে বলে মন্তব্য করেন চসিক মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। গতকাল রোববার টাইগারপাস চসিক কার্যালয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এসমেকের যৌথ উদ্যাগে চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা ও যানজট সমস্যা নিরসন, পর্যটন শিল্প গড়ে তোলাসহ মহানগরের সৌন্দর্যবর্ধন বিষয়ে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন তিনি।
মেয়র আরও বলেন, চট্টগ্রামের উন্নয়নের স্বার্থে আমি সবার কাছে যাই, ইগো দেখাই না। চট্টগ্রামকে নান্দনিক নগরী গড়তে রেলওয়ে, সিডিএসহ সব সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি।
মেয়র বলেন, নগরীতে ৩৮টি ফুটওভার ব্রিজ করা হবে। ট্রাফিক বিভাগের সঙ্গে এ বিষয়ে পরামর্শ নেওয়া হবে, যাতে ফুটওভার ব্রিজগুলো সর্বোচ্চ নাগরিক সুবিধা দেয়। যানজট কমাতে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং ঠেকাতে পে পার্কিং চালু করা হবে। অনেকগুলো বহুতল বাড়ি ও মার্কেটে পার্কিং এর ব্যবস্থা নেই, এ পরিস্থিতি নিরসনে জরিমানা করতে হবে।
তিনি বলেন, কাতালগঞ্জে গণপূর্তের একটি পতিত ভূমিতে মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধের আখড়া ছিল। সেটা গণপূর্ত আমাদের দিয়েছে, সেখানে আমরা ওয়ার্কওয়ে, ব্যয়ামাগারসহ সৌন্দর্যবর্ধন কাজ করেছি। এছাড়া সামুুদ্রিক সৌন্দর্যকে কাজে লাগাতে ওশান এমিউজম্যান্ট পার্ক গড়ার উদ্যোগ নিয়েছি। প্রস্তাবটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
বর্তমানে শিশু-কিশোরদের খেলার মাঠের খুবই অভাব, এজন্য চান্দগাঁওয়ে স্পোটর্সজোন গড়ার পাশাপাশি প্রত্যেক ওয়ার্ডে পতিত ভূমিতে খেলার মাঠ গড়ার উদ্যোগ নিয়েছি। বাটালি হিলে চট্টগ্রাম ওয়াচ টাওয়ার করার প্রস্তাব ঢাকায় পাঠিয়েছি। রেলমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে জানিয়েছি জোড়ঢেবা, ইউরোপিয়ান ক্লাবসহ রেলের অধীনে অনেকগুলো ঐতিহাসিক স্থাপনা ও ওয়াটার বডি রয়েছে। ওই ভূমির মালিকানা দেয়া হলে চসিকের নিজস্ব অর্থায়নে বিনোদনকেন্দ্র গড়ে তোলা হবে।
এসমেক বাংলাদেশের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মোহাম্মদ এ সবুর বলেন, ফিরিঙ্গী বাজার থেকে কালুরঘাট ব্রিজ পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের পার্ক ও ইকো পার্ক, নদীর তীরে পর্যটন সুবিধাদি নির্মাণ, নাইট মার্কেট, চট্টগ্রাম আই ক্যাবল কার, ওয়াটার ট্যাক্সি সার্ভিস ইত্যাদির মাধ্যমে চট্টগ্রাম শহরকে একটি দৃষ্টিনন্দন ঝলমলে শহরে পরিণত করা যায়।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মানের ৪-৫টি মেগা মল নির্মাণের মাধ্যমে চট্টগ্রামকে একটি আন্তর্জাতিক মানের শহরে রূপান্তরিত করা যায়। আগ্রাবাদ ডেবাসহ শহরের সমস্ত প্রধান জলাশয়কে সবুজ পার্ক, ওয়াকওয়ে, ওয়াটার ফ্রন্ট ডাইনিং পানির ফোয়ারা ইত্যাদির মাধ্যমে সুন্দর করা যায়। চট্টগ্রাম মহানগরের খালগুলোকে যাত্রী-মালবাহী নৌকার চলাচলের জন্য শহরের মধ্যে ১৫০ কিলোমিটার খাল সংস্কার ও এর ব্যবহারকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। খালের উভয় পাশে সাইকেল রাস্তা, হাঁটার রাস্তা, সবুজায়ন পরিষেবা এবং শহরের আরও ভাল ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা সময়ের দাবি। নগরীতে নির্বিঘেœ পরিবহন চলাচলের বিষয়ে ট্রাফিক ব্যবস্থায় প্রয়েজনীয় শৃঙ্খলা আনতে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ অতীব জরুরি।
শহরের জন্য মাঝারি ও দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পের জন্য একটি নির্দিষ্ট ট্রাফিক মডেলের উপর ভিত্তি করে পরিবহন ও ট্রাফিক ব্যবস্থাাপনা পরিকল্পনাসহ সমন্বিত মাস্টার প্ল্যান তৈরি করা দরকার। মাস্টার প্ল্যানে কিছু প্রকল্প বিবেচনা করার প্রস্তাব দেন যার মধ্যে রেলস্টেশন ও বাস স্টেশন শহরের বহিসীমানায় স্থানান্তর করা এবং মেট্রো, বাস ও ট্যাক্সির রেলওয়ের স্টেশন সাথে সংযুক্ত করা যায়।
তিনি শহরের জলাবদ্ধতার বিষয়ে মাইক ১১, মাইক আরবান এবং মাইক ২১ মডেল পুনঃস্থাপন করে এর প্রয়োগে ড্রেনেজ মাস্টার প্ল্যান আপডেট করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন।
এসমেক এর ডিরেক্টর অব আর্কিটেকচার আনন্দ এস লোরেম্বাম, (বি আর্চ) শহরের সৌন্দর্যবর্ধন বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। এসমেকের প্রধান ডিজাইনার, পরিবহন বিভাগ সুজয় সুজাতারন, মহানগরের ট্রাফিক সমস্যা সমাধানের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন। চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডি ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম ফজলুল্লাহ সিভিক সেন্স বৃদ্ধির জন্য স্কুলপর্যায়ে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালুর পরামর্শ দেন। চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম নগরীতে চসিকের চলমান উন্নয়নযজ্ঞ তুলে ধরেন।
সভায় বক্তব্য রাখেন আইইবি চট্টগ্রামের সাবেক চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ হারুন, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ এর অতিরিক্ত কমিশনার কৃত্তিমান চাকমা, আইইবি চট্টগ্রামের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আবদুর রশীদ, চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি ওমর হাজ্জাজ, রেলওয়ে চট্টগ্রাম পূর্বাঞ্চলের এস্টেট অফিসার সুজন চৌধুরী, এলজিইডি’র সুপারিন্ডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার মো. মাহবুব হোসেন, সিডিএ’র মাস্টার প্ল্যান পরামর্শক মো. নুরুল হাসান। বিজ্ঞপ্তি