তৈয়বুর রহমান »
বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ, অনেক স্বপ্ন নিয়ে এ দেশের জন্ম। বর্তমানে ১৭ কোটির ওপর সাহসী জনগণের বাংলাদেশ। আয়তন মাত্র ৫৬,০০০ বর্গমাইল। অল্পতেই সন্তুষ্ট, সুখি ও পরিশ্রমী জাতি হিসাবে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশ সফলভাবে প্রতিষ্ঠিত। যোগাযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য , তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষিক্ষেত্রে আমাদের রাষ্ট্র সফলতার স্বাক্ষর রেখেছে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি বিবেচনায় বাংলাদেশ একটি রোল মডেল। আমি এখন একটি স্বপ্নের, একটি আন্দোলনের কথা বলবো।
সাল ১৯৯৬, বাংলার রাজনৈতিক পরিস্থিতি ছিলো টালমাটাল। মসনদে স্বৈরাচারী, অনৈতিক সরকার। জনতা অনৈতিক সরকারের দখলমুক্ত করতে চারদিকে চলছে লাগাতার কর্মসূচি ভিত্তিক গণআন্দোলন। অনেক তাজা রক্তের বিনিময়ে ১৯৯৬ সালের এপ্রিলে জনতার এ আন্দোলন সফল হয়েছে। স্বৈরাচারী সরকার নতি স্বীকার করলো। গঠিত হলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ঘোষণা হলো জুন’১৯৯৬ নির্বাচন। একটি কালো অধ্যায়ের অবসান। হরতালের সময় সকালে অথবা সন্ধ্যায় দক্ষিণ বাকলিয়ার একমাত্র সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন “সাহিত্য কুটির” কার্যালয়ে বসতাম, যা মিয়াখান নগরস্থ ইছাহাকের পুলের পশ্চিমে অবস্থিত। “সাহিত্য কুটির” ছিলো সাহিত্য এবং সংস্কৃতিপ্রেমীদের নির্মল আড্ডার জায়গা। একটি সুন্দর পাঠাগার। এ পাঠাগারে ছিলো শত শত বই। বইগুলোর বেশিরভাগ ছিলো মুক্তিযুদ্ধ, সাহিত্য, নাটক, গল্পভিত্তিক। “সাহিত্য কুটির” প্রতিষ্ঠা করার পিছনে যাদের অবদান উল্ল্যেখযোগ্য তারা হলেন জনাব ফযলুল হক খান ফযু (বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর), পূর্ব বাকলিয়ার আলহাজ্ব মোহাম্মদ সেকান্দর চেয়ারম্যান, নুর হোসেন কমিশনার, এস. এম ফারুক (স্কুল শিক্ষক) প্রয়াত আবদুল হক, বিকম (শিক্ষানুরাগী) এবং আমি নিজে।
“সাহিত্য কুটির” দক্ষিণ বাকলিয়া এলাকায় খুব অল্পসময়ে জনগণের প্রশংসা কুড়াতে সমর্থ হয়েছিল। কিন্তু বিধি বাম, সাহিত্য কুটিরের এ অগ্রযাত্রা একটি কুচক্রী গোষ্ঠী অগ্রসর হতে দিলোনা।
এবার আসা যাক উত্তরণ পর্বে। তখন সময় ১৯৯৬ এর এপ্রিল মাস। সাহিত্য কুটিরের অপমৃত্যু হলেও আমরা সমমনাদের কয়েকজন সকালসন্ধ্যা নিয়মিত আড্ডায় বসতাম এবং অনগ্রসর বৃহত্তর বাকলিয়ায় নতুন উদ্যমে কিছু করা যায় কিনা তা নিয়ে মতবিনিময় করতাম। তখনি সবার মনে একটি বিষয় এলো, তা হলো সমবায় ভিত্তিক কিছু করা। অর্থাৎ একটি সমবায় সমিতি সংগঠিত করা যায় কিনা ? বাংলাদেশ সমবায় কনসেপ্টটি সুখকর নয়, তারপরেও সমমনাদের দৃঢ় সিদ্ধান্ত, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে পথ দেখাবার জন্য এবং সমাজকে সচেতন করার লক্ষে একটি সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠা করতেই হবে। সবার আগ্রহে আমার মস্তিষ্কেও তাগিদ অনুভূত হলো একটা কিছু করতে হবে। প্রেরণা পেয়েছি সেই ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে। তখন আমি এসএসসি পরীক্ষার্থী, কিন্তু পাক হানাদার সরকারের অধীনে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করিনি কারণ পাক সরকারের প্রতি আমার ঘৃণা। চারিদিকে যুদ্ধ, ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আসা মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা আক্রমণে হানাদার বাহিনী দিশেহারা। আমাদের পরিচিত অনেক গেরিলা যোদ্ধাকে আমরা আমাদের বাড়িতে (মিয়াখাঁন নগরস্থ, হাজী মঞ্জিলে) আশ্রয় দিয়েছি। এই আশ্রয়ের খবর রাজাকার বাহিনীর কর্ণগোচর হয়। ডিসেম্বর’৭১ এর প্রথম দিকে এক রাতে পাক হানাদার বাহিনী আমাদের বাড়ির চারিদিক ঘেরাও করে আমাকে সহ আরো ৩ জনকে গ্রেফতার করলো। আমাদেরকে রাখা হলো সার্কিট হাউজে পাকহানাদারদের রসদখানায়। গ্রেফতারের পর থেকে আমাদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে তারা আমাদের পঙ্গু করে ফেলে। আল্লাহর ইচ্ছায় ৫/৬ দিন পর আমাদেরকে মুমূর্ষু অবস্থায় চট্টগ্রামের জেলখানায় পাঠিয়ে দেয়।
অতঃপর দেশ স্বাধীন হলো ১৬ ডিসেম্বর ’১৯৭১। মুক্তিযোদ্ধা সেনানীরা পাক হানাদারদের পরাজিত করলো। আমরা জেল থেকে বের হলাম। জেলের বন্দি জীবন থেকেই শপথ নিলাম, যতদিন বাঁচবো পিছিয়েপড়া এ সমাজ ব্যবস্থা তথা দেশের কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করবো। আমি মনে করি, আমার প্রতিজ্ঞা থেকে বিচ্যুতি হইনি। মুক্তিযুদ্ধের পরপরই বাকলিয়ার যুবসমাজকে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করলাম চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী ক্রীড়া সংগঠন “মুক্তি ক্লাব”। মুক্তি ক্লাবের নিজস্ব কার্যালয় ছিল চরচাক্তাই বহুমুখি উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে। যে বিদ্যালয়ের বিশাল মাঠ ব্যবহার করে “মুক্তি ক্লাব” প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো, সে বিদ্যালয়ের ইতিহাস একটু লিখে যেতে চাই কারণ চর চাক্তাই বহুমুখি উচ্চ বিদ্যালয় এবং মাঠ ও মুক্তিযুদ্ধ একই সুত্রে গাঁথা।
দেশ স্বাধীন হলো। বৃহত্তর বাকলিয়ায় যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তেমন প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিলো না। দক্ষিণ বাকলিয়ায় তো ছিলোই না । যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে চর চাক্তাই এক বিশাল জায়গা অবাঙালিরা ফেলে চলে যায়। যার আয়তন প্রায় ১৫ কানি। সরকারি ঘোষণায় পরিত্যক্ত এবং শত্রুসম্পত্তি। বাকলিয়ার কৃতি সন্তান, বঙ্গবন্ধু আদর্শের শ্রেষ্ঠ সৈনিক, আওয়ামী লীগ নেতা বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা কলামিস্ট শেখ ইদ্রিচ আলম সবাইকে নিয়ে সিদ্ধান্ত নিলেন, এ বিশাল জায়গার মালিক হবে বাকলিয়ার জনগণ। প্রতিষ্ঠিত হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, খেলারমাঠ। সিদ্ধান্তের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু সরকার থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার অনুমতি লাভ করেন এবং প্রতিষ্ঠিত হয় ১) চর চাক্তাই বহুমুখি উচ্চ বিদ্যালয় ২) চর চাক্তাই প্রাইমারি স্কুল ৩) ইউসেপ স্কুল ৪) বাকলিয়া মহিলা কলেজ (প্রস্তাবিত)।
পরবর্তীতে এ বিশাল সম্পত্তি নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে, ইদ্রিচ আলম বাকলিয়ার জনগণকে নিয়ে তা প্রতিহত করেছেন। আমার সৌভাগ্য হয়েছে দীর্ঘদিন এসব প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পরিষদের সদস্য হিসাবে সেবা দেয়ার। আমাকে এ সুযোগ করে দিয়েছেন ইদ্রিচ দা। এ মহান নেতার কাছ থেকে ব্যক্তিগতভাবে অনেক কিছু শিখেছি। বর্তমানে উক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন অধিগ্রহণ করাতে বাকলিয়ার জনগণ স্বস্তির নিঃশ্বাস নিচ্ছে। ইদ্রিচ আলমের মৃত্যুর পর আবারো ষড়যন্ত্র হয়েছে এ বিশাল জায়গা গ্রাস করার জন্য। কিন্তু “চর চাক্তাই উচ্চ বিদ্যালয় কলেজ ও মাঠ রক্ষা কমিটি” নামে বাকলিয়ার জনসাধারণকে নিয়ে আমরা আন্দোলন শুরু করি। স্কুল, কলেজ, মাঠ রক্ষা কমিটির সভাপতি ছিলেন বাকলিয়ার সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নুর মোহাম্মদ, সাধারণ সম্পাদক তৈয়বুর রহমান (আমি নিজে)। সফল এ আন্দোলনে রাতদিন পরিশ্রম করে যারা জড়িত ছিলেন তারা হলেন এস. এম. ফারুক (হাই স্কুলের শিক্ষক) জোবায়ের আলম (প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক) প্রয়াত মহিম উদ্দিন মহিম ( ল’ কলেজের ভিপি) ইফতেখার আলম জাহেদ ( শেখ ইদ্রিচ আলমের সন্তান, আওয়ামী লীগ নেতা ) মোহাম্মদ মোস্তাফিজ বিকম এবং আরো অনেক। এই বিশাল মাঠ এবং স্কুলের পাশে “মুক্তি ক্লাব” এর নিজস্ব কার্যালয় । বৃহত্তর বাকলিয়ার তৎকালীন সময়ে এ ক্লাব সামাজিক এবং বিশেষ করে ক্রীড়াক্ষেত্রে সাড়া জাগাতে সমর্থ হয়। চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থায় নিবন্ধিত ক্লাব হিসাবে বিভিন্ন ক্রীড়ায় অংশগ্রহণ করে বাকলিয়াবাসীর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে অবদান রাখে। সত্তর দশকে মুক্তি ক্লাবের দায়িত্ব ছিলো সাবেক কাউন্সিলর জনাব ফযলুল হক খান ফযু, সাধারণ সম্পাদক এস এম ফারুকের ওপর। ৮০’র দশকে এসে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তৈয়বুর রহমান। ৯০ দশকে এসে “মুক্তি ক্লাব” এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় “বাকলিয়া ক্রীড়া চক্র”। আর আজ “বাকলিয়া ক্রীড়াচক্র” বাকলিয়ায় নেই। মাফিয়া চক্রের নিয়ন্ত্রণে কেন চলে গেল ? এর জবাব চায় বাকলিয়াবাসী ।
উত্তরণের স্মৃতিকথা লিখতে গিয়ে অনেকে পুরানো স্মৃতির উল্লেখ করলাম । এখন ফিরে আসা যাক “ দক্ষিণ বাকলিয়া উত্তরণ বহুমুখি সমবায় সমিতি লি. এর জন্মের ইতিহাস প্রসঙ্গে।” মূলত উত্তরণ সমবায় সমিতির জন্মের উদ্দেশ্য ছিল সমবায় ভিত্তিক যৌথ প্রচেষ্টায় ব্যবসায়িক বিবেচনায়, অর্থনৈতিকভাবে সংগঠনকে শক্তিশালী এবং পাশাপাশি সামাজিকভাবে জনগণকে সমবায়ে সম্পৃক্ত করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করা। সমবায় ভিত্তিক এ সমিতি সংগঠিত করতে আমরা সমমনা কয়েকজন ১৯৯৬ সালের মার্চ এবং এপ্রিল মাসে কয়েকটি বৈঠক করেছি সমিতির নাম, আদর্শ, উদ্দেশ্য নির্ধারণ করতে । যেহেতু সমবায় ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান, অবশ্যই সমাজকল্যাণ দপ্তর থেকে নিবন্ধিত হতে হবে। গঠনতন্ত্র, আদর্শ, উদ্দেশ্য প্রণয়নে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছেন এস. এম. ফারুক , আবদুল হক বিকম (প্রয়াত), মাহবুবুল আলম (বাদিয়ার বাড়ি) শেখ দিদার উদ্দিন, সেলিম চৌধুরী। পরিশেষে ১৯৯৬ সনে ২২ এপ্রিল সবার আন্তরিক সহযোগিতায় নাম চূড়ান্ত হয় “দক্ষিণ বাকলিয়া উত্তরণ বহুমুখি সমবায় সমিতি লি.”। প্রাথমিক কাজ শেষ হওয়ার পর শুরু হয় উদ্যোক্তা, শেয়ার হোল্ডার সদস্য সংগ্রহ এবং বাছাই প্রক্রিয়া।অত্যন্ত কঠিন এ পর্বে আমাদের ইস্পাত কঠিন সিদ্ধান্ত ছিলো কোন প্রকারেই চেতনাবিরোধী, কুচক্রি বা সমবায়ের মর্মার্থের ওপর যাদের সাধারণ জ্ঞান নেই তাদের সমিতিতে অন্তর্ভুক্ত না করা। সদস্যগণকে হতে হবে শিক্ষিত, আধুনিকমনস্ক। আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলতে পারি সদস্য নির্বাচনে আমরা সফল হয়েছি। তা না হলে ২৫ বছর পূর্তিতে আজকে এ নিবন্ধ লিখতে পারতাম না।
প্রথমিকভাবে শেয়ার হোল্ডার সংগ্রহ ও বাছাইয়ের পর আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৯৬ সনের ২৪ মে “দক্ষিণ বাকলিয়া উত্তরণ বহুমুখী সমবায় সমিতি লি.” জন্ম লাভ করে। জন্মের পরেই শেয়ার হোল্ডারদের সভায় তৈয়বুর রহমানকে সভাপতি , এসএম ফারুককে সাধারণ সম্পাদক এবং আবদুল হক বিকম (প্রয়াত ) কে কোষাধ্যক্ষ করে ১১ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়। যার মেয়াদ ২ বৎসর। উত্তরণের যাত্রা শুরু হলো। শুরু হলো দক্ষিণ বাকলিয়ায় সমবায় আন্দোলনের প্রথম যাত্রা। আমাদের উদ্দেশ্য ছিলো বাকলিয়া এলাকার অসচ্ছল জনগোষ্ঠীকে সমিতির পক্ষ থেকে লোন দিয়ে সহায়তা করা এবং আয় রোজগারের পথ সুগম করা।
উত্তরণ সমিতির প্রথম প্রকল্পের নাম ছিলো নতুন তৈরি রিকশা প্রকল্প। সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয় অত্র এলাকার নতুন রিকশা তৈরি করে গ্যারেজ মালিকদের মাঝে কিস্তি ভিত্তিক ন্যূনতম লাভে ‘রিকশা লোন’ চালু করা। রিকশা প্রকল্পের মাধ্যমে ১৯৯৬ সালের ১১ জুন সমিতির সমবায় ভিত্তিক প্রকল্প শুরু হয়। উত্তরণ সমিতির অন্যান্য প্রকল্পের মধ্যে ব্যবসায়ীদের আর্থিক সহায়তা, অবিবাহিত গরিব মেয়েদের পিতামাতাকে সহায়তা, শিক্ষাপ্রসারে গরিব ছাত্রদের আর্থিকভাবে সহযোগিতা, ক্রীড়া প্রসারে ক্রীড়া সংগঠনগুলোকে সহযোগিতা করা ইত্যাদি। এসব সামাজিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করে ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত উত্তরণ সমবায় সমিতি অর্থনৈতিকভাবে ভালো অবস্থানে পৌঁছে যায়।
সিদ্ধান্ত হলো সমিতির নিজস্ব কার্যালয়ের প্রয়োজন। সেই কার্যালয় হবে নিজস্ব খরিদকৃত ভূমির উপর। আমাদের বাকলিয়া এলাকার সমাজকর্মী, আমার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মী আজিজুর রহমান (প্রজাপতি আজিজ) এর মধ্যস্থতায় মিয়াখান নগর মেইন রোডস্থ ইছাকের পুলের পশ্চিমে আমরা সমিতির জন্য একটি সুন্দর জায়গা ১৯৯৭ সনের অক্টোবরে ভূমি অফিসে রেজিস্ট্রির মাধ্যমে মালিকানা লাভ করি। ১৯৯৮ এর নভেম্বর থেকে শুরু করে ১৮ মাসে ৩ (তিন) তলা দালানের কাজ সম্পন্ন হয়। কনস্ট্রাকসন কাজে যারা অমানুষিক পরিশ্রম করেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন সাধারণ সম্পাদক এসএম ফারুক, সহযোগিতা করেছেন আবুল মনসুর আহমদ , সেলিম চৌধুরী, আবু তৈয়ব, ইলিয়াছ খান, সালাউদ্দিন খান রেজা, আলহাজ্ব মোহাম্মদ সিদ্দিক, মাইনুল আলম খান, মো. ইকবাল ( ডা. ইকবাল নামে পরিচিত), শেখ দিদার উদ্দিন, মো. সেলিম খোকন প্রমুখ। আমার দায়িত্ব ছিলো সবাইকে উৎসাহ দেয়া।
উত্তরণ পরিবার মহা খুশি, আনন্দিত, গর্বিত সবার পরিশ্রম সফল হয়েছে। বৃহত্তর বাকলিয়ার একটি সমবায় সমিতি সফলভাবে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে গেছে। নিজস্ব আয়ের লক্ষে অফিস স্পেস রেখে বাকি ফ্লোরগুলি ভাড়া দেয়ার সিদ্ধান্ত হয় এবং অগ্রাধিকার দেওয়া হয় শিক্ষাকে। একটি কিন্ডার গার্টেন স্কুল প্রতিষ্ঠার লক্ষে নতুন প্রজন্মের কয়েকজন যুবক প্রস্তাব করলে সমিতির সিদ্ধান্তে ৩ (তিন) তলা ভবন কিন্ডার গার্টেন কর্তৃপক্ষকে ভাড়া দেয়া হয়। ৭(সাত) বছর পর ২০০৭ সালে কিন্ডার গার্টেন স্কুলের চাহিদা মতো ৪(চতুর্থ) তলা দালানের কাজ সম্পন্ন করা হয়। আমি নিজেকে একজন সমাজকর্মী হিসাবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। আমি কৃতজ্ঞ বৃহত্তর বাকলিয়ার জনসাধারণের কাছে, যে কোন অনুষ্ঠানে ( শিক্ষামূলক, ক্রীড়া, ধর্মীয়, সমাজ উন্নয়নে) আমাকে স্মরণ করার জন্য। রাজনৈতিক দলের নেতা, সাংসদ, মন্ত্রীদের অবহেলার কারণে বৃহত্তর বাকলিয়া (১৭, ১৮, ১৯নম্বর ওয়ার্ড) আজ চট্টগ্রামের অন্যান্য ওয়ার্ড থেকে পিছিয়ে আছে। কর্ণফুলী নদীর নিত্যদিনের সাথী এ বৃহত্তর বাকলিয়া। সরকার, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দীর্ঘদিন বিমাতাসুলভ আচরণ করেছে এ বাকলিয়াবাসীর সাথে। দীর্ঘদিন পর সামরিক বাহিনীর সহযোগিতায় বাকলিয়ার জলাবদ্ধতার দুঃস্বপ্ন অবসানের চেষ্টা চলছে। আমরা অপেক্ষা করবো ঐ দিনটির জন্য যে দিন বৃহত্তর বাকলিয়াবাসীর স্বপ্ন দৃশ্যমান হবে দেখবে বিত্তবানেরা আর বাকলিয়া ছেড়ে যাবে না, বাকলিয়ায় ছোট ছোট শিল্প গড়ে উঠবে, সুন্দর আবাসন প্রকল্প হতে, আরো স্কুল, কলেজ (মহিলা ও পুরুষ), প্রতিষ্ঠিত হবে। সমাজের ক্রান্তিকালে উন্নতির সোপানে পৌঁছাতে সমবায় ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলা একান্ত জরুরি।
নতুন প্রজন্মের মধ্যে যদি আমরা সমবায় ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থার লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য তুলে ধরতে পারি তাহলে মহল্লা, ওয়ার্ড, জেলা, বিভাগ, এবং দেশ অবশ্যই এগিয়ে যাবে। সমবায়ের ভিত্তি হলো বন্ধুত্ব, ঐক্য, উন্নয়ন, স্বাবলম্বী সর্বোপরি একটি আন্দোলন।
“দক্ষিণ বাকলিয়া উত্তরণ বহুমুখী সমবায় সমিতি লি. ”সংগঠিত করতে গিয়ে সমবায় আন্দোলনের বিশেষত্ব অনুধাবন করেছি। আজ ২৫ বৎসর পূর্তিতে উত্তরণ সমবায় সমিতির সফলতায় আমরা গর্বিত । আমরা বিশ্বাস করি দেশের প্রতিটি অঞ্চলে সরকারের সহায়তায় দেশ উন্নয়নে সমবায় সমিতি গড়ে উঠবে। বাংলাদেশ এবং ১৭ কোটি জনতার মুখে হাসি ফোটাবে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে, এ প্রার্থনা সরকার এবং সৃষ্টিকর্তার কাছে।
লেখক : সভাপতি,
উত্তরণ বহুমুখী সমবায় সমিতি লি.