বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও’র-২০২৩ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্তদের (৩০-৭৯ বছর বয়সি) অর্ধেকই (৫৫ শতাংশ পুরুষ, ৪৬ শতাংশ নারী) জানে না যে তাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। উচ্চ রক্তচাপ দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) ভবনে গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) আয়োজিত ‘বাংলাদেশে উচ্চ রক্তচাপ পরিস্থিতি ও করণীয়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এমন বিপজ্জনক তথ্য তুলে ধরা হয়।
সভায় জানান হয়, বাংলাদেশে প্রতি চারজন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে একজন উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে। হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যানসার, কিডনি রোগ, শ্বাসতন্ত্রের রোগ ও ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন অসংক্রামক রোগের অন্যতম প্রধান ঝুঁকি উচ্চ রক্তচাপ।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০২২ সালে প্রতি পাঁচজনে একজন বা জনসংখ্যার ২১ শতাংশ উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ছিল। কিন্তু নতুন পরিসংখ্যানে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে প্রায় ২৪ শতাংশ। আর সরকার নিবন্ধিত রোগীর সংখ্যা দেড় লাখের ওপরে। বাকিরা সরকারি চিকিৎসার বাইরে।
ডব্লিউএইচও’র গ্লোবাল রিপোর্ট অন হাইপারটেনশন-২০২৩ এর তথ্য অনুযায়ী ২০১৯ সালে বাংলাদেশে ২ লাখ ৭৩ হাজার মানুষ হৃদরোগজনিত অসুস্থতায় মৃত্যুবরণ করেছে, যার ৫৪ শতাংশের জন্য দায়ী উচ্চ রক্তচাপ। বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর ৭০ শতাংশের জন্য অসংক্রামক রোগ দায়ী হলেও এসব রোগ মোকাবেলায় অর্থ বরাদ্দের পরিমাণ খুবই সামান্য, মোট স্বাস্থ্য বাজেটের মাত্র ৪ দশমিক ২ শতাংশ।
দেশে উচ্চ রক্তচাপ আক্রান্তদের মধ্যে ৩৮ শতাংশ রোগী চিকিৎসাসেবা নিয়ে থাকে। নিয়মিত ওষুধ সেবনের মাধ্যমে রোগটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছে মাত্র ১৫ শতাংশ অর্থাৎ প্রতি ৭ জনে ১ জন। বাকি ৮৫ শতাংশ রোগী উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছে।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সরকার বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও দেশব্যাপী নিরবচ্ছিন্ন ওষুধ সরবরাহের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেবল উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেই অসংক্রামক রোগজনিত অকালমৃত্যু অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ প্রদানের পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
এক্ষেত্রে আশার কথা শুনিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ারের লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. কাইয়ুম তালুকদার। তিনি বলেন, ‘আমরা পর্যায়ক্রমে দেশের সব উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্স ও কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করছি। এই কর্মসূচি সফলভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপ ও অসংক্রামক রোগের প্রকোপ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।
আমরা আশা করি আগামী বাজেটে সরকার স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ দেওয়ার সময় এই প্রয়োজনীয় বিষয়টি যেন ভুলে না যায়।
এ মুহূর্তের সংবাদ