রফিক উদ্দিন বাবুল, উখিয়া :
উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রায় ১৫ লাখ রোহিঙ্গার বসবাস। এসব ক্যাম্পের অধিকাংশ এলাকায় স্বাস্থ্য বিধি মানা হয়নি। ঘনবসতি, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ব্যাপক আকারে করোনা আক্রান্ত না হলেও ইতিমধ্যেই ৫৯ জন রোহিঙ্গা আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এরমধ্যে ১৩ জন সুস’ হয়ে উঠলেও ৭ জন রোহিঙ্গা মারা গেছে বলে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মাহবুবুর রহমান তালুকদার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। তিনি আরও জানান, রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্যসেবার জন্য রয়েছে ১৫টি বড় ফিল্ড হাসপাতাল এবং ১২০টি হেলথ পয়েন্টে ইতিপূর্ব থেকে রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্য সেবার কাজ চলছে। তবে রোহিঙ্গাদের অজ্ঞতার কারণে তারা পুরোপরি স্বাস্থ্য সুবিধা গ্রহণ করতে পারেনি। যে কারণে ৭ জন রোহিঙ্গা মারা গেছে। করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত রোহিঙ্গাদের অনেকেই বয়োবৃদ্ধ ও শ্বাসকষ্ট জনিত রোগে আক্রান্ত ছিল দীর্ঘদিন থেকে।
করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর এসব ক্যাম্পে যাতে এর প্রভাব না পড়ে, সে জন্য শুরু থেকে স্বাস্থ্য সংস্থা বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বলে জানিয়েছেন, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মাহবুবুর রহমান তালুকদার। তিনি বলেন, করোনা যাতে মহামারী আকার ধারণ করতে না পারে সেজন্য রোহিঙ্গাদের ৩৪টি ক্যাম্প লকডাউন করে স্বাস্থ্য সেবার ব্যাপক সফলতা এসেছে। যে কারণে মৃত্যুর হার অতি নগন্য। ভবিষ্যতে যাতে করোনা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেব্যাপারে বিভিন্ন এনজিও পরিচালিত স্বাস্থ্য সংস্থা কাজ করছে।
কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের প্রধান স্বাস্থ্য সমন্বয়কারী ডা. আবু তোহা জানান, সর্বশেষ উখিয়া উপজেলার বালুখালী ১১ নম্বর শরণার্থী ক্যাম্পের বস্নক সি ৭-এর বাসিন্দা ৭০ বছরের এক বৃদ্ধ রোহিঙ্গা গত ১২ জুলাই জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পের আইওএম পরিচালিত আইসোলেটেড হাসপাতালে ভর্তি হন। ওই দিনই তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীড়্গার জন্য কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজের পিপিআর ল্যাবে পাঠানো হয়। ১৩ জুলাই তার করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে। ১৪ জুলাই বিকালে তিনি মারা যান। এই কর্মকর্তা আরও জানান, এই বৃদ্ধসহ উখিয়া ও টেকনাফ শরণার্থী ক্যাম্পে করোনায় আক্রান্ত হয়ে আরও ৬ রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে। তাদের সবার বয়স ৬০ বছরের ওপরে। করোনায় প্রথম রোহিঙ্গা মৃত্যুর ঘটনা ঘটে গত ৩০ মে। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের অতিরিক্ত কমিশনার শামসুদ্দোজা নয়ন বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য ৪শ’ বেডের একটি অত্যাধুনিক আইসোলেশন সেন্টার ও আরও ৫০০ আইসোলেশন বেড প্রস’তির কাজ চলছে।
কুতুপালং রেজিস্ট্রার্ড রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চেয়ারম্যান হাফেজ জালাল জানান, সরকারের উদারতা, ক্যাম্পে কর্মরত বিভিন্ন দাতা সংস্থার আন্তরিকতার কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে করোনা তেমন কোন দৃশ্যমান আক্রমণাত্মক সুবিধা করতে পারেনি। রোহিঙ্গারা মোটামুটি আগের যেকোন সময়ের তুলনায় সর্বড়্গেত্রে ভাল আছে।
টেকনাফের নয়াপাড়া লেদা ক্যাম্পের বাসিন্দা আবুল কাশেম বলেন, মিয়ানমারে কোনোদিন আমরা ওষুধ দেখতে পাইনি। এখানে এসে অসুখ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ পাচ্ছি।
কক্সবাজারের সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, গতকাল পর্যন্ত জেলায় মোট করোনায় আক্রান্ত রোহিঙ্গাসহ ৩০৮৩ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ৭ রোহিঙ্গাসহ ৪৯ জনের। এ পর্যন্ত সুস’ হয়েছে ১৯০০রও বেশি।