রফিক উদ্দিন বাবুল, উখিয়া :
মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের কারণে উখিয়া-টেকনাফে পান চাষের কিছুটা ক্ষয়ক্ষতি হলেও নানা প্রতিকূলতার মাধ্যমে কৃষকরা তা কাটিয়ে উঠেছে। তবে পানের বরজের জন্য জায়গা, উপকরণ সংকটের কারণে আগের মতো পান চাষে তেমন সুবিধা করতে পারছে না কৃষকেরা। এছাড়া রোহিঙ্গা স্থানীয়দের বিপুল চাহিদার কারণে বাজারে পানের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। যে কারণে বাড়ির আনাচে কানাছে পরিত্যক্ত জায়গায় পান চাষ করার জন্য কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে। পানের উৎপাদনও বেড়েছে দ্বিগুণ। চলতি মৌসুমে স্থানীয় চাহিদা পূরণের পরও প্রায় ২০ কোটি টাকার পান বিভিন্ন হাটবাজারে বিক্রি হয়েছে বলে পান বেপারিরা জানান।
উখিয়ার সোনারপাড়া গ্রামের পানচাষি নজু মিয়া জানায়, পান চাষে অন্যান্য তরিতরকারি চেয়ে অধিকতর যতœ করতে হয়।
তিনি জানান, পান চাষ ফুল চাষের মতো। যত যতœ করবেন তত আয় হবে। চলতি মৌসুমে পানের বরজ থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা আয় হয়েছে। পাশাপাশি পানের চারা বিক্রি করে পেয়েছে আরো ৪০ হাজার টাকা।
স্থানীয় পানচাষি নজু মিয়া, মির আহমদ ও অলি বকসু জানায়, আগে পান চাষে এত কদর ছিল না। যেহেতু পান চাষে উপকরণ সংকট সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভয়ে অনেকেই পান চাষ করেনি। বর্তমানে পান চাষিরা ধারাবাহিক লাভবান হওয়ার সুবাদে পান চাষে মানুষের আগ্রহ বেড়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উখিয়ায় সাড়ে ৪শ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়েছে। তৎমধ্যে উপকূলীয় এলাকা জালিয়াপালং ইউনিয়নের প্রায় ৩শ’ একর পানের বরজে পান উৎপাদন হয়েছে।
উখিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রসেনজিৎ তালুকদার সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, উখিয়া টেকনাফে যেসব পান উৎপাদন হয়ে থাকে এসব পানের একাংশ রপ্তানিযোগ্য।
তিনি বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অন্য কোন রোগ বালাইয়ে আক্রান্ত না হলে প্রতি অর্থ বছরে উখিয়া টেকনাফ থেকে ৫০ কোটি টাকার পান উৎপাদন সম্ভব। তিনি বলেন, এলাকার অধিকাংশ পানচাষি কৃষক সরকারি বনভূমির পাহাড়ি পরিত্যক্ত এলাকায় পুঁজি বিনিয়োগ করে পান চাষ করে আসছে। এসব চাষিদের সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া হলে পান চাষ করে দরিদ্র পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আসার সম্ভাবনা ছিল। তিনি আরো বলেন, দু’ উপজেলায় প্রায় ৫ হাজারেরও অধিক পান চাষের সাথে জড়িত। বর্তমানে রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের চাহিদা বৃদ্ধির কারণে পানের মূল্য অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। যা কমে আসার কোন সম্ভাবনা নেই।
কোর্টবাজারের পাইকারি পান ব্যবসায়ী নজু মিয়া ও ছিদ্দিক আহমদের সাথে আলাপ হলে তারা জানান, উখিয়ার সোনারপাড়া, কোর্টবাজার, মরিচ্যা, উখিয়া সদর, বালুখালী ও পালংখালী থেকে প্রতি সপ্তাহে লাখ লাখ টাকার পানের চালান শহরের বিভিন্ন আড়তদারে যাচ্ছে। আড়তদার ব্যবসায়ীরা এসব পান প্রক্রিয়াজাত করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চালান করছে। তারা বলেন, এখানে উন্নতমানের রপ্তানিযোগ্য পান উৎপাদনে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে পান রপ্তাননি খাতে সরকার প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে সক্ষম হবে।