ইলিশে পাওয়া গেল মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা

সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ইলিশে পাওয়া গেছে মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা। শুধু তা-ই নয়, ইলিশের শরীরে ক্যাডমিয়াম, সিসা, পারদ ও আর্সেনিকের মতো ভারী ধাতুর অস্তিত্বও পাওয়া গেছে। গবেষণা প্রতিবেদনটি গত এপ্রিলে প্রকাশিত হয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক খ্যাতনামা বিজ্ঞান সাময়িকী ওয়াটার, এয়ার সয়েল পলিউশন–এ। গবেষণাটি করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অ্যাকুয়াটিক জুওলজি রিসার্চ গ্রুপ এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের একদল বিজ্ঞানী।
গবেষণায় দেখা গেছে, ইলিশের অন্ত্রে, যকৃতে, এমনকি পেশিতেও পাওয়া গেছে ৫ মিলিমিটারের চেয়েও ছোট প্লাস্টিক কণা, যেগুলোকে বলা হয় মাইক্রোপ্লাস্টিক। এই কণা প্লাস্টিক ব্যাগ, বোতল, সিনথেটিক কাপড়, টায়ার কিংবা কসমেটিকস থেকে এসে পড়ে নদী ও সাগরে। সেখান থেকেই তা গিলে ফেলে মাছ।

গবেষণাটি হয়েছে মূলত মেঘনা নদীর মোহনায়। চাঁদপুরের হাইমচর, লক্ষ্মীপুরের আলেকজান্ডার ও রামগতি, ভোলার দৌলতখান ও তজুমদ্দিন এবং নোয়াখালীর হাতিয়া এলাকা থেকে ইলিশের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলের এই এলাকা দেশের অন্যতম উৎপাদনশীল জলজ প্রতিবেশব্যবস্থা হিসেবে বিবেচিত। ইলিশের জন্য এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিচরণ ও প্রজননক্ষেত্র। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে ইলিশের উৎপাদনের মাত্র ২ শতাংশ আসে পদ্মা থেকে। তা–ও সেগুলো আকৃতিতে ছোট হয়। বড় ও স্বাদের ইলিশের বেশির ভাগই পাওয়া যায় মেঘনা অববাহিকায়।

বাংলাদেশে ২০০৫ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে প্লাস্টিক উৎপাদন প্রায় ১৬৯ শতাংশ বেড়েছে, যা বৈশ্বিক গড় উৎপাদন বৃদ্ধির (২৫ শতাংশ) চেয়েও বেশি। উপকূলীয় অঞ্চলে মাইক্রোপ্লাস্টিকের আধিক্য মাছ ধরার নৌকা, পণ্যবাহী জাহাজ ও গৃহস্থালি বর্জ্য নিষ্কাশনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এই এলাকায় ধরা মাছ বেশি মাইক্রোপ্লাস্টিক গ্রহণ করে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আবদুস সালাম দীর্ঘদিন ধরে মাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে কাজ করছেন। তিনি বলেন, গবেষণায় যে সামান্য পরিমাণ নমুনায় এত সংখ্যায় মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে, তা সত্যিই ভাবনার বিষয়। প্লাস্টিক একটি যৌগ। এটি তাপ পেলে এর সঙ্গে থাকা নানা উপাদান ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে। প্লাস্টিকে থাকা ‘বিসফেনল এ’ (বিপিএ), থ্যালেট, পলিস্টাইরিন জাতীয় উপাদানগুলো হরমোন ভারসাম্য নষ্ট করে, ক্যানসার ডেকে আনে, এমনকি শরীরের কোষের জেনেটিক গঠনও বদলে দেয়।
ইলিশ শুধু স্বাদের জন্য বিখ্যাত নয়, এর রয়েছে অনন্য খাদ্যগুণ। দেশের অর্থনীতিতেও ইলিশের বিশাল অবদান আছে। সে ইলিশে মানবশরীরের জন্য ক্ষতিকর প্লাস্টিকের উপস্থিতি অত্যন্ত বিপজ্জনক। সে সঙ্গে আরেকটি বিষয়ও ভাববার আছে তা হলো, ইলিশ নিয়ে গবেষণা হয়েছে বলে তার শরীরে ক্ষতিকর মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতির খবর জানা গেল। ইলিশ ছাড়াও কতো শতো ধরনের সামুদ্রিক ও নদীর মাছ খাচ্ছি আমরা। গবেষণা করলে সেগুলোতেও নিশ্চয়ই প্লাস্টিকসহ নানা ধরনের ক্ষতিকর পদার্থের উপস্থিতি পাওয়া যাবে।
এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়া জরুরি। এখন এটি শুধু দেশীয় সমস্যা নয়। সামুদ্রিক মাছ যেহেতু সেহেতু বিশ্বের অন্যান্য দেশকেও সতর্ক হওয়ার সময় এসেছে।