কোভিড-১৯ এর প্রভাবে মানুষের জীবন ও জীবিকায় মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ কর্মহীন হয়ে ঘরে বসে আছে। কর্মহীন এসব মানুষের মধ্যে ৬৫ শতাংশই দিন মজুর। এছাড়া ১২ দশমিক ৭ শতাংশ পরিবহন শ্রমিক, ১১ দশমিক ৭ শতাংশ ছোট ব্যবসায়ী, ৩ দশমিক ৪ শতাংশ গামের্ন্টস শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।
স্থায়ীত্বশীল উন্নয়নের জন্য সংগঠন ইপসা পরিচালিত এক জরিপে উঠে এসেছে এসব তথ্য। গত বৃহস্পতিবার (২৫ জুন) দুপুরে ‘জনজীবনে কোভিড-১৯ এর প্রভাব : আমাদের করণীয়’ শীর্ষক এক মিডিয়া ডায়ালগে এই জরিপের তথ্য তুলে ধরা হয়। ইপসার বাস্তবায়নে এবং একশন এইড বাংলাদেশ এর সহযোগিতায় ডায়ালগটি আয়োজন করে দৈনিক পূর্বকোণ।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।
এছাড়া অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হাসান শাহরিয়ার, জেলা সিভিল সার্জন ডা. শেখ ফজলে রাব্বি, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ আলী, ইপসার প্রধান নির্বাহী মো. আরিফুর রহমান, মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান তাজুল ইসলাম, দৈনিক পূর্বকোণের স্টাফ রিপোর্টার এসএম ইফতেখারুল ইসলাম, ইমাম হোসাইন রাজু, একশন এইডের কোরবান আলী, সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফারজানা পারভীন, এসডিজি ইয়ুথ ফোরামের সভাপতি নোমান উল্লাহ বাহার, ইপসার প্রোগ্রাম অফিসার শোভন চৌধুরী, মিডিয়া ম্যানেজার সৈয়দ মোহন উদ্দিনসহ ইপসার যুব গবেষকরা।
ইপসার উপ-পরিচালক নাছিম বানু শ্যামলীর সঞ্চালনায় আলোচনায় জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন ইপসার প্রোগ্রাম ম্যানেজার ফারহানা ইদ্রিস।
জরিপে তথ্য উপস্থাপন করে তিনি বলেন, নগরীর ১৯ ও ৩৫ নম্বর দুইটি ওয়ার্ডের উপর এই জরিপ পরিচালনা করা হয়। খাদ্য সহায়তা, খাদ্য বন্টনে অনিয়ম, বাজার ব্যবস্থাপনা, পারিবারিক সহিংসতা ও নারী নির্যাতন বেড়ে যাওয়ার চিত্র উঠে এসেছে জরিপে।
জরিপে প্রাপ্ত তথ্য মতে, করোনার প্রভাবে ৫০ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর লেখাপড়া ব্যাহত হচ্ছে। ৪০ দশমিক ৮ শতাংশ কর্মসংস্থানমূখী মানুষ দক্ষতা অর্জনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়ছে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ।
জরিপে এই দুই ওয়ার্ডের অসংখ্য মানুষের থেকে মতামত গ্রহণ করা হয়। মতামত প্রদানকালে ৬৩ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ খাদ্য বা আর্থিক সহায়তা পাওয়ার কথা জানান।
কিন্তু ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ জানান, তাদের এলাকার লোকজন কোন উৎস থেকে খাদ্য সহায়তা পাননি। এছাড়া ৩৭ দশমিক ১ শতাংশ মানুষের দাবি, করোনা দুর্যোগকালীন সময়ে স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রগুলোতে সেবা প্রদানকারীর সংখ্যা কমানো হয়েছে। একই সাথে বাজারগুলোতে মানুষ শারীরিক দুরত্ব বজায় রাখছে না।
জরিপের ফলাফলের ভিত্তিতে আলোচকবৃন্দ বলেন, কোভিড-১৯ মহামারির নেতিবাচক প্রভাব বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশও পড়েছে। এ কারণে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বেকার হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে বেকারত্ব আরও বাড়বে। এর থেকে উত্তরণ করতে হলে প্রয়োজন মানসম্মত কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা। যুবাদের দক্ষতা উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, প্রশিক্ষণ এবং সেবা প্রাপ্তির বিষয়টি কঠোরভাবে মনিটরিংয়ের মাধ্যমে সকল ধরনের প্রয়োজনীয় সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে যুবাদের দক্ষতা উন্নয়নে বাজেট বরাদ্দ রাখাসহ নানা পরামর্শ দেয়া হয় আলোচনায়।
চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন জরিপের প্রশংসা করে বলেন, ‘সেবা কার্যক্রমের জন্য এই ধরনের জরিপ জরুরি। ইপসা সেই গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করেছে। জরিপের যেসব সমস্যা চিহ্নিত হয়েছে তা সমাধান করার লক্ষ্যে তিনি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করবেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কম্পিউটার ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে আরো বেশি জোর দেয়া হবে। একইসাথে সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত ফিরিঙ্গিবাজারস্থ হেলথ ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে দক্ষ স্বাস্থ্য কর্মী গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আরো সুদুরপ্রসারী উদ্যোগ নেয়া হবে। বিজ্ঞপ্তি
মহানগর