জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে পুরস্কার চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো। সৃজনশীল অর্থনীতিতে উদ্যোগের জন্য তরুণদের উৎসাহ দিতে ২ বছর পর পর এই ইউনেস্কো পুরস্কার দেওয়া হবে। জাতিসংঘের কোন সংস্থা বঙ্গবন্ধুর নামে এই প্রথম পুরস্কার চালু করল। এর মাধ্যমে যেমন বঙ্গবন্ধুর প্রতি বিশ্বসংস্থার শ্রদ্ধা প্রদর্শনের বিষয়টি প্রতিভাত হয়েছে তেমনি বাঙালি জাতির জন্য এ সম্মান গৌরবের। বাঙালি জাতির বিজয়ের মাসে এই সম্মান বিপুল তাৎপর্য নিয়ে এসেছে।
রোববার সকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলোচনাকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, পাঁচজন বিচারকম-লী (ইউনেসকো ঠিক করবে) বিজয়ীদের নির্বাচিত করবেন। ২০২১ সালের নভেম্বরে ইউনেসকোর ৪১তম সাধারণ সভা চলাকালীন এই পুরস্কার দেওয়া হবে।
ইউনেসকো ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে বিশ্ব ইতিহাসের ‘ঐতিহাসিক দলিল’ হিসেবে স্বীকৃতি দান করে। একটি জাতির প্রতিষ্ঠা, তাদের স্বাধীনতার আকাক্সক্ষা বাস্তবে রূপ দিতে বঙ্গবন্ধু পর্যায়ক্রমে আন্দোলন সংগ্রামের নেতৃত্ব দেন। পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর অব্যাহত নিপীড়নÑনির্যাতনের বিরুদ্ধে এবং ১৯৭০ সালের নির্বাচনে গণরায় অস্বীকার করে পাকিস্তানের সামরিক সরকার জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত রাখলে ১৯৭১ সালের ঢাকার রেসকোর্স (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ময়দানে ১০ লক্ষাধিক জনতার সামনে আবেগময়ী সে ভাষণে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ও মুক্তির সংগ্রামে অসহযোগ আন্দোলন শুরু করা ও স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রস্তুতির আহ্বান জানান। সেই ভাষণটিকে ইউনেসকো ‘কালজয়ী ভাষণ’ হিসেবে অভিহিত করে ‘মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালি জাতি ৯ মাসের সশস্ত্র সংগ্রামে পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাজিত করে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠন করে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১ বছরের মধ্যেই বঙ্গবন্ধু সংবিধান প্রণয়ন করে ১৯৭৩ সালে সাধারণ নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন। খুব স্বল্প সময়ে যুদ্ধবিধস্ত দেশ পুনর্গঠনে তিনি দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করে রাষ্ট্রনায়কোচিত প্রজ্ঞার স্বাক্ষর রাখেন। তাঁর দূরদর্শী নেতৃত্ব ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়’ এই পররাষ্ট্র নীতির ফলে অল্প সময়ের মধ্যে বিশ্বের অনেক দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে। তিনি ভারত মহাসাগরকে শান্তির এলাকা ঘোষণা করার আহ্বান জানান।
১৯৭৪ সালে পারমাণবিক অস্ত্রের প্রতিযোগিতা হ্রাস, যুদ্ধ সংঘাতের রাজনীতি পরিহার করে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান বঙ্গবন্ধু জাতিসংঘে দেওয়া তাঁর ভাষণে। বঙ্গবন্ধু জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের বিশিষ্ট নেতাদের একজন।
বিশ্বের স্বাধীনতাকামী ও জাতীয় মুক্তির জন্য আন্দোলনরত দেশগুলির সংগ্রামে তিনি দৃঢ় সমর্থন জানান। বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদানের জন্য বিশ্বশান্তি পরিষদ ১৯৭৩ সালে ঢাকায় এক শান্তি সমাবেশে বঙ্গবন্ধুকে ‘জুলিও কুরি’ পদক প্রদান করে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষে তাঁর প্রতি জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠানটি তাঁর নামে পুরস্কার প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্মদানকারী বীর শহীদ এবং বঙ্গবন্ধুর নীতি ও আদর্শের প্রতি মহিমান্বিত স্বীকৃতি হিসেবে প্রতিভাত হবে। এটি জাতির জন্য গৌরবের, সম্মানের।
মতামত সম্পাদকীয়