কোভিড-১৯ এর মারণছোবলে বিশ্বমানবতা পর্যুদস্ত। এই ভয়াবহ ব্যাধির মোকাবিলায় মানুষের মেধা ও কর্মক্ষমতার বৃহৎ অংশই এখন নিবেদিত, এমনটি বেশ জোর দিয়েই বলা যায়। পাশাপাশি উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলো ভুগছে শিল্পোন্নত দেশগুলোর ক্রমাগত কার্বন নির্গমনহেতু জলবায়ু পরিবর্তনের মহাসংকটে। এতে আর্দ্রতা হ্রাস পেয়ে মাটি হারাচ্ছে উর্ববরতাশক্তি।
ফলে বৃক্ষ ও তরুলতার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। কোনো-কোনো ক্ষেত্রে মরুপ্রবণতার বিস্তার হচ্ছে। প্রচ- সূর্যতাপে বৃক্ষরাজির পাতা ম্রিয়মাণ, অতঃপর শুকিয়ে গিয়ে দাবানলের সৃষ্টি হচ্ছে কোথাও-কোথাও। গত কয়েকদির আগে বাংলাদেশের সুন্দরবনের একাংশে এমন ঘটনাই ঘটেছে। এভাবে বিভিন্ন কিসিমের জলবায়ু ও পরিবেশ-প্রতিবেশগত বিপর্যয় আমাদের আগামী প্রজন্মকে কোথায় গিয়ে দাঁড় করাবে, এখন থেকেই তা গভীরভাবে ভাবনার বিষয়। সারাবিশ্ব এবং দেশের অভ্যন্তরে এই আশঙ্কাজনক বাস্তবতার পাশে আরেকটি নতুন উপসর্গ উদ্ভবের খবর এই অঞ্চলের সচেতন মানুষের মনে আতঙ্কের সঞ্চার করেছে। তা হলো, গত বুধবার সুপ্রভাতের প্রথম পৃষ্ঠায় ‘মিরসরাইয়ে বিশুদ্ধ পানির সংকটে সাড়ে ৩ লাখ মানুষ’ শিরোনামে একটি খবর ছাপা হয়। তাতে দেখা যাচ্ছে, মিরসরাই অঞ্চলের নলকূপগুলোতে একদিকে পানি তো উঠছে না, অন্যদিকে নলকূপের পানিতে স্বীকৃতমাত্রার অতিরিক্ত আর্সেনিকের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। এতে উপজেলাটির সাড়ে ৩ লাখ মানুষ পড়েছে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। তারা পরিমাণ মতো বিশুদ্ধ পানি তো পাচ্ছেইন না, উপরন্তু প্রাপ্য বা প্রাপ্তব্য পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি তাদের জীবনধারাকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে ব্যাপকভাবে। এ ব্যাপারে সরকারি দেখভালেও যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী বলেছেন, মিরসরাইয়ের ১৬ ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভার বিভিন্ন গ্রামের নলকূপের পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক রয়েছে। সর্বশেষ ২০০২-২০০৩ সালে ৭৫ হাজার ৩৬৬টি পরিবারের ৩২ হাজার ৪৮০টি সাধারণ নলকূপ পরীক্ষা করে নলকূপের পানিতে গড়ে ৩৯.৭৭ মাত্রায় আর্সেনিক পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১২ হাজার ৮৩৩টি নলকূপের প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলিগ্রামের অধিক মাত্রায় আর্সেনিক রয়েছে। এক সময় নলকূপগুলোতে লালরঙ মাখিয়ে ওসবের পানি পান না করারা জন্য সতর্কবাণী দেয়া হয়েছিল। এই অবস্থায় সরকারের আর্সেনিক শনাক্তকারী টিম মিরসরাইকে আর্সেনিকমুক্ত করতে ১০টি পরিবারের জন্যে ১টি করে গভীর নলকূপ বসানোর পরামর্শ দেয়। অর্থাৎ ৫০জন মানুষের জন্যে একটি গভীর নলকূপ স্থাপন করতে হবে। কিন্তু উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সাড়ে ৩ লাখ মানুষের জন্যে ১৮ বছরে মাত্র ১ হাজার ৫শত ৬১টি গভীর নলকূপ বসেতে সক্ষম হয়েছে।
এ অবস্থায় পানীয় ও ব্যবহার্যজলের সংকটের পাশাপাশি মানুষের উৎকণ্ঠিত জীবনে সমাধানের আশীর্বাদ হয়ে আসতে হবে সরকারকেই। মিরসরাইবাসীর জীবন বিপন্ন হওয়ার এই সংকট সময়ে প্রশাসনসহ সচেতন মানুষের সমবেত অংশগ্রহণে সমস্যার সঠিক ও বাস্তবোচিত সমাধান প্রত্যাশা করি।
মতামত সম্পাদকীয়