নিজস্ব প্রতিবেদক »
গত এক বছরের ব্যবধানে চারবার বাজার অস্থিরতা সৃষ্টি করে পঞ্চম বারের মতো আবারো ডাবল সেঞ্চুরিতে ডিমের বাজার। কেন বা কী কারণে এ অস্থিরতা জানেন না খোদ ব্যবসায়ীরাও। একেক ব্যবসায়ীদের মতামতও ভিন্ন। হঠাৎ ডিমের অস্বাভাবিক দামে ক্রেতারা দুষছেন খুচরা বিক্রেতাদের, আর খুচরা বিক্রেতারা দুষছেন পাইকার ও উৎপাদক সিন্ডিকেটদের কারসাজিকে। বাজার তদারকি প্রতিষ্ঠানের অভিযানেও ভাঙতে পারছে না অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট বাণিজ্য।
গতকাল ডিমের আড়ত, পাইকার ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, পাড়া-মহল্লার দোকানগুলোতে প্রতি ডজন লেয়ার মুরগির (লাল) ডিমের দাম এখন ১৮০-১৯০ টাকা, তাছাড়া উৎপাদক থেকে পাইকারদের কেনা পড়েছে ১৬৫-১৭০ টাকা। তাছাড়া হাঁসের ডিম বিক্রি হচ্ছে ডাবল সেঞ্চুরিতে। প্রতি ডজন ২০০ থেকে ২১০ টাকা বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
এদিকে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাব বলছে, গত এক মাসের ব্যবধানে লেয়ার মুরগির ডিমের দাম বেড়েছে প্রায় ১৪ শতাংশ ও এক বছরের ব্যবধানে ২২ শতাংশ। তবে খুচরা বাজারগুলোতে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দরে বিক্রি হয়েছে ডিম। গত বছর এ দিনে ডিম বিক্রি করা হয়েছিল ডজন ১৩০-১৩৫ টাকা। যা একই বছরের সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত দুই দফা বেড়ে ডাবল সেঞ্চুরি ছাড়িয়ে যায়। আর চলতি বছর মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত দুইবার চড়া হয় ডিমের এ বাজার। এবার চলতি বছরের আগস্টে এসে পঞ্চম বারের উত্তাপ ছড়াচ্ছে ডিমের বাজার।
ক্রেতারা অভিযোগ করে বলেন, মুরগির খাবার, বিদ্যুৎ, পরিবহন খরচ বেড়েছে বলে ব্যবসায়ীরা যেসব ইস্যু বের করে দাম বাড়াচ্ছে, প্রকৃতপক্ষে এসব ব্যবসায়ীদের কৌশল। কারণ যে ডিম গ্রামে উৎপাদন হচ্ছে, তার জন্য বাড়তি কোন খরচ নেই।
ক্রেতাদের সাথে খুচরা ব্যবসায়ীরাও দুষছেন পাইকার ও আড়তদারদের সিন্ডিকেট বাণিজ্যকে। এতে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছেন ক্রেতা ও খুচরা বিক্রেতারা।
বকসিরহাটের ডিম ব্যবসায়ী মো. আলমগীর বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে আড়তদারেরা আমাদের থেকে ডিমের দাম বাড়তি নিচ্ছেন। ফলে ডিম বিক্রি করতে গিয়ে ক্রেতাদের সাথে তর্ক করতে হচ্ছে। হঠাৎ ডিমের এমন ঊর্ধ্বগতির কারণে ভোগান্তির শিকার ক্রেতারা।’
তিনি বলেন, ডিম ব্যবসায়ীরা আমাদের জানান টাঙ্গাইল থেকে উৎপাদকদের থেকে কেনাতে বেশি দাম পড়ছে।’
ডিমের দাম হঠাৎ বাড়ার বিষয়ে জানতে পাহাড়তলী বাজারের আড়তদার জাহিন ষ্টোরের স্বত্বাধিকারী আবু বক্কর জসিম বলেন, ‘বন্যার পানির কারণে উত্তর বঙ্গের যেসব স্থান থেকে ডিম আনা হয়, সেখানে গাড়ি ঢুকে না। যার ফলে ডিমের দাম বেড়ে যায়। এতদিন হাজারে ১২৮০ থেকে ১২৯০ টাকায় বিক্রি হলেও আজকে ১২৫০ টাকা বিক্রি করছি। পানি কমে গেলে ডিমের দাম কমে যাবে। কিছু করার নেই। উৎপাদকরা বাড়াচ্ছে।’
এদিকে উৎপাদন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘এতদিন পোল্ট্রি ও ডিমের চাহিদা কম ছিল। যার ফলে পোল্ট্রির সাথে যুক্ত খরচাদি মেটাতে উৎপাদকরা বড় লোকসানে পড়েছে। কারণ ফিডের দাম বৃদ্ধিসহ উৎপাদন খরচ বাড়লেও সে অনুযায়ী ডিম ও মুরগির দাম পায়নি খামারিরা। যে কারণে স্থায়ীভাবেই গত তিন বছরে ৪০ হাজারের মতো লেয়ার ফার্ম ও ৩০ হাজারের বেশি ব্রয়লার ফার্ম বন্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কমে গেছে। এছাড়া গত কিছুদিনের ব্যাপক গরম ও প্রচ- লোডশেডিংয়ে মুরগির মৃত্যুর হার বেড়েছে। এটাও উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে। ফলে সবকিছু সমন্বয় করে পোল্ট্রির বাজারে দর নিয়ন্ত্রণে রাখতে হিমসিম খেতে হচ্ছে উৎপাদকদের।’
এদিকে ডিমের দাম অস্বাভাবিক বাড়ার কারনে বাজার তদারকিতে মাঠে নেমেছেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। গতকাল শনিবার সকালে পাহাড়তলী ডিমের আড়তে এক অভিযানে মূল্য তালিকা, ভাউচার সংরক্ষণ না করার দায়ে দুই প্রতিষ্ঠানকে ২০ হাজার করে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে।
প্রতিষ্ঠানটির জেলা সহকারী পরিচালক নাসরিন আক্তার বলেন, ‘বাজারের অস্থিরতা ঠেকাতে ভোক্তা অধিকার মাঠে আছে। আজো আমরা অভিযান পরিচালনা করেছি। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।’