আবদার

জুয়েল আশরাফ :

এক ধনীলোক ছিল। সে ছিল বোকা স্বভাবের। তার পরিবারের সবাই ছিল  বোকা। তার অধীনস্থ চাকর-নওকর যারাই আসত বোকা বনে যেত। সেই ধনীলোকের একটি ছোট মেয়ে ছিল। সে তাকে খুব ভালোবাসত। একবার  মেয়েটি অসুস্থ হয়ে পড়ল। অনেক ডাক্তার ডাকা হলো, কিন্তু কেউই তার চিকিৎসা করতে পারল না। কারণ তার রোগ সম্পর্কে জানা যায়নি।

একদিন ধনীলোকটি হতাশ হয়ে মেয়েকে বলল, ‘বুঝতে পারছি না কী করব?  তোমার চিকিৎসার জন্য আমি যেকোনো কিছু করতে ইচ্ছুক।’

একথা শুনে মেয়েটি তাড়াতাড়ি বলল, ‘তাহলে আমার জন্য চাঁদ নিয়ে আসো। আমি যদি চাঁদের সঙ্গে খেলি, আমার স্বাস্থ্য ভালো হবে।

ধনীলোকটি খুশি হয়ে বলল, ‘ঠিক আছে, আমি তোমার জন্য চাঁদ পাওয়ার  ব্যবস্থা করছি’।

ধনীলোকটির অনুগত অনেক যোগ্য ব্যক্তি ছিল। প্রথমে তিনি তার দেহরক্ষীকে   ডেকে মৃদুস্বরে বলল, ‘আমার মেয়ের খেলতে চাঁদ দরকার। যদি চাঁদ আনতে না পারো আজ, তবে তোমার ছয় মাসের বেতন নাই।’

‘চাঁদ’! দেহরক্ষী অবাক হয়ে বলল। সে কপালে ঘামছিল। কিছুক্ষণ পরে সে বলল, ‘আমি পৃথিবীর যেকোনও কোণ থেকে কিছু চাইতে পারি, তবে চাঁদ আনতে আমার অসুবিধা আছে।’

ধনীলোকটি তখনই দেহরক্ষীকে কাজ থেকে ইস্তফা দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলল,  ‘সেক্রেটারিকে আমার কাছে পাঠাও।’

সেক্রেটারি এলে তাকেও চাঁদ আনতে বলল। কিন্তু সেক্রেটারি-কর্মচারীরাও তাদের অক্ষমতা প্রকাশ করল এবং অনেক যুক্তি দিল, শেষ পর্যন্ত বলল, ‘কেউই চাঁদ আনতে পারবে না। চাঁদ এখান থেকে দেড় মিলিয়ন মাইল দূরে।’

ধনীলোকটি সবাইকে চাকরি ছেড়ে চলে যেতে বললেন। তারপরে তিনি তার চিকিৎসককে ডাকলেন। তিনিও সাহায্য করতে পারলেন না।

‘যাও, এখান থেকে যাও!’ ধনীলোকটি চিৎকার করে তাকেও বের করে দিল।

যে যার মতো কাজ ছেড়ে বাড়ি চলে গেল। এই ঘটনা দ্রুত এলাকায় ছড়িয়ে পড়ল। এরপর একজন বাদামবিক্রেতা এসে বলল, ‘আমি পুরো ঘটনা শুনতে চাই। আপনার ব্যাকুলতার কারণ জানতে চাই। আমি অবশ্যই আপনার উপকারে আসব।’

ধনীলোকটি চিৎকার করে বলল, ‘আমার মেয়ে চাঁদ না পাওয়া পযন্ত তার স্বাস্থ্য ভালো হবে না। তুমি কি চাঁদ আনতে পারবে?’

‘হ্যাঁ, কেন পারব না! তবে প্রথমে আমার জানতে হবে যে, আপনার মেয়ে কী রকম চাঁদ চায়। আমি গিয়ে জিজ্ঞাসা করি।’ বাদামবিক্রেতা সোজা মেয়েটির ঘরে গেল।

বাদামবিক্রেতাকে দেখে মেয়েটি জিজ্ঞাসা করল, ‘তুমি কি চাঁদ এনেছ?’

‘এখনও আনিনি। তবে তাড়াতাড়ি নিয়ে আসব।  কত বড় চাঁদ দরকার  তোমার?’

মেয়েটি বলল, ‘আমার গলার হারের সমান, কারণ যখনই আমি চোখ মেলে তাকাব, চাঁদ দেখতে পাব।’

‘ঠিক আছে, আমাকে আরও বলো, চাঁদ কী থেকে তৈরি আর কত ওপরে আনব?’

মেয়েটি বলল, ‘চাঁদ সোনার তৈরি এবং গাছের মতো সমান ওপরে আনবে!’

‘ঠিক আছে, আজ রাতে আমি গাছে উঠব আর আকাশ থেকে চাঁদটি সরিয়ে  নেব।’ বাদামবিক্রেতা বলল এবং ধনীলোকটির কাছে ফিরে এলো খুশি হয়ে।  সে ধনীলোকটিকে বলল, ‘আগামীকালের মধ্যে আমি আপনার মেয়ের জন্য একটি খেলনা চাঁদ আনব।’

বাদামবিক্রেতা তার পরিকল্পনা ধনীলোকটিকে জানাল। ধনীলোকটি এই পরিকল্পনা শুনে খুব খুশি হল। পরের দিন স্বর্ণকার থেকে সোনার চাঁদ বানিয়ে নিয়ে আসা হলো। বাদামবিক্রেতা এই চাঁদ মেয়েটিকে দিল। মেয়েটি খুব খুশি হলো। চাঁদকে একটি সোনার চেইনে রেখে গলায় ঝুলিয়ে দিল। সে সুস্থ হয়ে উঠল। কিন্তু ধনীলোকটি চিন্তিত হলো যে, মেয়ে জানালা থেকে আকাশে চাঁদ  দেখতে পাবে, তখন সে কী বলবে? সে ভাববে যে তার বাবা তাকে একটি মিথ্যা চাঁদ এনে দিয়েছে। বাদামবিক্রেতা বলল, ‘আপনি কোনো চিন্তা করবেন না। দেখেন আমি কী ব্যবস্থা করি।’

রাতে চাঁদ বেরিয়ে এলে মেয়ে তা দেখতে পেল। ধনীলোকটি ও বাদামওয়ালা তার ঘরে দাঁড়িয়েছিল। মেয়েটি বাদামওয়ালাকে অবাক গলায় জিজ্ঞাসা করল, ‘আমার গলার চাঁদ আকাশে কীভাবে বেরিয়ে এলো?’

বাদামওয়ালা হেসে বলল, ‘আরে বোকা মেয়ে। যখন তোমার একটি দাঁত  ভেঙে যায়, তখন অন্য একটি বেরিয়ে আসে। একইভাবে দ্বিতীয় চাঁদও  বেরিয়ে এসেছে।‘

এই শুনে ধনীলোকটি স্বস্তির নিশ্বাস  ফেলল। আর আনন্দে মেয়েটি খেলনা  খেলতে শুরু করল। বাদামওয়াল দশ লাখ টাকা পেল ধনীলোকটির কাছ  থেকে। তার অভাবের সংসারের দুঃখ সামান্য বুদ্ধি দিয়ে দূর করে ফেলল।