সুপ্রভাত ডেস্ক »
বিএনপির আন্দোলনে সরকার কোনো বাধা দেবে না; তবে অতীতের মতো নাশকতা-সহিংসতা করলে ‘উপযুক্ত শিক্ষা’ দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, তারা আন্দোলন করতে চায়, আমরা বাধা দেব না। কিন্তু আন্দোলনের নামে যদি আবারও কোনো রকমের নাশকতা করে, উন্নয়নশীল বাংলাদেশের উন্নয়নের ক্ষতিসাধন করতে চায়, আর্থ-সামজিক ক্ষতিসাধন করতে চায়, তাহলে তাদের উপযুক্ত জবাব বাংলাদেশের জনগণ দেবে। খবর বিডিনিউজ।
বিএনপি-জামায়াতের ২০১৩-২০১৫ সালের নাশকতা ও সহিংসতার কথা উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, তারা অগ্নিসন্ত্রাস করেছিল। তাদের ঘৃণা জানাতে হবে। তারা মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। হত্যা, খুন ও গুম জিয়াউর রহমান শুরু করেছিল। খালেদা জিয়া ও তার কুলাঙ্গার পুত্র মিলে ২১ আগস্ট থেকে শুরু করে এত মানুষ হত্যা করেছে এবং অত্যাচার নির্যাতন করেছে।
আগামীতে যদি একটা মানুষকেও তারা ক্ষতিগ্রস্ত করে, তাহলে যে হাত দিয়ে আগুন দেবে, ওই আগুনে সেই হাত পুড়িয়ে দেওয়া হবে। যে হাতে মানুষ খুন করবে, তাদের উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়া হবে। এই কথাটা যেন সকলের মনে থাকে।
শনিবার দুপুরে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত জাতীয় কমিটি, কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের যৌথসভায় প্রারম্ভিক বক্তব্যে দলের সভাপতি এসব কথা বলেন।
গত ২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের পর টুঙ্গিপাড়ায় প্রথম যৌথসভা অনুষ্ঠিত হলো।
এ সময় বিএনপির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি মাত্র ২৯টি সিট পেয়েছিল। পরে উপ-নির্বাচনে একটা। এটা বোধ হয় আপনাদের মনে থাকে না। এটাই ছিল তাদের শক্তি। সেজন্য তারা কোনো নির্বাচন চায় না, ভিন্ন পথে ক্ষমতায় আসতে চায়।
যে কোনো সংকটেই আওয়ামী লীগ মানুষের পাশে আছে এবং থাকবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতির গতি কেউ যাতে রোধ করতে না পারে, সেজন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলা হবে। বাংলাদেশকে স্মার্ট হিসেবে গড়ে তোলা হবে। বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীও স্মার্ট হবে। আমরা দেশের মানুষের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। বাংলার মানুষের উন্নয়নের জন্য যা যা করা দরকার আওয়ামী লীগ করবে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, তারা (বিএনপি) বলে, আওয়ামী লীগ নাকি দেশের সর্বনাশ করেছে। তাহলে মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন কি তাদের সর্বনাশ করা? এগুলো কি মানুষের ক্ষতিসাধন করা? তাদের জিজ্ঞেস করতে হবে, ক্ষতিটা দেখল কোথায়? একই দিন ১০০ সেতু, ১০০ সড়ক উন্নত ও উদ্বোধন করা কি সর্বনাশ? এগুলো জনগণের কাছে তুলে ধরা উচিত। আমরা আছি জনগণের পাশে আর তারা আছে ধ্বংস করতে।
এই দেশ নিয়ে আর কেউ ছিনিমিনি খেলতে পারবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, আমরা কাউকে দেশ নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেব না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে দেশ চলবে। এই মাটিতে (টুঙ্গিপাড়া) বসে এই প্রতিজ্ঞা নিচ্ছি যে, বাংলাদেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতির গতি কেউ যাতে রোধ করতে না পারে, তার জন্য আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যন্ত প্রতিটি নেতাকর্মী সজাগ থাকবে, দৃঢ থাকবে। যে কোনো অপকর্মের প্রতিরোধ করবে। এই প্রতিজ্ঞা নিয়ে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলবো।
এর আগে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত কমিটির সদস্যরা টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় তিনি কিছুক্ষণ সমাধি সৌধের পাশে নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। পরে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের শহীদ সদস্যদের রুহের মাগফিরাত কামনায় ফাতেহা পাঠ ও বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেন।
প্রধানমন্ত্রী টুঙ্গিপাড়া থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গোপালগঞ্জের ২৭টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং একটি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
শুক্রবার বেলা ১১টায় দুদিনের সফরে গোপালগঞ্জে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সকাল ৮টায় সড়কপথে তিনি ঢাকা থেকে টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশে রওনা দেন। পরে টুঙ্গিপাড়া থেকে তিনি খুলনা যান।
২২তম সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথমবারের মতো টুঙ্গিপাড়া সফরে আসেন শেখ হাসিনা। সফর শেষে তিনি শনিবার বিকালে টুঙ্গিপাড়া থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন।