আনন্দময় শৈশব হোক শিশুদের

একটি সমাজ বা রাষ্ট্র কতটা সভ্য তা স্পষ্ট হয় ওই সমাজ বা রাষ্ট্রে শিশুরা কতটা নিরাপদ সে চিত্র দেখে। যে জাতি যত সভ্য সে জাতি ততই যত্নবান তাদের শিশুদের প্রতি।
এ ক্ষেত্রে আমাদের দেশের চিত্র হতাশাজনক। আমরা শিশুদের প্রতি সদয় ও মানবিক আচরণ করি না। না ঘরে, না বাইরে কোথাও শিশুদের জন্য নিরাপদ ও আনন্দময় জগৎ তৈরি করতে পারিনি। সেটি আরও স্পষ্ট হলো একটি প্রতিবেদন থেকে।
সেখানে বলা হয়েছে, সমাজসেবা অধিদপ্তর পরিচালিত চাইল্ড হেল্পলাইন ১০৯৮-এ গত বছর শিশু নির্যাতনের ঘটনা জানিয়ে সর্বোচ্চসংখ্যক কল এসেছে। এ সংখ্যা ১৫ হাজার ৭৮৫টি, যা ২০২২ সালের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। ২০২২ সালে নম্বরটিতে এ ধরনের অভিযোগ জানিয়ে কল এসেছে ৮ হাজার ২১টি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এ হেল্পলাইন প্রতিষ্ঠার পর থেকে শুধু শিশুর প্রতি সহিংসতা নিয়ে এত বেশিসংখ্যক কল আর কখনো আসেনি। ইউনিসেফ বাংলাদেশের আর্থিক সহায়তায় সমাজসেবা অধিদপ্তরের চাইল্ড সেনসিটিভ সোশ্যাল প্রটেকশন ইন বাংলাদেশ প্রকল্পের (সিএসপিবি) আওতায় চাইল্ড হেল্পলাইন ১০৯৮ পরিচালিত হয়।
চাইল্ড হেল্পলাইন থাকার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে ইউনিসেফের জামিলা আক্তার বলেন, এটা শিশুর জীবন রক্ষাকারী সেবা। কারণ, এ ধরনের সেবার মাধ্যমে একটি অভিযোগের বিরুদ্ধে যখন ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তখন এ ধরনের অপর কয়েকটি ঘটনা প্রতিরোধ হয়। তিনি জানান, ২০২৫ সাল থেকে ১০৯৮ হেল্পলাইনটি সম্পূর্ণভাবে পরিচালনা করবে সরকার। ইউনিসেফ শুধু কারিগরি সহায়তা দেবে। সরকার পরিচালনা শুরুর পর ১০৯৮-এ সেবার পরিসর ও জনবল আরও বাড়বে।
২০১০ সালে বেসরকারি সংস্থা অপরাজেয় বাংলাদেশের সঙ্গে পাইলট প্রকল্প আকারে এবং ২০১৬ সাল থেকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় কার্যক্রম শুরু হয়। ২৪ ঘণ্টায় পালা করে টোল ফ্রি এই নম্বরে আসা কল ধরেন ২৮ জন কল এজেন্ট।
সমাজসেবা অধিদপ্তরে অবস্থিত ১০৯৮ হেল্পলাইন কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালে নম্বরটিতে মোট কল এসেছে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৪১৪টি। মোট কলের মধ্যে বরাবরের মতো বিভিন্ন ধরনের তথ্য চেয়ে সবচেয়ে বেশি কল এসেছে। এ সংখ্যা ১ লাখ ৬৯ হাজারের বেশি।
গত বছর শিশু নির্যাতন-সংক্রান্ত কল ছাড়াও আইনি বিষয়ে ১ হাজার ৬১৩টি, প্রেম-সম্পর্কিত বিষয়ে ১ হাজার ৮৯৩টি, মনোসামাজিক সমস্যা নিয়ে ৮ হাজার ৫২৮টি, শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে ৮ হাজার ৩৯৯টি, স্কুল বিষয়ে ৬ হাজার ২৪৩টি, মাদক ব্যবহার-সংক্রান্ত ৬৩৬টি, ঝুঁকিতে থাকার বিষয়ে ৮ হাজার ২২৯টি, প্র্যাংক বা মজা করার জন্য কল ১৯ হাজার ১৯০টি এবং অন্যান্য কল এসেছে ৮৫ হাজার ৭২৯টি।
এটি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। শিশু নির্যাতনের প্রতিকার চাওয়া ও পাওয়ার ক্ষেত্র এতে প্রসারিত হয়েছে বলা যায়। এখন দরকার এই কার্যক্রমকে সরকারি ব্যবস্থাপনার অধীনে আনা এবং ১০৯৮ হেল্পলাইনটির ব্যাপক প্রচার হওয়া। সে সঙ্গে পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও নানাক্ষেত্রের পরিবেশ যদি শিশুবান্ধব করা যায় তাহলে শিশুদের জন্য আনন্দময় জগৎ তৈরি করা সম্ভব।