আদালতের রায়ে বিএনপি নেতা ডা.শাহাদাত হোসেন সিটি মেয়র

আদালত প্রাঙ্গণে রায় ঘোষণার পর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা.শাহাদাত হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক »

সর্বশেষ অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা.শাহাদাত হোসেনকে জয়ী ঘোষণা করেছেন আদালত। আগামী ১০ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারির জন্যও আদালত সরকারকে নির্দেশ দেন।

মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) দুপুরে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল এবং যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ খাইরুল আমিনের আদালত এই রায় দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদীপক্ষের অ্যাডভোকেট আরশাদ হোসেন আসাদ।

সাড়ে তিন বছর আগে নির্বাচন বাতিল চেয়ে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মহানগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন ২০০৯ তৎসহ নির্বাচন বিধিমালা ২০১০ এর ৫৩ নম্বর বিধি ও ২ নম্বর উপবিধি মোতাবেক মামলাটি দায়ের করেন শাহাদাত।

চট্টগ্রামের প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালত ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল গত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচনের ফলাফল চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা মামলার একতরফা সূত্রে ডিক্রি দিয়েছেন।

২০২১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে নয়জনকে বিবাদী করে মামলাটি করেছিলেন নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী নগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন।

মামলার নয়জন বিবাদী হলেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরী, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনের সচিব, চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচনী কর্মকর্তা, সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা, মেয়র প্রার্থী আবুল মনসুর, এম এ মতিন, খোকন চৌধুরী, ওয়াহেদ মুরাদ ও জান্নাতুল ইসলাম।

মামলায় বলা হয়েছে, নির্বাচনী ফলাফল তথা ইভিএমের প্রিন্ট করা (ছাপা) কপি দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু তা দেওয়া হয়নি। হাতে লেখা ফলাফল দেওয়া হয়। এতে বোঝা যায়, নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে। বিবাদীরা পরস্পরের যোগসাজশের মাধ্যমে বিএনপির মেয়র প্রার্থীকে হারিয়ে দিয়েছেন। ভোটের দিন ভোটকেন্দ্র ভোটারের উপস্থিতি না থাকলেও আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীকে বিপুল ভোটে জয়ী দেখানো হয়েছে।

২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরী ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৪৮ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির শাহাদাত হোসেন ৫২ হাজার ৪৮৯ ভোট পান।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ জন। নির্বাচনে ভোট পড়ে মাত্র ২২ দশমিক ৫২ শতাংশ।

ছাত্র–জনতার বিক্ষোভে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তৎকালীন সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর আর কার্যালয়ে আসেননি। মেয়রকে অপসারণ করে ১৯ আগস্ট চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলামকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। এরপর আদালত থেকে মঙ্গলবার (১ অক্টোবর)  নতুন নির্দেশনা এলো।

রায় ঘোষণার পর বিএনপি নেতা-কর্মীরা আদালত প্রাঙ্গণে জড়ো হন। নানা স্লোগান দিয়ে শাহাদাত হোসেনকে মেয়র হিসেবে স্বাগত জানান। প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বিএনপির মেয়র প্রার্থী শাহাদাত হোসেন আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের বলেন, এই রায়ে চট্টগ্রামসহ দেশের ১৮ কোটি মানুষ খুশি হয়েছেন। যাঁরা আওয়ামী দুঃশাসনের আমলে ভোট দিতে পারেননি, এই রায়ে তাঁদেরও জয় হয়েছে।