নিজস্ব প্রতিবেদক »
ডিম ব্যবসায়ীদের ধর্মঘট প্রত্যাহার হওয়ার একদিনের ব্যবধানে নগরের আড়তগুলোতে ডিমের দাম কমতির দিকে। তবে খুচরায় চড়া দাম। এদিকে রোববার রাতে থেকে উত্তরবঙ্গ থেকে ডিম সরবরাহ অনান্য দিনের তুলনায় বেড়েছে। পাশাপাশি ডিমের দামও কমতির দিকে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
ডিমের ব্যবসায়ী ও আড়তদারেরা জানান, প্রশাসন থেকে ১২ টাকায় ডিমের দর নির্ধারণ করে দিলেও ঐ দামে উৎপাদক ও আড়তদারদের পক্ষে বিক্রি সম্ভব হলেও পাইকারি ও খুচরা বাজারে তা সম্ভব না।
কারণ রোববার উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন উৎপাদকরা ডিম বিক্রি করেছে প্রতি পিস ১১ টাকার বেশি। যার ফলে নতুন সরবরাহকৃত ডিম কমদামে বিক্রি করা যাবে না বলে মনে করছেন তারা।
সোমবার দুপুরে বিভিন্ন বাজারে সরেজমিনে দেখা যায়, গত দুদিনের তুলনায় ডিমের যোগান অনেক বেড়েছে। বাজারে পর্যাপ্ত ডিমের যোগানের কারণে পাইকারি বাজারে একদিনের ব্যবধানে কমেছে শ’প্রতি ১০০ থেকে ১২০ টাকা। কিন্তু খুচরা পর্যায়ে এখনও চড়া।
সোমবার পাইকারি বাজারে ডিম বিক্রি হয়েছে শ’প্রতি ১ হাজার ১৫০ টাকায়। সে হিসেবে ডজনপ্রতি বিক্রি হয়েছে ১৩৮ টাকা করে। কিন্তু খুচরায় বিক্রি হয়েছে ডজনপ্রতি ১৬০-১৬৫ টাকায়।
পাইকারি বাজারে কমে আসলেও খুচরায় চড়া দামের বিষয়ে বকক্সির হাটের ডিম ব্যবসায়ী মো. আবুল কালাম বলেন, ‘শনিবার থেকে ডিমের পাইকারি বাজার বন্ধ থাকার কারণে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে আমাদের স্থানীয় ডিম উৎপাদকদের উপর নির্ভর করতে হয়েছে।
চাক্তাই সানজিদা মার্কেটের ডিম ব্যবসায়ী মো. রফিক বলেন, ‘আমি সকালে রাজাখালীর আড়তদার থেকে ডিম কিনেছি ডজন ১৫৫ টাকা যা ৫ টাকা লাভে বিক্রি করছি। আড়তদারেরা কমালে আমরা কমাতে পারবো।’
রেয়াজউদ্দিন বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী মো. জাবের বলেন, ‘ডিমের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে পাহাড়তলী ও উত্তরবঙ্গের ব্যবসায়ীরা। তারা যদি আমাদেরকে কম দামে বিক্রি করে, তাহলে আমরা কমাতে পারছি।’
এদিকে খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিযোগের বিষয়ে পাহাড়তলী বাজারের আড়তদারেরা জানান, তিনদিন উত্তরবঙ্গ থেকে ডিম না কেনাতেই কিছুটা কমতির দিকে ছিল। কিন্তু রোববার রাত ১০টার পর থেকে আড়তদারদের চাহিদা বেড়ে যাওয়াতেই উত্তরবঙ্গের ব্যবসায়ীরা ডিমের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। যার ফলে নতুন সরবরাহকৃত ডিম বাজারে আসলে তার দাম বাড়তির দিকে থাকবে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
চট্টগ্রাম ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শুক্কুর বলেন, ‘আজকের (সোমবার) আড়তে ডিম বিক্রি হয়েছে শ’প্রতি ১ হাজার ১৫০ টাকা। যা আমাদের পরিবহন খরচসহ কেনা ছিল ১ হাজার ১২০ টাকা। কিন্তু আজকে উত্তরবঙ্গের উৎপাদকেরা বিক্রি করছে খরচসহ ১ হাজার ১৪০ টাকার উপরে। আগামী সপ্তাহে বাড়ার আরও সম্ভাবনা রয়েছে বলে তারা আমাদের জানান।’
পাহাড়তলী বাজারের আরেক ডিমের আড়তদার বলেন, ‘ডিমের দামে কারসাজি করছে উত্তরবঙ্গের ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। তারা একটু চাহিদা ভালো দেখলেই ডিমের দাম বাড়িয়ে দেয়। মূলত ডিমের বাজারটি নিয়ন্ত্রণ করছে তারা। প্রশাসনের বিষয়টি ভাবা প্রয়োজন।’
এদিকে ডিমের দামের কারসাজি নগরীর আড়তদারদের অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করেন উত্তরবঙ্গের ব্যবসায়ীরা। তারা দুষছেন মধ্যস্বত্ব কারবারিদেরকে।
টাঙ্গাইলের ডিম আড়তদার সালাউদ্দিন আহমেদ মনির বলেন, ‘আমরা ডিমের দাম বাড়াচ্ছি বলে চট্টগ্রামের ডিম আড়তদারেরা যে অভিযোগ করছে, এটি মিথ্যা। সাধারণত ডিমের যোগান বাড়লে, কিছুটা দাম বাড়ে। তবে আমাদের কেউ কারসাজি করে এমন কোনো অভিযোগ নেই। আমরা সারাদিনের ডিম সংগ্রহের উপর একটি দাম নির্ধারণ করি। তবে তা শপ্রতি ৫ থেকে ১৫ টাকার মধ্যে সীমিত থাকে। তবে পরিবহন খরচ ও নষ্ট হওয়া ডিমের খরচ সমন্বয় করে যদি চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা বাড়তি দরে বিক্রি করে আমাদের করার কিছু নেই।’
করপোরেট কোম্পানির কারসাজির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখানে কিছু মধ্যস্বত্ব কারবারিরা করপোরেট কোম্পানির অর্থলোভের ফাঁদে পড়ে উৎপাদকদের থেকে বেশি দামে কিনে নিয়ে বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে। যার ফলে ডিমের বাজার অস্থিরতার প্রভাব পড়ে। এর দায়ভার আমরা নেব না। এসব প্রশাসনকে ভাবতে হবে।’
তাছাড়া চট্টগ্রামে ডিমের সরবরাহ বেড়েছে বলে দাবি করে তিনি জানান, ‘গত তিনদিন চট্টগ্রামের সরবরাহ বন্ধ থাকার পর ডিমের সরবরাহ বেড়েছে। রোববার রাতে শুধু আমার থেকে নিয়েছে দুই ট্রাকে ২ লাখ ১০ হাজার ডিম। এভাবে এখানকার প্রায় ব্যবসায়ীরা ডিম সরবরাহ করেছে। যার নির্ধারিত দাম ছিল শ’প্রতি ১ হাজার ৮০ টাকায়। যা প্রতি পিস ডিমের দাম পড়ে ১০ টাকা ৮০ পয়সায়।’