নিজস্ব প্রতিবেদক »
বুয়েট বিশেষজ্ঞ দলের অনাপত্তি পেয়ে কালুরঘাট সেতুর ওপর তিনটি ভারী ইঞ্জিন দিয়ে ট্রায়ালরান চালিয়েছে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ট্রায়ালরান সফল হওয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আজ রোববার ট্রেনে করে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যাওয়ার কথা রয়েছে।
পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, গতকাল শনিবার সকালে বুয়েট পরামর্শক দল কালুরঘাট সেতু দিয়ে বোয়ালখালী অংশে যাতায়াত করে। প্রথমে ২৯০০ ও ৩০০০ সিরিজের নতুন দুটি ইঞ্জিন দিয়ে কালুরঘাট সেতু পার হয়। পরে ২২০০ সিরিজের ইঞ্জিন দিয়ে ট্রায়ালরান দেওয়া হয়।
কালুরঘাট সেতুর সংস্কারকাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু জাফর মিঞা বলেন, ‘ট্রায়াল রানে আমরা কোনো সমস্যা পাইনি। সফলভাবে ট্রায়ালরান শেষ হয়েছে। খুব হেভি লোডের ইঞ্জিন দিয়ে ট্রায়াল দেওয়া হয়েছে। বুয়েটের পরামর্শ অনুযায়ী, কালুরঘাট সেতুটি সংস্কার করা হয়েছে। বুয়েট টিম সংস্কারকাজে সন্তোষ প্রকাশ করেন। কক্সবাজার রুটে এখন সব ধরনের ট্রেন চলাচল করতে পারবে।’
আগামী ৭ নভেম্বর ট্রায়ালরানে রেলমন্ত্রীর অংশ না নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সবগুলো শিডিউলে তো পরিবর্তন এসেছে। ১২ নভেম্বরের পরিবর্তে ১১ নভেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রেল সংযোগ উদ্বোধন করবেন। রেলমন্ত্রী আর ৭ নভেম্বর আসবেন না। তাই অফিশিয়ালি যে ট্রায়ালরানটা হওয়ার কথা ছিলো, সেটি আর হচ্ছে না। তবে রোববার পূর্বাঞ্চলের জিএম (মহাব্যবস্থাপক) আটটি বগি নিয়ে কয়েকজন কর্মকর্তাসহ চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যাবেন। এসময় তিনি পুরো রুট পরিদর্শন করবেন।’
সংস্কারে সেতুর লোড ক্যাপাসিটি বাড়ানোর কথা জানিয়ে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু জাফর মিঞা বলেন, ‘কালুরঘাট সেতুটির আগের এক্সেল লোড ছিল ১১। কিন্তু নতুন ইঞ্জিনের এক্সেল লোড ১৫। বুয়েটের পরামর্শ অনুযায়ী, সেতুতে এক্সেল লোড বাড়ানো হয়। এই সেতু নিয়ে আর টেনশনের কিছু নেই। রেল রুট উদ্বোধনের পর কালুরঘাট সেতুর ওপর দিয়ে মানুষ হেঁটে চলাচলের জন্য ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে।
রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, দেশে প্রায় ৩ হাজার ১৮ কিলোমিটার রেললাইন মধ্যে পূর্বাঞ্চলের অধীনে রয়েছে ১ হাজার ৩৩৩ কিলোমিটার। তবে পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় এক হাজার কিলোমিটার রেললাইন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, যা গত ৩০ বছরেও সংস্কার করা হয়নি। অন্যদিকে নতুন রুটগুলোতে এক্সেল লোড বাড়ানো হয়েছে। তাই নতুন ৩০ ইঞ্জিন চালানোর আগে সংস্কারকাজ জরুরি।
প্রসঙ্গত, ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেললাইন প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করা হয়। ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার পর্যন্ত মিটারগেজ রেলপথ নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত ৮৮ কিলোমিটার এবং রামু থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার।
শুরুতে এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করায় ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকায়। এতে অর্থায়ন করেছে এশিয়ান ব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকার।