সুপ্রভাত ডেস্ক »
‘ইবাদত’ হিসেবে মানুষের জন্য কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী; আর এক্ষেত্রে তার পাশে থাকার আশ্বাস এল ভোটে তার কাছে হারা তৈমুর আলম খন্দকারের কাছ থেকে।
টানা তৃতীয়বারের মতো মেয়র পদে জয়লাভের পর সোমবার বিকালে মিষ্টি ও ফুল নিয়ে নগরীর মাসদাইরে ‘তৈমুর কাকা’র বাসায় যান আইভী।
এ সময় তৈমুর ও তার পরিবারের সদস্যরা আইভীকে স্বাগত জানান। পরে দুই নেতা পাশাপাশি বসে মিষ্টিমুখ করে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন।
রোববারের নির্বাচনে বিএনপির পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়া তৈমুর আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও দুইবারের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর কাছে ৬৬ হাজার ভোটের ব্যবধানে হেরে যান।
আইভী দুই পরিবারের মধ্যে দীর্ঘদিনের সম্পর্কের কথা তুলে ধরে বলেন, “আমাদের পারিবারিক সম্পর্ক। এটা বজায় থাকবে। আমি পুরো নির্বাচনে বলার চেষ্টা করেছি, রাজনীতির জায়গায় রাজনীতি। কিন্তু পারিবারিক সম্পর্কের জায়গায় ঘাটতি হবে না। এটা কোনোদিন ব্যাহত হবে না।”
প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও তৈমুরের সঙ্গে পরামর্শ করে কাজ করার কথা পুনরায় ব্যক্ত করে মেয়র বলেন, “অবশ্যই আমি কাকার পরামর্শ নেব। ভবিষ্যতে কেন, তিনি তো অতীতেও পরামর্শ দিয়েছেন। আমি যখন পৌরসভায় নির্বাচিত হয়ে আসলাম তখন কাকাকে সঙ্গে নিয়েই হীরালাল খাল উদ্ধার করেছি। সমস্যায় বিভিন্ন সময় কথা বলেছি। আব্বার একটা স্কুলের জন্য তৈমুর কাকা সহযোগিতা করেছেন। এমন পারস্পরিক সহযোগিতা তো থাকবেই। আমরা নারায়ণগঞ্জের মানুষ। যে যে দলই করি না কেন, প্রত্যেকের সঙ্গেই তো একটা সম্পর্ক আছে।
“জনগণের স্বার্থে, নারায়ণগঞ্জের স্বার্থে, দলের ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করাটাই একটা শ্রেষ্ঠ ইবাদত। এই ইবাদতের কাজ আমরা সবাই করব। এটাই আমি বিশ্বাস করি। আমি পরামর্শ চাইব। যে এজেন্ডাগুলো কাকা দিয়েছেন আমি সেগুলো বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করব।”
এ সময় নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে তৈমুর বলেন, “আমি আইভীর সুস্বাস্থ্য, দীর্ঘ জীবন ও ভালো রাজনৈতিক জীবন কামনা করি। প্রশাসক হিসেবে মেয়র হিসেবে তার সাফল্য কামনা করি।”
আইভীর বাবা আওয়ামী লীগ নেতা আলী আহমদ চুনকা ছিলেন নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান।
তাকে স্মরণ করে তৈমুর বলেন, “আইভীর বাবা আলী আহমদ চুনকার হাত ধরেই নারায়ণগঞ্জের সামাজিক-রাজনৈতিক ও শ্রমিকদের সংগঠনে আমার প্রবেশ। আমার মাকে তিনি সালাম করতেন। আমিও অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে তাকে এখনও ভাইজান বলি। তার মেয়ের পেছনে আমি আছি। এবং যেখানে যে অবস্থায় সে থাকে, তার যে কোনো বিপদ-আপদ যে কোনো সুবিধা-অসুবিধায় অদৃশ্য শক্তির মতো তার মাথায় আমার হাত থাকে।”
এ সময় তৈমুর পাশে বসা আইভীর মাথায় হাত রাখেন; বলেন, “অতএব এই নির্বাচন কোনো বিষয় না। নির্বাচন চলে গেছে। আগামী দিনেও আমি তার পাশে থাকব ইনশা আল্লাহ। এখানে অন্য কোনো কথা কাজে লাগবে না। এটা অন্তরের সম্পর্ক, আত্মিক সম্পর্ক।“
এরপর টেবিলে মিষ্টি এলে তৈমুর প্রথমেই বলেন, “সে (আইভী) পাশ করেছে, আমিই তাকে প্রথম মিষ্টি খাওয়াই।”
কিন্তু আইভীই প্রথম তৈমুরকে মিষ্টি মুখে তুলে দেন এবং পাশে থাকা মিসেস তৈমুরকেও মিষ্টি দেন। পরে তৈমুরও আইভীকে মিষ্টিমুখ করান। এ সময় সবাই হাততালি দেন।
আওয়ামী লীগের স্থানীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের বাসায় যাবেন কি না- একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করলে আইভী না শুনে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। প্রশ্ন বারবার এলে আইভী বলেন, “আসছি কাকার বাসায়, এখানেই থাকতে দেন।”
সূত্র : বিডিনিউজ