রোহিঙ্গা শিবির অশান্ত। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন শরণার্থীরা। আশ্রয়শিবিরে কর্মরত সরকারি-বেসরকারি সংস্থার কর্মীরাও আতঙ্কে আছেন। ক্যাম্পগুলোতে প্রায় প্রতিদিন খুনখারাবি, অপহরণ, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে। পরিস্থিতি ক্রমে অবনতির দিকে যাচ্ছে। অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনায় শিবিরের বাইরেও সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ায় আতঙ্কে আছেন স্থানীয় লোকজন।
কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই সন্ত্রাসী গ্রুপ আরাকান স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশানের (আরএসও) মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে আরএসওর পাঁচ সদস্য নিহত হয়। গত শুক্রবার (৭ জুলাই) এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও রোহিঙ্গা নেতাদের তথ্য মতে, গত সাড়ে ৫ মাসে আশ্রয় শিবিরে প্রায় ৩০টির বেশি সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় ৩৫ জন রোহিঙ্গা খুন হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন- ১৭ জন রোহিঙ্গা মাঝি, ৭ জন আরসা সন্ত্রাসী ও অন্যান্য সাধারণ রোহিঙ্গা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, আশ্রয় শিবিরে মাদক, অস্ত্র, সোনার চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মায়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) এবং রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নবী হোসেন বাহিনী ও মাস্টার মুন্না বাহিনীর মধ্যে এসব ঘটনা ঘটছে। পাশাপাশি কিছু এনজিও কর্মীর বিতর্কিত ভূমিকা যেন ওই অপকর্মকারীদের উস্কানি দিয়ে থাকে।
বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয় শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে ৮ লাখ এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মায়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে দেশটির সেনাবাহিনীর নিপীড়নের মুখে।
আশ্রয় শিবিরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে হলে সেখানে মাদক নিয়ন্ত্রণ, চোরাচালান রোধ এবং রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারে দ্রুত যৌথ অভিযান চালানো জরুরি। আশ্রয় শিবিরের চারদিকে দ্রুত কাঁটাতারের বেড়ার কাজ শেষ করা, সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, পর্যবেক্ষণ টাওয়ার ও গোয়েন্দা তৎপরতা আরো বাড়ানো প্রয়োজন।
মায়ানমারের সঙ্গে আমাদের কিছু সীমান্ত এলাকা অরক্ষিত রয়েছে, যেসব এলাকায় কোন যাতায়াত নেই। নাফ নদীতে এমন কয়েকটি চরের মতো জায়গাও রয়েছে, যেখানে মায়ানমার এবং বাংলাদেশের নো ম্যানস ল্যান্ড রয়েছে। সেখানে সন্ত্রাসীরা অভয়ারণ্য তৈরি করেছে।
মায়ানমারে শুধু আরাকান আর্মিদের বিছিন্নতাবাদী নেই, বরং সেখানে কুকি-চিনসহ প্রায় ৩০টি গোষ্ঠী সব সময় সংঘর্ষে লিপ্ত। সেখান থেকে আসা সন্ত্রাসীরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অনুপ্রবেশ করে থাকতে পারে। মূলত তাদের কারণে বারবার সংঘর্ষ হচ্ছে। বিছিন্নতাবাদীরা যাতে সীমান্তে অনুপ্রবেশ করতে না পারে সেজন্য বর্ডার ফোর্সকে আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন।
রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যত তাড়াতাড়ি তাদের দেশে ফেরত যায় ততই তাদের দেশের জন্য এবং আমাদের দেশের জন্য মঙ্গল। রোহিঙ্গারা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে এখানে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীদের একটি কেন্দ্রস্থল। পরিণত হতে পারে।
এ মুহূর্তের সংবাদ