অর্থ-বাণিজ্যে কোনো সুখবর নেই

বিনিয়োগ খরার কারণে সর্বশেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশের বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি ঐতিহাসিকভাবে সর্বনিম্ন, দশমিক ১ শতাংশে নেমেছে। এমনকি কভিডকালের চেয়েও এ সময়ে কম প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এমন খবর ছাপা হয়েছে পত্রিকায়।
বছর পাঁচেক আগে কভিড মহামারীকালে লকডাউনের কারণে পুরো বিশ্ব একরকম থমকে গিয়েছিল। শিল্প-কারখানা থেকে শুরু করে অফিস-আদালত সবকিছুই বন্ধ ছিল সে সময়। বৈশ্বিক মহামারীর সে বছরও বাংলাদেশের বেসরকারি খাতে বিনিয়োগে দশমিক ২ শতাংশের মতো প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অন্যদিকে কভিডকালে কর্মযজ্ঞ থেমে যাওয়ার মতো অস্বাভাবিক পরিস্থিতি না থাকলেও ২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি দশমিক ১ শতাংশে নেমেছে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, সুদের হার বৃদ্ধি, কাঁচামালের দামে ঊর্ধ্বমুখিতা এবং জ্বালানি সংকটের কারণে বর্তমানে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করতে ভরসা পাচ্ছেন না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বিশ্বব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ। এরপর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এটি ৮ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে যায়। কভিডের কারণে ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র দশমিক ২ শতাংশ। তবে লকডাউন তুলে নেয়ার পর অর্থনীতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে শুরু করলে ২০২০-২১ অর্থবছরে বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৭ দশমিক ৮ শতাংশে দাঁড়ায়। এর পরের ২০২১-২২ অর্থবছরে এটি আরো বেড়ে হয় ১১ দশমিক ৮ শতাংশ। অবশ্য ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশের বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধিতে বড় ধস নামে। সে অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২ দশমিক ৯ শতাংশ। এর পরের ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কিছুটা বেড়ে প্রবৃদ্ধি হয় ৪ দশমিক ৩ শতাংশ। সর্বশেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশের বেসরকারি খাতের বিনিয়োগে মাত্র দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে বলে প্রাক্কলন করেছে বিশ্বব্যাংক।

বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ একটি দৈনিককে বলেন, ‘রড-সিমেন্টের কারখানাগুলো ৫০ থেকে ৫৫ শতাংশের বেশি সক্ষমতায় চলতে পারছে না। কারণ চাহিদা নেই। সরকারের কাজ বন্ধ, আবার আবাসনেও কিছু হচ্ছে না। ছোট ছোট অনেক শিল্প বসে গেছে। গ্রামেগঞ্জে বিদ্যুৎ পর্যন্ত নেই। বাজারে চাহিদা নেই। মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষ এখন রেস্তোরাঁয় খাওয়া-দাওয়া করতে যাচ্ছে না, কাপড় কেনা পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছে। অন্যদিকে শিল্পে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কোমল পানীয়ের শিল্প বন্ধ হওয়ার তথ্য শুনতে পাচ্ছি। টেক্সটাইল শিল্পের কারখানাও বন্ধ হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। অনেকে কম সক্ষমতায় কারখানা সচল রেখেছেন।’

নতুন শিল্প-কারখানা গড়ে না ওঠায় মূলধনি যন্ত্রপাতির আমদানি কমেছে। এক বছর ধরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান ও রফতানি আয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত শিল্প খাতের মৌলিক তিনটি উপকরণের (মূলধনি যন্ত্রপাতি, মধ্যবর্তী পণ্য ও কাঁচামাল) আমদানি এলসি খোলার প্রবণতা নিম্নমুখী। এর মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে শিল্পের মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি এলসি ২৫ দশমিক ৪১ শতাংশ, মধ্যবর্তী পণ্যের এলসি ৬ দশমিক ২৬ শতাংশ এবং কাঁচামাল আমদানির এলসি খোলার পরিমাণ দশমিক ১৫ শতাংশ কমেছে। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমদানি কমে যাওয়ার পেছনে বিনিয়োগ খরা, অর্থনৈতিক স্থবিরতা ও ভোগ ব্যয় কমে যাওয়ার প্রভাব রয়েছে।
এমতাবস্থায় সরকার কী ভাবছে আমরা জানি না। অথচ দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখার কাজটি সবচেয়ে অগ্রাধিকার পাওয়ার কথা।