ম্যাচ শেষ হতেই স্টেডিয়ামের সাউন্ডবক্সে বেজে উঠল, ‘লাল সবুজের বিজয় নিশান হাতে হাতে ছড়িয়ে দাও।’ ব্যর্থতা ও হতাশার অনেক প্রহর পেরিয়ে বাংলাদেশ এবার সত্যিই পেরেছে বিজয় নিশান ছড়িয়ে দিতে, পাকিস্তানে যেমন, তেমনি ক্রিকেট বিশ্বেও।
এমন অনুভূতি ছিল গতকালের অপরাহ্ণে রাওয়ালপিন্ডি থেকে ঢাকা অবধি।
দ্বিতীয় টেস্টে পাকিস্তানকে ৬ উইকেট হারিয়ে ঐতিহাসিক এক সিরিজ জয়ে নিজেদের রাঙাল নাজমুল হোসেন শান্তর দল। নিজেদের সুদীর্ঘ টেস্ট ইতিহাসে আগে কেবল একবারই দেশের মাঠে হোয়াইটওয়াশড হয়েছিল পাকিস্তান। ২০২২ সালে তারা তিন ম্যাচের সিরিজের সবকটি হেরেছিল ইংল্যান্ডের কাছে।
দেশের বাইরে বাংলাদেশের মাত্র দ্বিতীয় সিরিজ জয় এটি। তবে পূর্ণ শক্তির কোনো দলের বিপক্ষে এটিই প্রথম। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ২-০ ব্যবধানে জিতলেও সেবার চুক্তি সংক্রান্ত ঝামেলায় খেলেননি শীর্ষ ক্রিকেটারদের কেউ। বাংলাদেশ সিরিজ জিতেছিল দ্বিতীয় সারির দলের বিপক্ষে। এবারের জয় তাই অনেক বেশি স্পেশাল, অনেক বেশি স্মরণীয়।
শেষ ইনিংসের ১৮৫ রান তাড়ায় শেষ দিনে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ১৪৩ রান। সেই লক্ষ্যে খুব দ্রুততায় ছুটতে পারেনি দল। তবে প্রয়োজনও পড়েনি। ম্যাচ সবসময়ই ছিল নিয়ন্ত্রণেই। রান তাড়ায় কখনও মনে হয়নি বাংলাদেশ হারতে পারে।
ফিফটি করতে পারেননি কোনো ব্যাটসম্যান। কয়েকজনের অবদানে বেশ সহজেই জিতে গেছে বাংলাদেশ। গোটা সিরিজেরই প্রতীকী বলা যায় এই শেষ ইনিংস। সম্মিলিত দলীয় পারফরম্যান্সের জয়গান গেয়েই অসাধারণ এই সিরিজ জয়ের সাফল্য ধরা দিয়েছে।
এই দিনের বাস্তবতায় বাংলাদেশের জয়টাই ছিল সবচেয়ে সম্ভাব্য ফল। কিন্তু ম্যাচের তৃতীয় দিনে (কার্যত যা ছিল দ্বিতীয় দিন) ফিরে গেলে, ২৬ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে যখন ধুঁকছিল বাংলাদেশ, মান বাঁচানোই যখন মনে হচ্ছিল বড় দায়, সেখান থেকে এভাবে ম্যাচ জয় তো রূপকথার মতোই। বাংলাদেশের ইতিহাসে তো বটেই, টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসেই আলাদা জায়গা নিয়ে থাকবে এই জয়। বাংলাদেশ দল টেস্ট ক্রিকেটের স্ট্যাটাস পেয়েছিল ২০০০ সালে। কিন্তু এ সংস্করণে সাফল্যের দেখা পেতে দীর্ঘ সময় ধরে সংগ্রাম করতে হয়েছে। চার বছর ও ৩৪ ম্যাচ অপেক্ষার পর প্রথম জয়ের দেখা পেয়েছিল লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। ২০০৫ সালের জানুয়ারিতে চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়েকে ২২৬ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে প্রথম টেস্ট জয়ের ইতিহাস গড়েছিল টাইগাররা। সেবারই প্রথম সিরিজ জয়ের স্বাদ। দ্বিতীয় ম্যাচ ড্র হওয়ায় ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নেয় বাংলাদেশ।
এরপর আবার সাড়ে চার বছরের অপেক্ষা, ২৪ ম্যাচ পর জয়ের দেখা। এবার সিরিজের দুই ম্যাচেই জয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তাদের ঘরের মাটিতে হোয়াইটওয়াশ করে বিদেশের মাটিতে প্রথম টেস্ট সিরিজ জয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ।
অভিনন্দন বাংলাদেশের জাতীয় দলকে। বাংলার দামাল ছেলেরা আবার দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে। তাদের সাফল্য এদেশের প্রতিটি মানুষকে উদ্দীপ্ত করেছে, প্রাণিত করেছে।