সুপ্রভাত ক্রীড়া ডেস্ক
প্রত্যাশার বেলুন এভাবে চুপসে যাবে, এক মুহূর্তের জন্যও ভাবেননি সাকিব আল হাসান। আগের দিনই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, নির্ভার হয়ে সেরা খেলাটাই খেলবেন। এমনকি জয়ের একটা স্বপ্নও বুনে দিয়ে জানিয়েছিলেন নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে জয়ের পর স্বস্তির বাতাস ফিরেছে সাজঘরে। সেই পালে এবার হাওয়া দিয়ে যেতে চান। কিন্তু এক ম্যাচ না যেতেই সেই পুরোনো গল্প, ২০ ওভারের ক্রিকেটটা যে লাল-সবুজদের এই দলটাকে দিয়ে হচ্ছেই না। একই রকম হারের একঘেয়ে বিচ্ছিরি সুর!
বৃহস্পতিবার সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে টস হেরে শুরু। এরপর সময় যতোই এগিয়ে শুধু ব্যর্থতাই হয়েছে সঙ্গী। মাঠে হাজির হাজারো বাংলাদেশি দর্শকরা চিৎকার জাগিয়ে দিতে পারেনি সাকিব আল হাসানদের। রঙিন সাজে আসা দর্শকরা শুধু হতাশই হয়েছেন বারবার। শুরুতে ব্যাট করতে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকা তুলল ২০৫। বাংলাদেশ থমকে গেল ১০১ রানে!
১০৪ রানের সেই হারের পর সাংবাদিকদের সামনে অন্য কাউকে না পাঠিয়ে হাজির হলেন খোদ সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশ অধিনায়ক মেনে নিলেন কিছু ভুল হয়েছে। আর তিনি নিজেও এখন রাজ্যের হতাশ। সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডের ছোট্ট সংবাদ সম্মেলন কক্ষে বিমর্ষ সাকিব বলছিলেন, ‘দেখুন হারলে তো খারাপ লাগবে স্বাভাবিক, আমাদের দুইদিন পর আরও গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ আছে। তাই আজকের ম্যাচ থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে আমাদের সামনের জন্য প্ল্যানিং করতে হবে। খেলাটা অনেক এক্সাইটিং, এন্টারটেইনিং; তাই এরকম পরিস্থিতি আপনাকে মেনে নিতে হবে। আমাদের সামনে আরও তিন ম্যাচ আছে, আশা করি সবাই ভালো করবে।’
আগের ম্যাচে জয়ের পর কেন এমন হলো? কেন এভাবে পা পিছলে গেলো? একটু লড়তেও পারল না বাংলাদেশ? এবার সাকিব দ্রুত নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন, ‘আমাদের প্ল্যানিংয়ে কোনো ভুল ছিল। আমাদের আসলে বিশ্বাসে ঘাটতি থাকতে পারে, এরকম বড় রান তাড়া করে জেতার, আমরা ঘরোয়াতেও এমন রান তাড়া করিনি। এমন না যে আমরা এর আগে বড় স্কোর করিনি। সিডনির উইকেট ভালো ছিল।’
তারপরও সাকিব আবেগের লাগাম ছেড়ে দিয়ে বলেই ফেললেন, ‘আমি হতাশ, আমাদের আরো ভালো ব্যাটিং করার কথা ছিল।’
বাংলাদেশ অধিনায়ক মনে করেন শুরুতে রান পাহাড়ই সর্বনাশ করে দিয়েছে। বিশেষ করে রাইলো রুশো (১০৯) আর কুইন্টন ডি ককের ডি কক (৬৩) ব্যাটিং ম্যাচটা থেকে ছিটকে দেয় দলকে। সাকিব বলছিলেন, ’প্রথম ওভারের পর আমরা আমাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারিনি। উইকেটটা ভালো ছিল। রাইলি রুশো দারুণভাবে মানিয়ে নিয়েছে। কুইন্টনও ভালো খেলেছে। ওদের দুজনের জুটিটাই আমাদের হারিয়ে দিয়েছে।’
সামনেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আরেক ম্যাচ। ৩০ অক্টোবর ব্রিসবেনে প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে। এই বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলার সম্ভাবনা টিকিয়ে রাখতে যেখানে জয় ছাড়া অন্য কিছু ভাবার সময় নেই। তার আগে এমন একটা বড় হার। কী যাচ্ছে সাকিবদের মনের ওপর দিয়ে?
এমন প্রশ্নের মুখে ঠান্ডা মাথায় জানিয়ে দিলেন, ‘ব্যাটিংয়ে আমাদের অনেক উন্নতি করতে হবে, বাউন্স ও পেসের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। প্রথম ১০ ওভারে যদি ভালো ব্যাটিং করি, উইকেট হাতে রাখি, তাহলে শেষের দিকে ব্যাটিং সহজ হয়। আমি এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে তাই দেখছি। যে দলগুলো শেষ দশ ওভারে উইকেট হাতে রাখছে, তারাই বড় রান করছে। এই একটা জায়গায় আমরা ভালো করতে পারি।’
এটাই আসলে শেষ কথা-এই বিশ্বকাপে ভাল করতে হলে ব্যাটিংয়ের প্রথম দশ ওভারে কিছু একটা করতেই হবে। সেদিকেই এখন চোখ সাকিবের। অতীত তো অতীতই। সিডনির দর্শকদের হতাশ করলেও ব্রিসবেনে অন্তত ধাক্কা সামলে উঠতে চায় বাংলাদেশ। না হলে যে ফের দুঃস্বপ্ন চারপাশ ঘিরে ফেলবে টাইগারদের! খবর ঢাকা পোষ্টের