সুপ্রভাত ডেস্ক
ক্লাব ফুটবল দুহাত ভরে দিলেও বিশ্বকাপের মঞ্চটা চরম আক্ষেপের ছিল লিওনেল মেসির। সেই আক্ষেপ ঘুচিয়ে দিতে কাতারে আর্জেন্টিনা ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। লক্ষ্য ছিল লিওনেল মেসির জন্য হলেও সোনালী ট্রফি জিতে ৩৬ বছরের আক্ষেপ ঘোচাতে। খবর বাংলাট্রিবিউনের।
তাইতো সৌদি আরবের কাছে অঘটনের পর তাদের এমন রূপে দেখা গেলো, যাদের পথে বাঁধা হওয়ার সাধ্য হলো না কারও। হয়নি গতবারের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সেরও। টাইব্রেকারে ফ্রান্সকে পরাজিত করে লুসাইল স্টেডিয়ামে গড়লো নতুন ইতিহাস। যে ইতিহাস ২০১৪ সালের মারকানার দুঃখ ভুলিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
এতদিন মেসির সঙ্গে তুলনা চলেছে ম্যারাডোনার। কিন্তু ম্যারাডোনা যে কারণে ফুটবল ঈশ্বর-অমর সেই ট্রফিটাই মেসির কাছে এতদিন ধরা দেয়নি। ১৯৮৬ সালের পর আলবেসিলেস্তেদের তৃতীয় ট্রফি এনে দিয়ে অমরত্বের স্বাদটা অবষেষে ঠিকই পেলেন সাতবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী!
অথচ এই ৩৫ বছরে কত কিনা করেছেন। রাতের পর রাত বাঁ পায়ের জাদুতে বিমোহিত করেছেন। ক্যারিয়ারে ঘরোয়া ট্রফি জিতেছেন ৪১বার। তারমধ্যে বেশিরভাগ বার্সেলোনার। যে কারণে মেসি-বার্সা একে অপরের প্রতিশব্দ হয়ে উঠেছিল।
অথচ এই মেসিই ক্যারিয়ারের সুবর্ণ সময়ে আকাশি-সাদা জার্সিধারীদের হয়ে অলিম্পিক জিতলেও বৈশ্বিক ট্রফি জিততে পারেননি দীর্ঘদিন। সেই গেরো খুলে ২০২১ সালে কোপা আমেরিকা জিতে। একভাবে তখনই সমর্থকদের আশ্বস্ত করেছিলেন; খুদে জাদুকরের পায়ে বিশ্বকাপের ফুল ফুটতে যাচ্ছে।
নকআউটে প্রথম গোল করার কীর্তি দিয়েই তার বীজ বোনা শুরু। একের পর এক গোল, অ্যাসিস্টের পর ফাইনালে দেখা মিললো পূর্ণতার।
অথচ এই মেসিকে একসময় শুনতে হতো জাতীয় দল নয়, ক্লাবের জন্য খেলেন! সেই তকমাটা আস্তে আস্তে মুছতে শুরু করেন কোপা জিতে। এবার তো বিশ্বকাপ জিতে নিজেকে নিয়ে গেলেন অনন্য উচ্চতায়।
প্রয়াত ডিয়েগো ম্যারাডোনা অন্যলোক থেকে নিশ্চয়ই মেসিসহ অন্যদের অভিনন্দন জানাচ্ছেন। আর্জেন্টাইনরাও স্মরণ করছেন ফুটবল ঈশ্বরকে।
তবে লুসাইলে ফাইনাল যে সহজ হবে না, তার ইঙ্গিত আগেই মিলেছিল। মেসি ও ডি মারিয়া প্রথমার্ধে গোল করে সহজ জয়ের বার্তাই দিয়েছিলেন। ততক্ষণে গোল্ডেন বুটও নিশ্চিত করে ফেলেছিলেন মেসি। কিন্তু বিরতির পর ফ্রান্স যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে তাদের উৎসবের ইতি টানলো তাতে সবটুকু অবদান কিলিয়ান এমবাপ্পের। জোড়া গোল করে ম্যাচ নিয়ে গেছেন অতিরিক্ত সময়ে। সমর্থকরা তখন উৎকণ্ঠায়, কী রোমাঞ্চ অপেক্ষা করছে শেষ বেলায়! ফুটবলের চরিত্র এমন বলেই তার মাহাত্ম্য এত বেশি। তার পরেও আর্জেন্টাইন ভক্তদের আত্মবিশ্বাস টলানো যায়নি। বরং কোরাসে গান গেয়ে দলকে প্রেরণা জুগিয়ে গেছেন।
তারপর তো ১১০ মিনিটে জাদুর পরশ দেখালেন মেসি নিজে। অসাধারণ এক গোলে আকাশি-সাদা জার্সিধারীদের ফিকে হতে যাওয়া স্বপ্ন রঙিন করে তুললেন। কিন্তু ফুটবল দেবতা মেসিকে অমরত্ব দেবেন বলে এত সহজে সব কিছু দিতে চাইলেন না। হয়তো মেসির শেষ বিশ্বকাপটাকে মহিমান্বিত করে তুলতেই ম্যাচটাকে করে তুলতে চাইলেন আরও স্মরণীয়। তাইতো ১১৮ মিনিটে এমবাপ্পে পেনাল্টি থেকে গোল করে বিশ্বকাপের প্রথম হ্যাটট্রিক করার গৌরব অর্জন করেও শেষটায় হাসলেন মেসি নামের এক ফুটবল জাদু শিল্পী। এমবাপ্পে ম্যাচটা টাইব্রেকারে নিতে পারলেন ঠিকই। কিন্তু ফুটবল দেবতা যে মেসির অমরত্বের পথটা এভাবেই রচিত করে রেখেছিলেন!