রোহিঙ্গা সংকট
নিজস্ব প্রতিনিধি, উখিয়া :
রোহিঙ্গা সংকট দীর্ঘায়িত হওয়ায় স্থানীয়দের সার্বিকভাবে তোপের মুখে বসবাস করতে হচ্ছে। বাড়ির আশেপাশে কোন ধরনের চাষাবাদ, সবজি ক্ষেত, ফলজ, বনজ ও ঔষধি গাছ লাগালেও তার নিরাপত্তা নেই। রোহিঙ্গাদের প্রয়োজনে কেটে নিয়ে যাচ্ছে। প্রতিবাদ করলে দা, কিরিজ নিয়ে তেড়ে আসে। হাঁস মুরগি পালন করা যাচ্ছে না। রাতের বেলায় চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। চারিদিকে রোহিঙ্গা মধ্যখানে অবরুদ্ধ অবস্থায় জীবনযাপন করতে হচ্ছে।
আক্ষেপ করে সাংবাদিকদের কথাগুলো বললেন কুতুপালং ক্যাম্প সংলগ্ন মধুর ছড়ার স্থানীয় বাসিন্দা শাহজাহান, লম্বাশিয়া গ্রামের আলী হোছন, বালুখালী গ্রামের সেলিম জাহাঙ্গীর, জামতলী গ্রামের সাহাবুদ্দিনসহ আরো বেশ কয়েকজন যুবক।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটি সদস্য সচিব ও পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, তার ইউনিয়নে প্রায় লক্ষাধিক রোহিঙ্গার বসবাস। তার এলাকায় রোহিঙ্গাদের কারণে অনেক জমি জমা অনাবাদি রয়ে গেছে। রোহিঙ্গাদের অবৈধ কর্মকাণ্ডে বাধা দিতে গিয়ে স্থানীয়দের নাজেহাল হতে হয়েছে।
অপহরণের ভয়ে শত অপরাধ নিরবে সহ্য করতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করে তিনি আরো বলেন, তার ইউনিয়নে শতাধিক পাহাড় কেটে ন্যাড়া করে ফেলা হয়েছে। খালগুলো ভরাট হয়ে গেছে। আগামী বর্ষা মৌসুমে জলোচ্ছ্বাস ও পাহাড়ী ঢলের পানিতে স্থানীয়দের জীবন নিয়ে শঙ্কায় দিন যাপন করতে হবে। এ সমস্ত ক্ষয়-ক্ষতির পরেও এখানে কর্মরত এনজিওগুলোকে স্থানীয় বেকার যুবকদের চাকুরী দিয়ে সামন্য পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি নিরসনের দাবি তুললেও তারা তা মানছে না, চাকুরি দেয়া হচ্ছে রোহিঙ্গাদের। এ নিয়ে উখিয়া উপজেলা পরিষদে এনজিওদের সাথে সমন্বয় বৈঠকে বেশ কয়েকবার বৈঠক আলোচনা হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি।
তিনি বলেন, পালংখালী ইউনিয়নবাসী যে ক্ষতি হয়েছে তা কোন দিন পূরণ হওয়ার নয়।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী রোহিঙ্গাদের অবিলম্বে প্রত্যাবাসনের দাবি জানিয়ে বলেন, হয় প্রত্যাবাসন নয় তো রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে পাঠানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হোক। অন্যথায় এখানে স্থানীয় ও রোহিঙ্গাদের মধ্যে সৃষ্ঠ দূরত্ব আরো কঠোর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে কুতুপালং রেজি. রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চেয়ারম্যান হাফেজ জালাল বলেন, রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরে যেতে চায়। তবে তাদের ভয় মিয়ানমার সামরিক জনতা তাদের সেখানে শেড নির্মাণ করে যদি অবরুদ্ধ করে রাখে তাহলে সেটা হবে রোহিঙ্গাদের জন্য আরও ভয়ানক পরিবেশ।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে মিয়ানমারে যে নির্বাচন অনুষ্ঠান হয়েছে সেখানে অংচান সূচির দল ৩১৬টি আসন পেয়েছে। তাছাড়া মিয়ানমারের সংখ্যালঘুর দল ৬০টি আসন পেয়েছে। যা নিয়ে অংচান সূচি সরকার গঠনের জন্য সংখ্যা লঘু দলকে আহ্বান জানিয়েছে। হাফেজ জালাল বলেন, অংচান সূচি যদি সরকার গঠন করতে পারে তাহলে রোহিঙ্গাদের এখানে আর ধরে রাখা যাবে না। তারা নিজ ইচ্ছায় মিয়ানমারে চলে যাবে।
তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্প ম্যানেজম্যান্ট কমিটির সভাপতি মো. নুর জানান, দীর্ঘ সময় ধরে রোহিঙ্গা ও স্থানীয় এক সাথে বসবাস করার সুবাধে তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয় যা নিয়ে পরবর্তী সহিংসতায় রূপ নেয়। সে জানায়, বর্তমানে নির্বাচন শেষ হয়েছে এ সময় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আরও কয়েকটি দেশকে সম্পৃক্ত করে কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি করলে রোহিঙ্গাদের মাতৃভূমিতে ফিরে যাওয়া সম্ভব বলে তিনি দাবি করেন।
স্বদেশ