নিজস্ব প্রতিবেদক »
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, ‘বিপ্লব উদ্যানে গড়ে তোলা নতুন অবকাঠামো ভেঙে ফেলে সেখানে নাগরিকদের জন্য গ্রিন পার্ক নির্মাণ করা হবে এবং শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের যে নাম মুছে দেয়া হয়েছে ইতিহাস থেকে সে নাম থাকবে-আই রিভোল্ট, আমি বিদ্রোহ ঘোষণা করছি।’
তিনি গতকাল সকাল ১১টার দিকে নগরীর দুই নম্বর গেটের বিপ্লব উদ্যানে ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ ও উদ্যান পরিদর্শনে শেষে সাংবাদিকদের এ ঘোষণা দেন।
এসময় মেয়রের সঙ্গে ছিলেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম ও সচিব আশরাফুল আমিন।
বিপ্লব উদ্যানের ঐতিহাসিক তাৎপর্য তুলে ধরে ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এ বিপ্লব উদ্যান থেকে অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, যেটা ঠিক এর পেছনেই ছিল সেখান থেকে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন। উনি কর্নেল জানজুয়াকে হত্যা করে পাক হানাদার বাহিনীকে বলেছিলেন আমি বিদ্রোহ ঘোষণা করছি। উনি পাকিস্তানি আর্মির মেজর ছিলেন। বিদ্রোহ করার কারণে উনার কোর্ট মার্শাল হতে পারত। মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে সেদিন উনি বাংলাদেশকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন। সেটার জন্য এ বিপ্লব উদ্যান ঐতিহাসিক স্মৃতি বিজড়িত স্থান।’
বিপ্লব উদ্যানের মতো একটি ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত স্থানকে বিনষ্ট করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এ বিপ্লব উদ্যান সবুজে ঘেরা ছিল। বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তারা এখানে বাণিজ্যিক কিছু করেনি। ওই ধরনের চিন্তা বিএনপি সরকার বা ওই সময়ে যাঁরা মেয়র ছিলেন তাঁদের কারোর মাথার মধ্যে আসেনি। কিন্তু আমরা দেখেছি, যখনি বিগত সরকারের লুটপাটকারীরা এখানে ক্ষমতা নিয়েছে সাথে সাথে বিভিন্ন সিন্ডিকেট, বাণিজ্য তাদেরকে ঘিরে ধরেছে এবং ওই বাণিজ্যিকিকরণের কারণে এর (বিপ্লব উদ্যান) সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে গেছে। আমি আজ এখানে স্পষ্ট ঘোষণা দিতে চাই-এখানে নতুন মার্কেটের জন্যে যে স্থাপনাগুলো করা হচ্ছে কালকে থেকে সেটা ভেঙে দেয়া হবে। এখানে কোনো নতুন স্থাপনা হবে না। এখানে সবুজের সমারোহ হবে। এখানে আবারও পাখি ডাকবে। মানুষ হাঁটবে ও অক্সিজেন নেবে। আমার ছেলেরা, আমার বোনেরা, আমার ভাইয়েরা, আমার মায়েরা এখানে হাঁটতে পারে না। তার হাঁটতে চায়, কিন্তু পারেনা। কারণ এখানে বাণিজ্যিকিকরণ করা হয়েছে। আমি এখানকার মালিক সমিতির যিনি সেক্রেটারি আছেন, তাকে আদেশ দিচ্ছি- এখানে নবনির্মিত স্থাপনা ভেঙে দেবেন। সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা আপনার সাথে থাকবেন।’
মেয়র দেশের স্মরণীয় রাজনৈতিক নেতৃবন্দের অবদানকে যথাযথ স্বীকৃতি দেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতা কিংবা বিএনপির নেতা কিংবা এর আগেরও মাওলানা ভাসানী হোক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হোক, কিংবা ফজলুল হক হোক, সবার ইতিহাসের অবদানকে স্মরণীয় করে রাখতে হবে এবং কারো ইতিহাস বিকৃত করা যাবে না। যার যার ইতিহাস যেখানে আছে থাকবে, আমরা কারো নাম ফলক মুছে দেয়ার রাজনীতিতে বিশ্বাস করিনা। আমরা চাই, নতুন প্রজন্ম যাতে সঠিক ইতিহাস জানতে পারে, এবং সেটা নিয়ে তারা যাতে এর পথ চলতে পারে।’