এম জিয়াবুল হক, চকরিয়া »
কক্সবাজারের পেকুয়ায় অপহরণের ১৪ দিন পর শিক্ষক মোহাম্মদ আরিফ (৪১) এর বস্তাবন্দি মরদেহ স্থানীয় পুকুর থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
শুক্রবার (১১ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে পেকুয়া সদর ইউনিয়নের মাতব্বরপাড়ায় শিক্ষকের বাড়ির পাশের একটি পরিত্যক্ত পুকুর থেকে তার বস্তাবন্দি অবস্থায় লাশ পাওয়া যায়।
নিহত মোহাম্মদ আরিফ পেকুয়া সেন্ট্রাল স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন।
মরদেহ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করে পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সিরাজুল মোস্তফা বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে একটি পরিত্যক্ত পুকুর থেকে শিক্ষকের লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে এসেছি। সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে শিক্ষকের মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। পুলিশ হত্যাকান্ডে জড়িতদের চিহ্নিত করার কাজ করছে।’
নিহত শিক্ষক আরিফের ছোট ভাই রিয়াদ বলেন, ‘গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে আমার বড় ভাই পেকুয়া সদরের চৌমুহনীতে অবস্থান করছিলেন। এরপর থেকে তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায় নি এবং তার মুঠোফোনও বন্ধ ছিল। কোথাও কোনো খোঁজ না পাওয়ায় নিহতের স্ত্রী মেহবুবা আনোয়ার লাইজু পেকুয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) দায়ের করেন। গতকাল বিকালে আমাদের বাড়ির পাশে পরিত্যক্ত একটি পুকুরে বস্তাবন্দি অবস্থায় আমার বড় ভাইয়ের মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয়া হয়।’
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, শিক্ষক মোহাম্মদ আরিফ পেকুয়া সদর ইউনিয়নের মাতবরপাড়া এলাকার মরহুম মাস্টার বজল আহমদের ছেলে। গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে অহরণের পর বিভিন্ন মাধ্যমে সন্ত্রাসীরা তার পরিবার কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করতে থাকে।
এদিকে, শুক্রবার বিকালে শিক্ষক আরিফের মরদেহ উদ্ধারের পরপরই বিক্ষুব্ধ জনতা এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে পেকুয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও যুবলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম এবং তাঁর পিতা রমিজ আহমদের বসতবাড়িতে হামলা চালিয়ে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। পরে পেকুয়া চৌমুহনীর সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানের ছোট ভাই উপজেলা যুবলীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক মো. আজমগীরের মালিকানাধীন মার্কেটের দুইটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও মালামাল লুটপাট চালায়।
এ ব্যাপারে পেকুয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, শিক্ষক আরিফ হত্যাকান্ড খুবই মর্মান্তিক। এ ঘটনায় যারাই জড়িত তাদের গ্রেফতারপুর্বক দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবি করে তিনি বলেন, গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর বিভিন্ন মামলা দিয়ে আমি ও আমার ভাইদের এলাকা ছাড়া করা হয়েছে। আমরা এলাকায় নেই, সেই মুহূর্তে ঘটনার সঙ্গে আমাদের জড়িয়ে উল্টো আমাদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন দিয়ে লুটপাট করা হয়েছে।
নিহত স্কুল শিক্ষকের স্ত্রী মেহবুবা আনোয়ার লাইজু অভিযোগ করেন, গত ২৮ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫ টার দিকে পারিবারিক প্রয়োজনে তার স্বামী বাড়ি থেকে বের হন। কিন্তু আনুমানিক রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত বাড়ি না ফেরায় তাকে ফোন করা হলেও তিনি তিনি ফোন ধরেননি। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তাকে না পাওয়ায় রাত সাড়ে ১১টার দিকে পেকুয়া থানায় ডায়েরি করেন মেহবুবা আনোয়ার।
নিহত স্কুল শিক্ষকের স্ত্রী মেহবুবা আনোয়ার লাইজু জানান, ওইদিন বাদ এশা এক ব্যক্তির সঙ্গে তার স্বামীর জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি বিষয়ে শালিশের কথা ছিল। এরপর রাত সাড়ে ১২ টার দিকে অজ্ঞাতস্থল থেকে তার স্বামীর নম্বর থেকে শাশুড়িকে ফোন করে তাঁর ছেলে অপহরণের কথা জানানো হয়। এরপর রাত ২টার দিকে তাকে এবং শাশুড়িকে ফোন করে চট্টগ্রাম নগরীর ফ্রিপোর্ট এসে আমার স্বামীকে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেন তারা। পরদিন ফ্রি পোর্ট এলাকায় গেলেও স্বামীকে পাননি বলে জানান মেহবুবা আনোয়ার লাইজু। পরে অপহরণকারীরা তাকে মুক্তির জন্য ৩৫৪০ লাখ টাকা দাবি করে।
মেহবুবা আনোয়ার লাইজু বলেন, পরদিন ২৯ সেপ্টেম্বর বিকেল ৪টার মধ্যে চট্টগ্রাম নগরীর নতুন ব্রিজ পুলিশ বক্সের সামনে আমাকে যেতে বলেন অপহরণকারীরা। পাশাপাশি তারা হুমকি দিয়ে বলেন, ‘কোন চালাকি করলে অথবা পুলিশ, র্যাব কিংবা আর্মির দ্বারস্থ হলে তোর স্বামীর মরদেহ পাবি।’ এই কথা বলে এরপর আবারও মোবাইল বন্ধ করে দেন অপহরণকারীরা। আমি এ ঘটনায় জড়িত নরপিশাচ সন্ত্রাসীদের ফাঁসি চাই।