অপরাধ নিত্যদিনের ঘটনা

রোহিঙ্গা ক্যাম্প

aerial, drone, landscape, LOCATION: Cox's Bazar, Bangladesh DATE: October 30, 2018 SUBJECT: Families, Family, Street Life, Cultural, Play, Sampan, Fishing Boats, Royhinga, Refugees CREW: Photographer: Ryan Donnell NY Producer: Jennifer Rupnik Local Producer: Ghazal Javed Marketing: Meredith Jacobson Local: Sesame Workshop Bangladesh (Khalil Rahman) Performers: Sayma Karim (Tuktuki); Asharaful Alam Khan (Halum); Sudip Chandra Das (Halum/righthand); Elmo (Shuvankar Das Shuvo);

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার »

কক্সবাজারের উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পরিস্থিতি দিন দিন মারাত্মক আকার ধারণ করছে। প্রতিদিনই খুন, ধর্ষণ, অপহরণ, আধিপত্য বিস্তার, মাদক ব্যবসাসহ ইত্যাদি অপরাধমূলক কাজ যেন নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। ক্যাম্পের সাধারণ রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, তারা মারাত্মক উদ্বেগ ও উৎকন্ঠার মধ্যে দিনযাপন করছেন। ক্যাম্পের এমন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তারা কোনমতেই দেখতে চান না। তারা চান ক্যাম্পের পরিস্থিতি যেন দিন দিন স্বাভাবিক হয়ে উঠে।

সূত্র জানায়, চলতি মার্চ মাসেই উখিয়ায় ক্যাম্পে চারটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া ঘটেছে ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ঘটনা। তাছাড়া অপহরণ, ধর্ষণ, আধিপত্য বিস্তার, মাদক ব্যবসা ইত্যাদি অপরাধতো লেগেই আছে।

সর্বশেষ বৃহষ্পতিবার উখিয়ার বালুখালী ৮ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে অপহরণের ২৪ ঘণ্টা পর মাহাবুবুর রহমান (৩৫) নামে এক রোহিঙ্গা যুবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উখিয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী। নিহত মাহবুব বালুখালী ৫ নম্বর ক্যাম্পের আবু শামার ছেলে। ওসি জানান, বালুখালী ৮ নম্বর ক্যাম্পের বাসিন্দা মাহবুব বুধবার ৫ নম্বর ক্যাম্পে তার শশুর বাড়ি থেকে অপহৃত হয়। নিখোঁজ থাকার ২৪ ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার তার মরদেহ মিলেছে। তিনি আরও জানান, তার শরীরে কয়েকটি স্থানে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে তাকে কোন একটি গোষ্ঠী হত্যা করে থাকতে পারে। পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে।

এর আগে ১৫ মার্চ ভোরে কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দুর্বৃত্তদের গুলিতে মোহাম্মদ রশিদ (৩৫) নামে এক স্বেচ্ছাসেবক খুন হয়েছেন। নিহত মোহাম্মদ রশিদ বালুখালী ৮ নম্বর ক্যাম্পের বাসিন্দা। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে উখিয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী জানান, এনজিও অফিসে রাতে ডিউটি করে নিজ শেডে ফেরার সময় রশিদকে গুলি করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।

তার আগে ৮ মার্চ সকাল ৭টার দিকে উখিয়ার কুতুপালং ২ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ডব্লিউ ব্লকে দুর্বৃত্তদের গুলিতে সৈয়দ হোসেন ওরফে কালা বদা (৩৭) নামের আরও এক রোহিঙ্গা নেতাকে খুন করা হয়। নিহত সৈয়দ হোসেন একই ক্যাম্পের হেড মাঝি (নেতা) ছিলেন। মারা যাওয়া রোহিঙ্গার পরিবার সূত্রে জানা যায়, সকালে বাড়িতে একদল মুখোশধারী হামলা চালায়। এ সময় সৈয়দ হোসেনকে বাড়িতে পেয়ে তাকে গুলি করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। পরে গুরুতর অবস্থায় সৈয়দ হোসেনকে ক্যাম্পের এনজিও পরিচালিত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এর আগের দিন ৭ মার্চ রাত ১টার দিকে উখিয়া ৯ নম্বর ক্যাম্পের সি ব্লকে নূর হাবি ওরফে ওয়াক্কাস রফিক (৪০) নামে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। তিনি ওই ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা (মাঝি) ছিলেন।

উখিয়া থানার ওসি মোহাম্মদ আলী জানান, ২৫ থেকে ৩০ জন মুখোশধারী দুর্বৃত্তরা ওয়াক্কাস রফিককে গুলি করে পালিয়ে যায়। গুরুতর অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ওয়াক্কাস রফিককে মৃত ঘোষণা করেন। তার আগের মাসের শুরুতেও একটি এনজিওর নৈশপ্রহরীকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

এদিকে ৩ মার্চ দুপুরে উখিয়ার ১৯ নম্বর ক্যাম্পের ‘এ’ ব্লকে মোহাম্মদ রফিক (৪০) নামে এক যুবককে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। নিহত যুবক ওই ক্যাম্পের দিল মোহাম্মদের ছেলে। রোহিঙ্গা সূত্রে জানা গেছে, ওইদিন দুপুরে ৮ থেকে ১০ জনের একটি মুখোশধারী দুর্বৃত্তের দল রোহিঙ্গা যুবক রফিকের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় তারা ওই যুবককে গুলি করে পালিয়ে যায়।’ পরে অপরাপর রোহিঙ্গারা ‘গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এছাড়া, ২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল ১১টার দিকে উখিয়া ২০ নম্বর কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে শামসুল আলম (৩৮) নামে এক মসজিদের ইমামের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মারা যাওয়া ইমাম শামসুল আলম ক্যাম্প ১৭ সি ব্লকের সাব ব্লক-এইচ/ ৭৯ এর বাসিন্দা মৃত মিয়া চান এর ছেলে। তিনি ওই ক্যাম্পের বি ব্লকের সাব ব্লক এইচ-৮৮ মসজিদের ইমাম ছিলেন।

রোহিঙ্গাদের সূত্রে জানা যায়, এর আগের রাতে কয়েকজন সন্ত্রাসী ইমাম শামসুল আলমকে তার বাসা থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরেরদিন সকালে রোহিঙ্গা ক্যাম্প-২০ এর সীমান্ত এলাকায় তার লাশ পাওয়া যায়।

রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক ও অতিরিক্ত ডিআইজি সৈয়দ হারুনুর রশিদ বলেন, উশৃঙ্খল ও সন্ত্রাসী কর্মকা-ের সাথে জড়িত রোহিঙ্গাদের ধরতে প্রতিদিনই আমাদের অভিযান চলমান আছে। এবং তারা ধরাও পড়ছে।

রোহিঙ্গা শিবিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ১৪ এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অহিদুর রহমান বলেন, আমরা প্রাণপণ চেষ্টা করছি, রোহিঙ্গা শিবিরের পরিস্থিতি যেন অশান্ত না হয়।

উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মোহম্মদ আলী বলেন, এমন কোন দিন নেই যে, শিবিরে অভিযান হচ্ছেনা। এপিবিএন বলেন, র‌্যাব বলেন, পুলিশ বলেন সবাই যার যার মত করে অভিযান পরিচালনা করছে। মাঝেমধ্যে সম্মিলিত ভাবেও চিরুণী অভিযান চলে। প্রশাসন একটু কঠোর হলে দু’একদিন তারা অপরাধ বন্ধ রাখে। পরে আবারও সংঘঠিত করে।

রোহিঙ্গা অধ্যুষিত উখিয়া উপজেলা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গারা আমাদের জন্য এখন বিষফোঁড়া। মানবতার জন্য তাদের জায়গা করে দিতে গিয়ে এখন আমরাই বেকাদায় আছি। খুন, ধর্ষণ, অপহরণ, আধিপত্য বিস্তার, মাদক ব্যবসাসহ এমন কোন অপরাধ নেই যে তারা করছে না। তাদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান ধরকার।

উপজেলার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমার ইউনিয়নের বাসিন্দারা। রোহিঙ্গাদের একটি বিশাল অংশ আমার এলাকায় রয়েছে। রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী কর্মকা-ের ফলে এখন রাতের ঘুম হারাম। এছাড়া আমরা খুব নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছি।

বালুখালী ক্যাম্পের রোহিঙ্গা মোস্তাক আহমদ, তানভির হোসেন, নূরুল হকসহ একাধিক রোহিঙ্গারা জানালেন, সম্প্রতি উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটছে। এতে করে আতঙ্ক বাড়ছে ক্যাম্পের বাসিন্দাদের মধ্যে। এর মধ্যেই কয়েকদিন আগে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকা-ে আড়াই হাজার ঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। আগুনের ঘটনা পরিকল্পিত বলে গঠিত তদন্ত কমিটি তাদের রির্পোট পেশ করেছেন। সাধারণ রোহিঙ্গাদের দাবী অচিরেই যেন ক্যাম্পের স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে আসে।