নিজস্ব প্রতিবেদক »
রুনা বেগমের স্বামী রিকশা চালান। তিনি শারীরিক অসুস্থতায় গত চারদিন ধরে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন। গতকাল বোনের হাত ধরে গাইনি ওর্য়াড থেকে রেডিওলোজি ওর্য়াডে এসেছেন সিটি স্ক্যান করাতে। কিন্ত সিটি স্ক্যান মেশিন অচল থাকায় সেবা পাননি তিনি। তার মত অনেকে সেবা নিতে এসে ফেরত যাচ্ছেন। এতে বেসরকারি হাসপাতালে পরীক্ষা করাতে গিয়ে বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে। পোহাতে হচ্ছে ভোগান্তি।
রুনা বেগম বলেন, পেটে অনেক ব্যথা। চিকিৎসক পেটের সিটি স্ক্যান করাতে চট্টগ্রামে মেডিক্যালে পাঠিয়েছেন। কিন্ত এখানে মেশিন বন্ধ রয়েছে। তাই বেসরকারি হাসপাতালে পরীক্ষা করাতে হবে। রিকশা চালিয়ে আমার স্বামী এই টাকা কিভাবে যোগাড় করবে। সরকারি হাসপাতালে যদি গরিব রোগীরা সেবা না পায় তাহলে যাবে কোথায়?
জানা গেছে, চমেক হাসপাতালে ২০০৪ সালে সিটি স্ক্যান সেবা চালু হয়। তখন একটি মেশিন দিয়ে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সেবা দেওয়া হয়। ওই বছরর আগস্টে সেটি অচল হয়ে টানা ৪ বছর সিটি স্ক্যান সেবা পায়নি রোগীরা। পরে ২০১৮ সালে নতুন আরও একটি মেশিন বরাদ্দ দেয়া হয়। সরবরাহ প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠান মেডিটেল প্রাইভেট লিমিটেড ২০১৯ সালে এ সেবা চালু করে। তখন থেকে মাঝে মাঝে মেশিন অচল হয়ে পড়ে। চলতি বছরে ৬ জুন অচল হয়ে ১৬ দিন পর সেবা চালু করা হয়। কিছুদিন না যেতেই ৪ আগস্ট হঠাৎ মেশিনটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে অচল অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
এদিকে সরেজমিন দেখা যায়- সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাটল ট্রেনের দুর্ঘটনায় আইসিইউতে থাকা অংসুইং মারমাকে মুমূর্ষু অবস্থায় বের করা হচ্ছে। বেসরকারি একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সিটি স্ক্যানের জন্য নেওয়া হচ্ছে। তার সহপাঠী শান্তশীল চাকমা বলেন, মেডিক্যাল হাসপাতালে সিটি স্ক্যান সেবা বন্ধ। এখন অ্যাম্বুলেন্স ঠিক বেসরকারিতে যেতে হচ্ছে। এ হাসপাতালে করতে পারলে বাড়তি টাকা খরচ হত না।
চমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সিটি স্ক্যান সচল থাকতে প্রতিদিন ৫০ জন রোগীর পরীক্ষা করানো যেত। সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলত এই সেবা। পরীক্ষা ভেদে সিটি স্ক্যান বাবদ চমেক হাসপাতালে ২ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা খরচ হয়। যা বেসরকারিতে এ পরীক্ষা করতে ৬ থেকে ১০ হাজার টাকা লাগে।
মেশিন সচলের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রেডিওলোজি বিভাগের প্রধান ডা. সুভাষ মজুমদারকে ফোন দেওয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি। পরে একই বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. সাদেকুর রহমান চৌধুরী বলেন, মেশিনটি বার বার অচল হয়ে যায়। এক মাসের বেশিদিন ধরে সেবা বন্ধ রয়েছে। মেশিনের একটি পার্ট নষ্ট হয়েছে। যেটি বিদেশ থেকে সংগ্রহ করতে হয়। মেশিন সচলের কাজ চলছে। তবে কবে নাগাদ সচল হবে তা জানি না। এটা পরিচালক স্যার জানবেন।’
বিষয়টি নিয়ে জানতে চমেক হাসপাতালে পরিচালক ব্রিগেডিয়ার শামীম আহসান এবং অতিরিক্ত পরিচালক ডা. রাজিব পালিতকে ফোন দেওয়া হলে তারা রিসিভি করেননি।