বাজেট প্রস্তাব : যেসব পণ্যের দাম বাড়বে ও কমবে

বিবিসি বাংলা :

সিগারেট ও তামাকজাতীয় পণ্যের দাম বাড়ানো সেইসঙ্গে করোনাভাইরাস টেস্ট কিট ও স্বর্ণের দাম কমিয়ে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উত্থাপন করা হয়েছে।

করোনাভাইরাসের বিপর্যয় মোকাবিলার লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশে আজ বৃহস্পতিবার বেলা তিনটায় জাতীয় সংসদে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করেন। মানুষের জীবন রক্ষা আর জীবিকার নিশ্চয়তা দিতে ‘অর্থনৈতিক উত্তরণ: ভবিষ্যৎ পথ পরিক্রমা’ শিরোনামে ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের জন্য ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে, যেখানে ৬ শতাংশ ঘাটতির কথা বলা হয়েছে (চলতি বছরের তুলনায় যা ১ শতাংশ বেশি) ।  করোনাভাইরাস মোকাবিলার জন্য এবার স্বাস্থ্যখাতকে ঘিরে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে।  খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই বাজেটে কৃষিখাতকেও সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এবারের বাজেটে ব্যক্তিগত করের হার কমানো হলেও ব্যাংক হিসাবের স্থিতির ওপর আবগারি শুল্কের হার বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। ব্যাংক হিসেবে ১০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা জমা থাকলে আবগারি শুল্ক আগে যেখানে ২৫০০ টাকা দিতে হতো। সেখানে এখন সেটা বাড়িয়ে ৩০০০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ব্যাংক হিসেবের স্থিতি এক কোটি টাকা ৫ কোটি টাকা হলে এই আবগারি শুল্ক ১২ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ব্যাংক হিসেবের স্থিতি ৫ কোটি টাকার বেশি হলে আবগারি শুল্কের পরিমাণ ২৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে ব্যাংক হিসাবের স্থিতি ১০ লাখের নীচে হলে আবগারি শুল্কের হার আগের মতোই থাকবে। তবে কোভিড-১৯ এ আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে যেসব আমদানিকৃত চিকিৎসা সরঞ্জামের প্রয়োজন, সেগুলোর দাম কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

দাম বাড়তে পারে:

  • বিড়ি, সিগারেট, জর্দা, গুল বা তামাকজাতীয় পণ্য।
  • আমদানি করা পেঁয়াজ, লবন, মধু, দুধ, দুগ্ধজাতীয় পণ্য, চকলেট।
  • আমদানি করা অ্যালকোহল।
  • অনলাইন কেনাকাটা।
  • ইন্টারনেটের খরচ।
  • প্রক্রিয়াজাত মুরগির অংশবিশেষ।
  • মোবাইল ফোনের খরচ ও মোবাইল ফোনের সিম কার্ড।
  • আসবাবপত্র।
  • বিদেশি টেলিভিশন।
  • সিরামিকের সিঙ্ক, বেসিন।
  • প্রসাধনী সামগ্রী।
  • কার জিপের নিবন্ধন ব্যয়।
  • সাইকেল ও বিদেশি মোটর সাইকেল।
  • চার্টার্ড বিমান ও হেলিকপ্টার ভাড়া।
  • শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত লঞ্চ সার্ভিস।
  • আলোকসজ্জা।
  • ড্রেজার।
  • ইস্পাত, লোহা, বাণিজ্যিক যানবাহনের যন্ত্রাংশ, ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ।
  • ফার্নেস তেল।

দাম কমতে পারে

  • এলপিজি সিলিন্ডার।
  • স্বর্ণ।
  • স্যানিটারি ন্যাপকিন ও ডায়পার।
  • চামড়া বা যেকোন উপাদানে তৈরি জুতো।
  • সরিষার তেল।
  • চিনি।
  • আলু ও ভুট্টা থেকে স্থানীয়ভাবে প্রক্রিয়াজাত খাবার।
  • করোনাভাইরাস টেস্ট কিট, মাস্ক, গ্লাভস, পিপিই, সুরক্ষা চশমা, ওষুধ এবং আইসিইউ যন্ত্রপাতি।
  • পোল্ট্রি ও ডেইরি শিল্পের কাঁচামাল।
  • রেফ্রিজারেটর ও এয়ারকন্ডিশনারের কম্প্রেসার।
  • ডিটারজেন্ট।
  • সৌর ব্যাটারি।
  • প্লাস্টিক ও প্যাকেজিং।
  • পলিস্টার, রেয়ন, কটন ও অন্যান্য সিনথেটিক সুতা।
  • আমদানি করা কৃষিযন্ত্র ও যন্ত্রাংশ।
  • মৎস্যশিল্পে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি।
  • কাগজ।

নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী, সার, বীজ, কীটনাশক জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, কাঁচা তুলোসহ আরও কয়েকটি শিল্পের কাঁচামালের দাম অপরিবর্তিত থাকতে পারে। প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছর অর্থাৎ ২০১৯-২০ অর্থবছরের চেয়ে ১৩.২% বেশি। টাকার অংকে এই পার্থক্য ৬৬ হাজার ৪২৩ কোটি টাকা। করোনাভাইরাসের বিপর্যয় মোকাবিলায় এবারে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতে। ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে ২৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকার বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়।  কৃষি খাতে বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয় ২২ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকা। এছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাবদ ৯৫ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে ।  বৈদেশিক কর্মসংস্থান খাতে সেইসঙ্গে পল্লি উন্নয়ন ও স্থানীয় সরকার উন্নয়নে আগের চাইতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে যে জনগোষ্ঠী আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, যাদের কর্মসংস্থান ঝুঁকির মুখে পড়েছে অথবা যারা চাকরি হারিয়েছেন তাদের সবার সুরক্ষার বিষয়টি এবারের বাজেটে বিবেচনা করা হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে ঘাটতির পরিমাণ ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরের ঘাটতির চেয়ে ৩৬ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকা বেশি। অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উৎস থেকে এই ঘাটতি মেটানো হবে বলে বাজেট অধিবেশনে জানানো হয়।