হেফাজতের আমির হচ্ছেন জুনায়েদ বাবুনগরী!

মহাসচিব পদে আলোচনায় তিনজন
দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষা শেষে সম্মেলন

সালাহ উদ্দিন সায়েম
আল জামেয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার শায়খুল হাদীস ও শিক্ষা পরিচালক পদে আসীন হওয়ার পর জুনায়েদ বাবুনগরী এবার হেফাজতে ইসলামের আমির হতে যাচ্ছেন। আমির পদে জুনায়েদ বাবুনগরীর বিকল্প কেউ না থাকলেও মহাসচিব পদে সংগঠনের একজন নায়েবে আমির ও দুইজন যুগ্ম মহাসচিবের নাম আলোচনায় রয়েছে।
মহাসচিব পদে যে তিন নেতার নাম আলোচনায় রয়েছে তারা হলেন- হেফাজতের নায়েবে আমির ও ঢাকার বারিধারার জামেয়া মাদানিয়া মাদ্রাসার প্রধান পরিচালক নূর হোসাইন কাসেমী, হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব ও ফটিকছড়ির নানুপুর ওবাইদিয়া মাদ্রাসার প্রধান পরিচালক শাহ সালাউদ্দিন নানুপুরী এবং হেফাজতের অপর যুগ্ম মহাসচিব ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার সাজেদুর রহমান। এই তিনজনের মধ্যে সালাউদ্দিন নানুপুরীর নাম হেফাজতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের মধ্যে জোরালোভাবে আলোচিত হচ্ছে।
মহাসচিব পদে আলোচনায় থাকা নূর হোসাইন কাসেমী ও সাজেদুর রহমান চট্টগ্রামের বাইরের। কিন্তু হেফাজতের মূল নেতৃত্ব চট্টগ্রামকেন্দ্রিক রাখতে চান সংগঠনের একাংশের নেতৃবৃন্দ। সে হিসেবে মহাসচিব পদে সালাউদ্দিন নানুপুরী এগিয়ে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
সম্মেলন আয়োজনের সাথে সম্পৃক্ত হেফাজতের দায়িত্বশীল এক নেতা পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে সুপ্রভাতকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষা শেষ হবে ২৯ সেপ্টেম্বর। এরপরই হেফাজতের সম্মেলন আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়া হবে।
আহমদ শফির মৃত্যুর পর হেফাজতের ঘাঁটি হাটহাজারী মাদ্রাসার কর্তৃত্ব এখন জুনায়েদ বাবুনগরীর হাতে। মাদ্রাসার গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদ শিক্ষা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি। মাদ্রাসার পরিচালনা বোর্ডের ৩ সদস্যের মধ্যে আহ্বায়ক মুফতি আবদুস সালাম চাটগামী ও সদস্য ইয়াহিয়া হলেন বাবুনগরীর ঘনিষ্ঠ।
জানা গেছে, হেফাজতের আমির পদে জুনায়েদ বাবুনগরীর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে কেউ নেই। মহাসচিব পদে যে তিনজন আলোচনায় রয়েছেন তারা সবাই বাবুনগরীর ঘনিষ্ঠ। হেফাজতের নতুন কমিটি থেকে আহমদ শফির অনুসারীরা সবাই ছিঁটকে পড়বেন। তবে কয়েকজনকে গুরুত্বহীন পদে রাখা হতে পারে।
হেফাজতের আমির চূড়ান্ত হওয়ার বিষয়ে জানতে বর্তমান মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সম্মেলনে কাউন্সিলরদের সমর্থনে হেফাজতের নতুন আমির ও মহাসচিব নির্বাচিত হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
জানতে চাইলে হেফাজতের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী সুপ্রভাতকে বলেন, কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষার পর হেফাজতের সম্মেলন আয়োজনের প্রস্তুতি শুরু হবে। হেফাজতের নতুন আমির ও মহাসচিব নির্বাচনের বিষয়ে সংগঠনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের মধ্যে আলাপ-আলোচনা চলছে। সম্মেলনে কাউন্সিলরদের মতামতের ভিত্তিতে আমির ও মহাসচিব নির্বাচিত হবেন।
নতুন মহাসচিব পদে নূর হোসাইন কাসেমীর আগ্রহ নেই বলে হেফাজতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে জানিয়েছেন। তবে সালাউদ্দিন নানুপুরী ও সাজেদুর রহমান মহাসচিব পদে আগ্রহ দেখিয়েছেন।
২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি গঠিত হয়েছিল চট্টগ্রামকেন্দ্রিক কওমি আক্বীদাপন্থি অরাজনৈতিক ইসলামী সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। হাটহাজারী দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার প্রধান পরিচালক শাহ আহমদ শফিকে আমির ও মাদ্রাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস জুনায়েদ বাবুনগরীকে মহাসচিব করে হেফাজতের ২২৯ সদস্যের মজলিশে শূরা কমিটি গঠন হয়েছিল। আহমদ শফি গত ১৮ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করার পর হেফাজতের আমির পদটি এখন শূন্য রয়েছে।
ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষানীতির বিরোধিতার মধ্য দিয়ে হেফাজতের আত্মপ্রকাশ হলেও সংগঠনটি দেশজুড়ে আলোচনায় আসে ২০১৩ সালে ১৩ দফা দাবিতে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে।
আহমদ শফির একক নেতৃত্বে হেফাজতের সাংগঠনিক কর্মকা- পরিচালিত হয়েছিল। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর হেফাজত এখন প্রকাশ্যে দ্বিধাবিভক্ত। হেফাজতের সাংগঠনিক কর্মকা- ও হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রশাসনিক কার্যক্রম নিয়ে আহমদ শফির সাথে জুনায়েদ বাবুনগরীর দীর্ঘ দিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। বিরোধের জের ধরে আহমদ শফি ও তার ছেলে আনাস মাদানী গত ১৭ জুন হাটহাজারী মাদ্রাসার সহযোগী পরিচালক পদ থেকে জুনায়েদ বাবুনগরীকে সরিয়ে দেন।
হেফাজতের মহাসচিব পদ থেকেও জুনায়েদ বাবুনগরীকে সরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন আহমদ শফি। এসব ঘটনার পর হাটহাজারী মাদ্রাসার পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে। প্রকাশ্যে দুই মেরুতে অবস্থান নেন আহমদ শফি ও বাবুনগরীর অনুসারীরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ সেপ্টেম্বর হাটহাজারী মাদ্রাসায় আহমদ শফি ও তার ছেলে মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষা পরিচালক আনাস মাদানীর বিরুদ্ধে হঠাৎ আন্দোলন শুরু করেন ছাত্ররা।
আন্দোলনকারী ছাত্রদের দাবির মুখে ১৬ সেপ্টেম্বর হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে আনাস মাদানীকে বহিষ্কার করা হয় এবং পরদিন প্রধান পরিচালক পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন আহমদ শফি।
আহমদ শফির মৃত্যুর পর হেফাজতে তাঁর অনুসারীরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছেন খোদ আহমদ শফির ছেলে হেফাজতের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক আনাস মাদানী। এছাড়া আহমদ শফির কাছের লোক হিসেবে পরিচিত হেফজতের দুই সহকারী যুগ্ম মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ ও মাঈনুদ্দিন রুহীসহ আরো কয়েকজন নেতাকে প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে না।