হার্ডলাইনে প্রশাসক

সুপ্রভাত ডেস্ক :
অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে হার্ডলাইনে রয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সুজন। সৌন্দর্য বর্ধন প্রকল্পের আওতায় নগরীর বিপ্লব উদ্যানে চুক্তির শর্ত ভেঙে নির্মিত দ্বিতীয় তলার দোকানগুলো ভেঙে দিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (সিসিসি)। এছাড়া তিনি ফুটপাতের স্থাপনা উচ্ছেদেও কঠোর অবস্থান জানান দিয়েছেন । নগরের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন অবৈধ স্থাপনা ভাঙা হচ্ছে।
প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সুজন ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞার কথা জানিয়ে বলেন, আমি জনগণের হাঁটা চলার পথ জনগণকেই ফিরিয়ে দিতে চাই। জনগণের সম্পদ কারও দখল করার অধিকার নেই। যতদিন দায়িত্বে আছি ততদিন আমার এ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। হকার হোক আর যতো প্রভাবশালীই হোক রাস্তা কিংবা ফুটপাত কোনভাবেই দখল করা যাবে না। আমার এ উদ্যোগ চলমান থাকবে।
গতকাল শুক্রবার বাদ জুমা নগরীর অলংকার মোড় হতে তাসফিয়া পর্যন্ত পোর্ট কানেকটিং রোডের উন্নয়ন কাজের ধারাবাহিক পরিদর্শনকালে প্রশাসক নগরবাসীর উদ্দেশ্য এসব কথা বলেন। এসময় অলংকার মোড়ের ফুটপাত দখল করে সারিবদ্ধ দোকানগুলো তাৎক্ষণিক তুলে দেন তিনি।
তিনি বলেন, ইদানীং লক্ষ্য করা যাচ্ছে সিটি কর্পোরেশনের উচ্ছেদ তৎপরতা এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় চলাকালীন সময়ে পূর্বে উচ্ছেদকৃত ফুটপাত আবার সেই আগের মতো দখলে যাচ্ছে। এ বিষয়ে আমার কাছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রায়শই তথ্য আসছে। তাই আমরা তাদের সতর্ক পর্যবেক্ষণ করছি। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ফুটপাতে কোনোভাবেই হকার বসতে দেওয়া হবে না। ফুটপাতে রেখে যাওয়া চৌকি অপসারণ করা হবে।
এদিকে বার্তা সংস্থা বিডিনিউজ জানায়, বিপ্লব উদ্যানে দোকান ভেঙে দিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। চুক্তি শর্ত না মানায় এসব দোকান ভাঙা হয়।
অন্যদিকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিসিসি’র বিভিন্ন নির্দেশ ও অভিযানে অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতে মামলা করেছে। এর আগে ২৮ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় তলায় নির্মিত ১৫টি দোকান ভেঙে ফেলতে এক সপ্তাহর সময় দিয়েছিল সিসিসি। সেদিন বিপ্লব উদ্যানে নির্মিত নকশা বহির্ভূত এক সারি বসার স্থায়ী আসনও অপসারণ করেছিল তারা।
বিপ্লব উদ্যানের দোকান নিয়ে গণশুনানি ও পরিদর্শন শেষে, চুক্তির শর্ত ভেঙে বড় আকারের দোকান ও দ্বিতল অবকাঠামো নির্মাণ করায় ২৫ অগাস্ট বিপ্লব উদ্যানের দোকানগুলো বন্ধের মৌখিক নির্দেশ দেন সিটি করপোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন। ২৬ অগাস্ট লিখিত নোটিস দেয়া হয়। সেই থেকে ওই উদ্যানের দোকানগুলো বন্ধ আছে। এরপর ঠিকাদার ৩১ অগাস্ট সিসিসি’র সাথে বৈঠক করে এবং ৬ সেপ্টেম্বর তার ব্যাখ্যাও দেন। সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের মেয়াদে ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর বিপ্লব উদ্যানের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য রি ফর্ম লিমিটেড ও স্টাইল লিভিং আর্কিটেক্টস লিমিটেড নামের দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয়। বিপ্লব উদ্যান ও এর চারপাশের ফুটপাতসহ আনুমানিক এক একর জমি এই প্রতিষ্ঠান দুটিকে বরাদ্দ দেওয়া হয় ২০ বছর মেয়াদী ওই চুক্তিতে। চুক্তি অনুযায়ী, যেহেতু রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্বাহ করবে তাই সিটি করপোরেশনকে বছরে মাত্র এক লাখ টাকা কর বাবদ দেবে। প্রতিষ্ঠান দুটি উদ্যানটি সংস্কার করে এক পাশে দোতলা বিপণিবিতান নির্মাণ করে। পরে বিপণিবিতানের দোকানগুলো মোটা অঙ্কের বিনিময়ে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে। সিসিসি জানায়, দ্বিতল কোনো অবকাঠামো করার বিষয় চুক্তিতে ছিল না।
চুক্তি অনুসারে, উদ্যানের পূর্ব পাশে প্রত্যেকটি ১৫০ বর্গফুটের মোট ২৫টি দোকান নির্মাণ করা যাবে। তবে প্রতিটি দোকান করা হয় ২০০ বর্গফুটের। দোকান তৈরি করা হয়েছে ৪০টি। এছাড়া জনসাধারণের চলাচলের রাস্তা সংকুচিত করে দোকানের সামনে বসার জন্য স্থায়ী আসন বানানো হয়েছে। ২৫ আগস্ট পরিদর্শনে গিয়ে প্রশাসক সুজন জানান, দোকানের বর্ধিত অংশ ভেঙে ফেলা হবে।