হার্ডলাইনে আওয়ামী লীগ!

জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ইস্যু

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ‘টেনে-হিঁচড়ে নামিয়ে ফেলবে’- এমন বক্তব্য ঔদ্ধত্যপূর্ণ: কাদের
মূর্খের মত উন্মাদনা ছড়ানোর চেষ্টা বরদাস্ত করা হবে না: হানিফ
দেশকে আফগানিস্তান পাকিস্তান
হতে দিব না : নওফেল
বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের প্রত্যক্ষ ইন্ধনে দেশ নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে: নগরীতে বিক্ষোভ
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরোধিতাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে শাহবাগ অবরোধ

সুপ্রভাত রিপোর্ট :
‘টেনে-হিঁচড়ে ভাস্কর্য-নামিয়ে ফেলা হবে’ হেফাজত ইসলামীর আমীর জুনায়েদ বাবুনগরীর এমন বক্তব্যের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগসহ প্রগতিশীল মানুষ তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। খোদ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সংবাদ সম্মেলন করে বাবুনগরীর ওই বক্তব্যকে ‘ঔদ্ধত্যপূর্ণ’ বলে মন্তব্য করেছেন। দলটির অঙ্গ সংগঠনগুলো চট্টগ্রাম নগরীসহ ঢাকায় রাজপথে বিক্ষোভ দেখিয়েছে। এছাড়া কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুবুল আলম হানিফও হেফাজত নেতার বক্তব্যের কড়া প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। অন্যদিকে চট্টগ্রামে গতকাল এক অনুষ্ঠানে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ভাস্কর্যবিরোধী বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছন। খবর বিবিসি বাংলা, বিডিনিউজ ও বাংলানিউজের।
কাদের ও হানিফ যা বলছেন
প্রায় দুই মাস ধরে ঢাকার ধোলাইপাড় চত্বরে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ভাস্কর্য তৈরি করার পরিকল্পনার বিরোধিতা করে আসছিল অনেকগুলো ইসলামপন্থি দল, তবে হেফাজতে ইসলামীর শীর্ষ নেতা গত শুক্রবার প্রথমবারের মত কড়া ভাষায় নিজের ভাস্কর্য-বিরোধী অবস্থান পরিষ্কার করেন। শুক্রবার চট্টগ্রামের হাটহাজারীর এক সম্মেলনে হেফাজতে ইসলামী বাংলাদেশের আমীর তার বক্তব্যে বলেন, যে কোনো ‘ভাস্কর্য তৈরি করা হলে তা টেনে-হিঁচড়ে নামিয়ে ফেলা হবে।’ হেফাজতে ইসলামীর শীর্ষ নেতার এমন মন্তব্যের পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতা ঐ মন্তব্যের প্রতিবাদ করে বক্তব্য দিয়েছেন।
শনিবার সকালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জুনায়েদ বাবুনগরীর বক্তব্যের প্রেক্ষিতে মন্তব্য করেন যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ‘টেনে-হিঁচড়ে নামিয়ে ফেলবে বলে কোনো কোনো ধর্মীয় নেতা ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দিচ্ছেন।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নিয়ে একটি ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর অনভিপ্রেত ও উদ্দেশ্যমূলক বক্তব্য মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, এদেশের আবহমানকালের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের প্রতি চ্যালেঞ্জ বলে আমরা মনে করি।’ ‘তারা ইসলামের অপব্যাখ্যা দিয়ে ধর্মপ্রিয় মানুষের মধ্যে বিদ্বেষ তৈরির চেষ্টা করছে।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ জুনায়েদ বাবুনগরীর বক্তব্যকে ‘উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদ ছড়ানোর অপচেষ্টা’ হিসেবে বিবৃত করেছেন। বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, ‘সৌদি আরব, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, পাকিস্তান সহ বিশ্বের অনেক মুসলিম দেশেই ভাস্কর্য রয়েছে। সেখানে বাংলাদেশে ভাস্কর্য হতে পারবে না কেন?’
‘এই ধরনের উগ্রবাদী, জঙ্গিবাদী কথাবার্তা বলে তারা ইসলামের মত শান্তির ধর্মকে মানুষের কাছে বিতর্কিত করে তুলছে এবং মূর্খের মত উন্মাদনা ছড়ানোর চেষ্টা করছে। সরকার বা জনগণ কেউই এটি বরদাস্ত করবে না।
দেশকে আফগানিস্তান পাকিস্তান
হতে দিব না : নওফেল
একটি চক্র বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে মন্তব্য করে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, তাদের এই ফাঁদে পা দিয়ে বাংলাদেশকে আফগানিস্তান পাকিস্তানের মতো হতে দেওয়া হবে না।
তরুণদের মারমুখী না হয়ে আলোচনার মাধ্যমে, যুক্তির মাধ্যমে ‘পরাজিত শক্তির’ উত্থান ঠেকানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
পাশাপাশি ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতান্ত্রিক যে সমাজের স্বপ্নের ভিত্তিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা এসেছিল, তা ভুলুণ্ঠিত হলে কোনো বিনিয়োগের সুফলই মিলবে না বলেও সতর্ক করেছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী।
শনিবার নগরীর চান্দগাঁওয়ে এফআইডিসি সড়কের পাশে সিটি করপোরেশনের ১১ একর জমিতে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নওফেল বলেন, ‘সকল পর্যায়ে নারী পুরুষ সকলের মধ্যে সংবিধানে নির্দেশিত মূল নীতিগুলোর চর্চা ও প্রচারণা আমাদের করতে হবে। জাতির পিতা যে একটা সহনশীল সমাজ সৃষ্টি করার জন্য ধর্মনিরপেক্ষ সমাজতান্ত্রিক সমাজের স্বপ্ন দেখিয়ে বাঙালির হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে এই দেশ স্বাধীন করেছেন, সেই আদর্শগুলো যদি আজকে ভুলুণ্ঠিত হয় তাহলে কোনো বিনিয়োগের সুফল আমরা পাব না।
‘যদি আমরা এই বিষয়টাকে আমাদের তরুণদের মধ্যে আনতে না পারি তাহলে অরাজকতা অস্থিতিশীলতা হানাহানি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় এই বাংলাদেশ ভরে যাবে। যারা আজকে ধর্মের নামে রাজনীতি করছে, যারা এটা করছে তারা আমাদের যুব সমাজকে অন্ধকারের পথে নিয়ে যেতে চায়। আমাদের নারী সমাজকেও নানাভাবে মস্তিষ্কে অনেক কিছু ঢুকিয়ে দিতে চায়। তাদেরকে পিছিয়ে রাখতে চায়।’
মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘মাইক একটা নিয়ে যেমন ইচ্ছা তেমন বললাম সেটা গণতন্ত্র নয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে সর্বত্র একটা চক্র বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করবার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এই বাংলাদেশ অস্থিতিশীল হলে অনেক অস্ত্র ব্যবসায়ীর অনেক লাভ হবে। তারা এখানে অস্ত্র ব্যবসা করবে।
‘আফগানিস্তানে করে যেমন। আমরা বাংলাদেশকে আফগানিস্তান পাকিস্তান হইতে দিব না। আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নত বাংলাদেশ করব। সেখানে আমাদের সমৃদ্ধি হবে। সেখানে সহনশীলতা থাকবে, শান্তি থাকবে। শান্তির বাংলাদেশ।’
তিনি বলেন, ‘শুধু পয়সা ইনকাম করলেই শান্তি হয় না। পৃথিবীর অনেক দেশে অনেক সম্পদ আছে। কিন্তু স্থিতিশীলতা না থাকলে, সদ্ভাব না থাকলে, বৈষম্য থাকলে শান্তি আসে না।
‘যুব সমাজের প্রতি আহ্বান, মারমুখী হওয়ার দরকার নেই। আলোচনার মাধ্যমে, যুক্তি দিয়ে এই পরাজিত শক্তির উত্থান আমরা করতে দিব না। আমরা নিজেদের শিক্ষিত ও প্রশিক্ষিত করার মাধ্যমে নিজেদের মতো আশেপাশের সবাইকে উন্নত করব।’
‘জামায়াত-শিবিরের প্রত্যক্ষ ইন্ধনে দেশ নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে’
বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের প্রত্যক্ষ ইন্ধনে দেশ নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ। শনিবার চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ চত্বরে জাতীয় শ্রমিকলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ চট্টগ্রাম মহানগরের আওতাধীন সকল থানা ও ওয়ার্ড কমিটির উদ্যোগে উগ্র মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদ বিরোধী সমাবেশে এ মন্তব্য করেন তিনি। নোমান আল মাহমুদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার যখন বিশ্বে উন্নয়নের অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে উঠছে, দেশকে অগ্রগতির মাইলস্টোনে নিয়ে যাচ্ছে, ঠিক সেসময় বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের প্রত্যক্ষ ইন্ধনে জঙ্গি, মৌলবাদী ও অসাম্প্রদায়িকতা বিরোধী একটি চক্র সরকারের ভাবমূর্তি বিনষ্টের ষড়যন্ত্রে উঠে পড়ে লেগেছে। খবর বাংলানিউজ।
কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক সদস্য মো. ইছার সভাপতিত্বে ও যুবলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সদস্য আবদুল মান্নান ফেরদৌসের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তারা বলেন, স্বাধীনতা বিরোধী জঙ্গি ও উগ্রপন্থি এই চক্রটি মুখরোচক বুলির আড়ালে বিভিন্ন হুমকি ধামকি প্রদর্শন করে, সরকার বিরোধী প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। সরকারের উন্নয়ন, অগ্রগতি বিরোধী এই অপশক্তির বিষদাঁত ভেঙ্গে দিতে চট্টগ্রামের আপামর জনসাধারণ সর্বশক্তি নিয়ে প্রস্তুত রয়েছে। বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক আহমেদ, দিদারুল আলম মাসুম, শ্রমিক নেতা সিরাজুল ইসলাম, সাবেক কাউন্সিলর নাজমুল হক ডিউক, হাসান মুরাদ বিপ্লব, দিদারুল আলম, আনোয়ারুল ইসলাম বাপ্পী, জহির উদ্দিন বাবর, সুমন দেবনাথ, নগরবাইশ মহল্লা কমিটির নেতা তারেক সর্দার, আবদুর রহিম, রেজাউল আলম রণি, বেসিক ইউনিয়ন সমন্বয় পরিষদ সদস্য সচিব মিরণ হোসেন মিরন প্রমুখ। সমাবেশে আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কদর, সিরাজদ্দৌল্লা সিরু, হাবিবুর রহমান, গিয়াসউদ্দিন জুয়েল, অ্যাডভোকেট চন্দন তালুকদার, সাবেক কাউন্সিলর জহিরুল আলম জসিম, শৈবাল দাশ সুমন, আবদুল নবী লেদু, আবু নাসের, আলী আকবর, ইফতেখারুল আলম জাহেদ, মাসুদ করিম টিটু, যুবলীগ নেতা ওয়াহিদুল আলম শিমুল, দিদারুল আলম দিদার, লিটন রায় চৌধুরী, জাবেদুল আলম সুমন, হেলাল উদ্দিন, মকসুদ আলী, খোরশেদ আলম রহমান, তানভীর আহমেদ রিংকু, আহমদ নুর, আবদুল মান্নান, মো. সালাউদ্দিন, মাসুদ আকবরী, জাহাঙ্গীর আলম, সাহেদ হোসেন টিটু, আবদুল্লাহ আল মামুন, ফয়সল বাপ্পী, হেলাল উদ্দিন, মিথুন মল্লিক, ওয়াহেদ রাসেল, রুবেল আহমেদ বাবু, আবু সুফিয়ান, মাঈনুর রহমান মঈন, আলমগীর টিপু, আবু তাহের, ইকবাল হোসেন টিপু, আবু তোরাব পরশ, রকিবুল হাসান দিনার, মহিউদ্দিন মাহিসহ শ্রমিকলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশ শেষে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ মিছিল জেলা পরিষদ চত্বর থেকে লালদিঘী, আন্দরকিল্লা, চেরাগী মোড় হয়ে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব চত্বরে এসে শেষ হয়।
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরোধিতাকারীদের
গ্রেফতারের দাবিতে শাহবাগ অবরোধ
হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হকসহ বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে শাহবাগে সড়ক অবরোধ করেছে একদল বিক্ষোভকারী। অবরোধের কারণে শনিবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত প্রায় একঘণ্টা শাহবাগ মোড় দিয়ে যান চলাচলে বিঘœ ঘটে। পরে ১ ডিসেম্বর সারা দেশে একযোগে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশের ঘোষণা দিয়ে শাহবাগ মোড় ছাড়েন তারা। এর আগে বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে মিছিল করে শাহবাগে অবস্থান নেন বিক্ষোভকারীরা। অবস্থানে সংহতি জানিয়ে আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘মহানবী (সা.) এর অবমাননা ও বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ বিরোধিতাকারী মামুনুল-ফয়জুল গংদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। এরা ইসলামের শত্রু, মানবতার শত্রু।’
‘যারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙ্গতে আসবে, আমরা তাদের হাত ভেঙ্গে বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দিব। একাত্তরের পরাজিত অপশক্তিকে কঠোর হস্তে দমন করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।’ মুজিববর্ষে ঢাকার ধোলাইড়পাড়ে বঙ্গবন্ধুর যে ভাস্কর্য সরকার স্থাপন করছে, তার বিরোধিতায় নেমেছে হেফাজতে ইসলামসহ ইসলামী কয়েকটি দল।
এদের মধ্যে হেফাজতের আমির জুনায়েদ বাবুবনগরী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মামুনুল হক ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমীর সৈয়দ ফয়জুল করিম বেশ সরব। ভাস্কর রাশা বলেন, সৌদি আরব, ইরান, ইরাক, তুরস্কসহ বিশ্বের সকল মুসলিম দেশে ভাস্কর্য রয়েছে। মৌলবাদীরা ভাস্কর্য ও মূর্তির পার্থক্য নিয়ে জনগণের মাঝে বিভ্রান্তি তৈরি করার চেষ্টা করছে। ‘ইসলামের দৃষ্টিতে ভাস্কর্য বৈধ। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতাকারীদের মূল উদ্দেশ্য মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির সরকার পতনের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা। সময় এসেছে এদের লাগাম টেনে ধরার।’ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন বলেন, ‘আমরা গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে মুজিববর্ষ উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য স্থাপনে বাধা প্রদান এবং স্থাপিত ভাস্কর্য ভেঙ্গে ফেলার ভয়ঙ্কর হুমকি দিয়েছে চিহ্নিত স্বাধীনতাবিরোধী, মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তি।
‘সম্প্রতি একটি ইসলামী ধর্ম ব্যবসায়ী মামুনুল হক প্রকাশ্য দিবালোকে মহানবীর (সা.) অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন করে নবীজীকে অবমাননা করেছেন। মহানবীকে অবমাননা করে মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অপরাধে মামুনুল হককে গ্রেফতার করতে হবে।’ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে বুলবুল কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন গৌরব ৭১ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এফএম শাহীন, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনেট মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক ইয়াসির আরাফাত তূর্য।
ঘটনার সূত্রপাত যেভাবে
ঢাকার ধোলাইপাড় চত্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ভাস্কর্য তৈরির পরিকল্পনা নিয়ে অক্টোবর মাসের শুরু থেকেই ইসলামপন্থি কয়েকটি দল প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে আসলেও বিষয়টি আলোচনায় আসে ১৩ই নভেম্বর ঢাকায় একটি সম্মেলনে খেলাফত মজলিশের শীর্ষ নেতার বক্তব্যের পর। সেসময় তিনি সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলেছিলেন, ভাস্কর্য নির্মাণ পরিকল্পনা থেকে সরে না দাঁড়ালে তিনি আরেকটি শাপলা চত্বরের ঘটনা ঘটাবেন এবং ওই ভাস্কর্য ছুঁড়ে ফেলবেন। তার ওই বক্তব্য সরকারি দল আওয়ামী লীগে অস্বস্তি তৈরি করে। এরপর আওয়ামী লীগ আনুষ্ঠানিকভাবে কোন প্রতিক্রিয়া না দেখালেও দলটির সাধারণ সম্পাদক বলেছিলেন, তারা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছেন। এরপর দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে শুরু করে মামুনুল হকের বিরুদ্ধে। ঢাকায় ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয়ভাবেও সমাবেশ করে ভাস্কর্যের বিরোধীতাকারীদের উচিত জবাব দেবার হুমকি দেয়। পরে চট্টগ্রামে মামুনুল হককে প্রতিহত ঘোষণা দিয়ে মাঠে নামে ছাত্রলীগ-যুবলীগ। এর পরিপ্রেক্ষিতে তিনি গত শুক্রবার হাটহাজারীতে পূর্ব নির্ধারিত মাহফিলে যোগ দেননি।