হারিয়ে যাচ্ছে লালকাঁকড়া

সাগরকন্যা ইনানী

রফিক উদ্দিন বাবুল, উখিয়া :
পর্যটকের অবিরাম চাপে এখন বিলুপ্তপ্রায় সৈকতের লালকাঁকড়া। পর্যটনস্পট সাগরকন্যা ইনানী সমুদ্র সৈকতে সৌন্দর্যের অন্যতম আকর্ষণ লালকাঁকড়ার দল। এসব কাঁকড়ার ঝাঁক দেখলে মনে হতো যেন সৈকতে আনন্দভ্রমণে আসা অতিথিদের লাল গালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশি-বিদেশি পর্যটকের বিরতিহীন গমনাগমনের মুখে অযতœ-অবহেলা ও সংরক্ষণের অভাবে এসব লালকাঁকড়া প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছিল। কিন্তু সমপ্রতি প্রকৃতির অপার করুণা লালকাঁকড়াদের আবার মানুষের সান্নিধ্যে নিয়ে এসেছে। হঠাৎ করে লালকাকঁড়ার বিচরণ বেড়ে যাওয়া দেখে অনেকেই বলছে, প্রকৃতির চিরাচরিত নিয়ম পাল্টানোর সুযোগে লালকাঁকড়া বালুচরের আড়াল থেকে বেরিয়ে এসেছে লোকালয়ে। অপার সৌন্দর্যের এ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করা না গেলে আবারও হারিয়ে যেতে পারে। এমনটি মনে করছেন পরিবেশবাদী সচেতনমহল।
উখিয়া পরিবেশ সাংবাদিক ফোরাম সভাপতি রফিক উদ্দিন বাবুল বলেন, সাগর এলাকায় বসবাসরত ও সাগরে আধিপত্য বিস্তারকারী এক শ্রেণির অর্থলোভী মানুষ ভুল তথ্য দিয়ে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে সৈকত বাণিজ্যিকীকরণের মাধ্যমে বিচবাইকের বেপরোয়া চলাচলে জেলা প্রশাসন থেকে অনুমতি পেয়েছে। তারা ওই অনুমতির ভিত্তিতে বিপুল সংখ্যক বিচবাইক এনে সাগরপারে চালাচ্ছে। পাশাপাশি এসব বিচবাইকের শব্দদূষণ ও পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকা-ে হারিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য লালকাঁকড়া। একই সঙ্গে হুমকির মুখে পড়েছে বিভিন্ন প্রজাতির কাছিম ও অন্য জীববৈচিত্র্যও। সাগরপারে সৃজিত ঝাউগাছের অসংখ্য পাখির কোলাহলও থেমে গেছে।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত ইনানীর কানারাজার গুহা, পাটুয়ার টেক পাথুরে বিচ, মোহাম্মদ শফির বিলে নবনির্মিত ওয়াটার পার্কসহ পাহাড়, জলরাশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে। যে-কারণে দিন দিন পর্যটকের সংখ্যা বাড়লেও তাদের অবকাশযাপন, খাওয়া-দাওয়া, চেঞ্জিংরুম প্রভৃতি উপকরণের ব্যাপক অভাব রয়েছে। পর্যটকদের অভিযোগ, ইনানী বিচে নিরাপত্তার অভাবে সন্ধ্যার আগেভাগে পর্যটকদের কক্সবাজার ফিরতে হয়। এমন অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সরকার এই এলাকার জীববৈচিত্র্যকে গুরুত্ব দিয়ে সৈকতের সার্বিক উন্নয়নের উদ্যোগ নিলে পর্যটনখাতে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সক্ষম হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সিলেট থেকে বেড়াতে আসা আইরিন নামের বিশ^বিদ্যালয়ছাত্রী জানান, তিনি লকডাউনের পূর্বে এসেছিলেন। তখন কিন্তু সৈকতে জীববৈচিত্র্যের কোনো অস্তিত্ব খুঁেজ পাওয়া যায়নি। লকডাউন শেষ হওয়ার পরে ইনানী ঘুরতে এসে দেখি, লালকাঁকড়ার ছড়াছড়ি। মনে হচ্ছিল যেন ইনানী সৈকতে ফুটেছে প্রকৃতির লালফুল। এসব লালকাঁকড়া পর্যটকদের আর্কষণ করে পর্যটক সংখ্যা বাড়িয়ে দিতে পারে। যদি সৈকতে দায়িত্বরত ম্যানেজম্যান্ট কমিটি জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে উৎসাহিত হয়। ওই পর্যটক বলেন, কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত প্রায় ১২২ কিলোমিটার সমুদ্র সৈকতের হিমছড়ি, সেনাক্যাম্প, ইনানী পয়েন্ট, মো. শফির বিল, মাদারবনিয়া, মনখালী, শাপলাপুর, জাহাজপুরাসহ বেশকিছু এলাকায় এখনও কিছু লালকাঁকড়ার বিচরণ রয়েছে। তবে তা অতি নগণ্য।
স্থানীয়রা জানান, সৈকতের লালকাঁকড়া রক্ষা করতে হলে বিচবাইক ও ঘোড়াসহ সব ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ যানচলাচল বন্ধ করতে হবে। এসবের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি লালকাঁকড়া, কাছিমদের বিচরণের জন্য চারণভূমি চিহ্নিত করে তাদের চলাচলের সুযোগ করে দিতে হবে। যেখানে তারা নির্বিঘেœ ঘারাফেরার পাশাপাশি বংশবৃদ্ধি করার সুযোগ পাবে। এ ব্যাপারে দ্রুত সরকার ও পরিবেশবাদীদের পদক্ষেপ নেবার দাবি জানান তারা। তা না হলে অব্যবস্থাপনার কারণে খুব শীঘ্রই হারিয়ে যাবে লালকাঁকড়া ও অন্যান্য সৌন্দর্যবর্ধক পরিবেশ-প্রাণীসমূহ। তাদের রক্ষা ও অতীতের মতো সর্বত্র বিচরণ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনসহ পরিবেশপ্রেমীদের পরিকল্পিত পদক্ষেপ নিতে হবে। এক্ষেত্রে জনসাধারণ ও যানবাহনের বেপরোয়া চলাচল বন্ধ ও প্রাণীদের চারণভূমি সংরক্ষণের নিমিত্তে সাইনবোর্ডসহ বিভিন্ন ধরনের প্রচার-প্রচারণা চালুর দাবি করেছেন স্থানীয়রা। তাহলে হয়তো-বা রক্ষা পেতে পারে লালকাঁকড়াসহ অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীসমূহ
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন আহমদ বলেন, ইনানী সৈকতের উন্নয়নে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।