স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে স্কুল কর্তৃপক্ষকে সচেতন হতে হবে

সীমিত পর্যায়ে স্কুল খোলা প্রসঙ্গ

সীমিত পরিসরে এবং পর্যায়ক্রমে আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে আলোচনা করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, প্রথমে এসএসসি ও এইচএসসি পর্যায়ের ক্লাস শুরু করা হবে। কেননা তাদের এবছর পরীক্ষা নিতে হলে ক্লাসে ফেরা ছাড়া উপায় নেই। জানা গেছে, এই দুই পরীক্ষার জন্য সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করা হবে। পর্যায়ক্রমে অন্য সব শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু করা হবে তবে সব কিছুই নির্ভর করছে করোনা পরিস্থিতির ওপর। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পর স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে পাঠদানের পরিকল্পনা সব স্কুলে পাঠানো হবে বলে জানানো হয়েছে। সব প্রাথমিক বিদ্যালয় এখন খোলা হবে না তবে যেখানে করোনার প্রাদুর্ভাব কম সেখানে কিছু প্রাথমিক স্কুল খুলে দেওয়া হতে পারে। এমন অভিমতও এসেছে শিক্ষা কর্মকর্তাদের আলোচনায়।

করোনার শুরু থেকেই বিগত বছরের মার্চের মাঝামাঝি থেকে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় বিঘœ ঘটেছে দারুণভাবে। বিটিভি, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, স্মার্টফোনের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হলেও প্রায় ৭০ ভাগ শিক্ষার্থী তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা নিতে পারেনি। শহরের শিক্ষার্থীরা এভাবে ক্লাস কিছুটা করতে পারলেও গ্রামের অধিকাংশ শিক্ষার্থী এ ধরনের শিক্ষা পদ্ধতিতে আর্থিক ও অন্যান্য কারণে অভ্যস্ত হতে পারেনি। এতে শিক্ষা এবং অন্যান্য সুযোগ প্রাপ্তিতে বৈষম্যও প্রকট হবে। মহামারির কারণে গত বছর অটোপ্রমোশন দেয়া হয়েছে।

সীমিত পর্যায়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা প্রসঙ্গে সর্বাগ্রে শিক্ষার্থীদের বর্তমান পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যসুরক্ষার কথা ভাবতে হবে। স্কুলের আঙ্গিনা পরিষ্কার রাখা, ছাত্র-ছাত্রীদের মাস্ক পরিধান, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ক্লাসের আসন পুনর্বিন্যাস করা প্রয়োজন, তেমনি হাত ধোয়ার ব্যবস্থা, বাথরুম পরিষ্কার রাখা এবং শ্রেণিকক্ষ নিয়মিত পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যসম্মত করার ব্যবস্থা নিতে হবে। কী শহরে, কী গ্রামে স্কুল ও কলেজগুলিতে বাথরুম, টয়লেট পর্যাপ্ত নাই, এ ব্যাপারটিতে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কর্তৃপক্ষ কিংবা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তেমন মনোযোগ নেই। প্রয়োজনে সপ্তাহের বিভিন্ন দিনে গ্রুপ করে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা সীমিত রাখা যায়। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং স্বাস্থ্যসম্মত সুবিধাদি নিশ্চিত করতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে বিশেষ বরাদ্দ দেয়া যেতে পারে।

দীর্ঘদিন ক্লাসের বাইরে থাকলে শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ায় মনোযোগ হারিয়ে ফেলবে, ‘অনভ্যাসে বিদ্যা হ্রাস পায়’, প্রবাদটি এ সময়ে অনেকটাই সত্য হয়েছে। তবে করোনাকাল দীর্ঘস্থায়ী হলে তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে লেখাপড়া চালিয়ে নেবার ব্যাপারে সকল শিক্ষার্থীকে অভ্যস্ত করাতে হবে, এ ব্যাপারে সরকার ও অভিভাবকদের দায়িত্ব রয়েছে।

স্কুলে পাঠগ্রহণের সুযোগ শিক্ষার্থীর মেধা ও অভিজ্ঞতা শানিত করে, সহপাঠীদের সাহচর্যও নির্মল আনন্দ আনে, আবার স্কুলে নিয়মানুবর্তিতা, শিষ্টাচার ও মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠারও নানা আয়োজন শিক্ষার্থীদের এক প্রকার মানসিক তৃপ্তি দেয়। তবে সরকারকে গতানুগতিক ভাবে বিষয়টি না দেখে সার্বিক পরিস্থিতি গভীরভাবে বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ গ্রহণ করা শ্রেয়তর হবে।