স্কুলের স্থায়ী ভবন নির্মাণ কাজ থমকে যাচ্ছে

বাঁশখালীর খানখানাবাদ আইডিয়াল হাই স্কুলের ক্লাস চলছে কয়েকটি সেমিপাকাভবন ও মাচায় -  সুপ্রভাত
বাঁশখালীর খানখানাবাদ আইডিয়াল হাই স্কুল
জায়গা দখলে শতাধিক অভিযোগ প্রশাসনে

উজ্জ্বল বিশ্বাস, বাঁশখালী :

স্কুল, শিক্ষক, পরিচালনা কমিটি ও নিয়মিত এসএসসি পরীক্ষা সবই সরকারি নীতিমালায় পরিচালিত হয়ে আসছে। প্রতিদিন কয়েকশত শিক্ষার্থীদের আসা-যাওয়ায় মুখরিত স্কুল। কিন’ কতিপয় দুষ্কৃতিকারী স্কুলের নামীয় দলিলের ৭৫ শতক জায়গা দখল করতে স্কুল প্রতিষ্ঠার ৫ বছর পর থেকে শুরম্ন করেছে নানা মিথ্যা অভিযোগ ও মামলা। কোথাও স্কুল নাই, শিক্ষক নাই, ছাত্র-ছাত্রী নাই, পরিচালনা কমিটি নাই বলে কল্পকাহিনী সাজিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে দিচ্ছে মিথ্যা অভিযোগ ও মামলা। এসব অভিযোগ তদন্ত করতে এসে স্কুলের যথাযত সুষ্ঠু কার্যক্রম দেখে সংশিস্নষ্ট প্রশাসনিক কর্মকর্তারাও বিভ্রানিত্মতে পড়ে নাজেহাল হচ্ছে। স্কুলের নামে সরকারিভাবে বিল্ডিং বরাদ্দ হলেও দুষ্কৃতিকারীদের উড়োচিঠিতে দীর্ঘদিন ধরে স্কুল ভবন নির্মাণ ফেরত গেছে। গত অর্থ বছরে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে আবারোও ৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪ তলা বিল্ডিং বরাদ্দ করেন স্থানীয় এমপি মোসত্মাফিজুর রহমান চৌধুরী। সয়েল টেস্টও হয় তা নির্মাণেও বাধা দিতে নানা দপ্তরে গত মার্চ মাসে বিভিন্ন অভিযোগ দায়ের করেন শতাধিক অভিযোগকারী  নবিভিন্ন মামলার দাগি আসামি আব্দুর ছবুর ও ফরিদ আহমদ।

সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, ১৯৯৪ সালে ৭৫ শতক জায়গা কিনে গ্রামবাসী বাঁশখালীর সমুদ্র উপকূলের খানখানাবাদ গ্রামে  খানখানাবাদ আইডিয়াল হাই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯৯ সালে স্কুলটি এমপিও ভুক্ত হয়। বর্তমানে স্কুলে ছাত্র-ছাত্রী ৩৯৭ জন। সরকারি নিয়মে শিক্ষক-শিড়্গিকার পদ ২১টি। কিন’ ৯টি পদ শূন্য রয়েছে। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চাহিদা পাঠানো হয়েছে। চলতি বছর ১০৩ জন এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। পাশ করেছে ৭৮ জন। গত বছর ৯৫ জন এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল ৭১ জন পাশ করেছিল। তম্মধ্যে ৫ জন শিক্ষার্থী এ+ পেয়েছিল। স্কুলটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে ৭৫ শতক জায়গা স্কুলের নামে দলিল হয়। নিয়মিত স্কুল পরিচালনা কমিটি দিয়ে স্কুলও পরিচালিত হয়ে আসছিল। স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ২৬ বছর। কিন’ ২১ বছর ধরে শতাধিক মিথ্যা অভিযোগ ও মামলার তদন্ত, শুনানি ও জবাবদিহিতার কারণে শিক্ষক ও স্কুল কমিটি ছাড়াও অতিষ্ঠ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কর্মকর্তা, শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, শিক্ষা বোর্ড কর্মকর্তা, জেলা শিক্ষা অফিস কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, বাঁশখালী থানা পুলিশসহসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী। এসব অপকর্মের কারণে অভিযোগকারীরা কয়েকবার গ্রেফতার হয়ে সাজা ভোগ করলেও ক্ষান্ত হয়নি। দুষ্কৃতিকারীদের কাল্পনিক অভিযোগ ও মামলার পাল্টা জবাব, প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের তদন্তকালীন সত্য মিথ্যা উপস্থাপন, সংশিস্নষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে আসা যাওয়াসহ বিবিধ খরচে স্কুল ফান্ডের অর্থের সর্বনাশ হচ্ছে এবং নানা ভোগানিত্মতে শিক্ষকদের পাঠদানে নানা দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। স্কুলের অবকাঠামো নির্মাণেও ধীরগতি হচ্ছে।

স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি এনামুল হক চৌধুরী বলেন, ‘স্থানীয় বিভিন্ন মামলার আসামি ও সাজাভোগকারী আব্দুর ছবুর ও ফরিদ আহমদ স্কুলের জায়গা দখলের জন্য বিভিন্ন দপ্তরে স্কুলের নামে মিথ্যা অভিযোগ ও মামলা করেছিল। বর্তমানেও করে চলছে। প্রশাসনের কাছে সবকিছু মিথ্যা ও সাজানো কাহিনী প্রমাণিত হয়েছে। বিভিন্ন আদালত জায়গাটি স্কুলের নামে রায়ও দিয়েছে। অথচ কোনরূপ কাগজপত্র ছাড়া প্রশাসন ও আদালতের রায় অমান্য করে ষড়যন্ত্র করছে। যা শিক্ষা বিসত্মারে অন্তরায়।’

স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ ইউনুচ বলেন,‘ আব্দুর ছবুর ও ফরিদ আহমদের নানা কাল্পনিক ষড়যন্ত্রে স্কুলের শিক্ষক, অভিভাবক ও প্রশাসন অতিষ্ঠ। মিথ্যা অভিযোগ দেয়ায় ও শিক্ষকদের সাথে প্রতারণা করায় আব্দুর ছবুর ও ফরিদ আহমদ কয়েকবার গ্রেফতারও হয়েছে। এছাড়া স্থানীয় গ্রামবাসীও অতিষ্ঠ হয়ে তাদের বিরম্নদ্ধে হত্যা, চাঁদাবাজি, প্রতারণা ও চুরি মামলা করেছিল। বিভিন্ন মামলায় সাজাও ভোগ করেছে। এসব প্রতারকদের ছোবল থেকে স্কুলটি বাঁচানো উচিত।’

বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার বলেন, ‘ নানা ধরনের অভিযোগ পেয়ে অভিযোগকারীদের ডাকানো হয়। স্কুল কর্তৃপক্ষ আসলেও আব্দুর ছবুর ও ফরিদ আহমদ আসে না। সম্প্রতি দেয়া একটা অভিযোগও তদন্ত চলছে। তবে স্কুলের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’

বাঁশখালীর এমপি মোসত্মাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘ উপকূলীয় এলাকায় শিক্ষা বিসত্মারে প্রধানমন্ত্রীর সহায়তায় আমি ৩ কোটি ৫২ লাখ টাকার একটি ভবন খানখানাবাদ আইডিয়াল হাই স্কুলে বরাদ্দ করেছি। অবহেলিত স্কুলে দ্রম্নত ভবনটি নির্মাণে সহায়তা করার জন্য সংশিস্নষ্ট প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছি।’

ফরিদ আহমদ বলেন, ‘স্কুলের জায়গাটি স্কুলের নামে হবার আগে আমার নামে ছিল। তাই জায়গাটি পাবার লড়াই করছি।’

স্কুলকে নিজ নামে কোনরূপ জায়গা কিংবা আর্থিক দান না করেও আব্দুর ছবুর বলেন, ‘ আমি স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেছি তাই লড়াই করছি। তবে আদালত কিংবা প্রশাসনের কাছে স্কুল প্রতিষ্ঠাতার প্রমাণ স্বরম্নপ কোন কাগজ দেখাতে পারেননি তিনি।’